বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ১৬ মাসের সর্বোচ্চ
ঢাকা, মার্চ ৩১: দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো –বিবিএস’র সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখীর চিত্র। যাতে দেখা যাচ্ছে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। যেখানে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১০৬ টাকা ১৭ পয়সা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল মাসে খাদ্যে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে যা ছিল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতির হার বেশি। জানুয়ারি মাসে যেখানে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ফেব্রুয়ারি মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
শহরের মূল্যস্ফীতিরও একই চিত্র। ফেব্রুয়ারিতে শহরাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জানুয়ারি মাসে তা ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ৮৫ ভাগ। অবশ্য খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ, জানুয়ারিতে যা ছিল ৬ দশমিক ১৭ ভাগ।
করোনাপরবর্তী সময় ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর।
ড. আহসান এইচ মনসুর
“মূল্যস্ফীতি বর্তমানে যে পর্যায়ে আছে তাতে এর প্রভাব সরাসরি কৃষকের উপর পড়ছে না। সরকার ভর্তুকি দিয়ে চেষ্টা করছে কাটিয়ে উঠতে। তবে এটা সরকারের বাজেটের উপর চাপ পড়ে যাচ্ছে। সরকারের ভর্তুকির পরিমান অনেক বেড়ে যাচ্ছে”।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতির হারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে খাদ্যণ্য উৎপাদনের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
অন্যদিকে ভোজ্যতেল ও গমের সাথে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার কথা বলেন তিনি।
বিবিএসের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেন, অর্থবছর শেষে দেশের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে”।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: সাজিদ রাজু