বাংলা

শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ

CMGPublished: 2022-03-24 20:02:16
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

তানজিদ বসুনিয়া, মার্চ ২৪: পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। পরিবেশের উপর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি কমিয়ে আনতে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসেবে বিশেষ এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর তালিকায়ও নাম লেখায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হল নতুন মাইলফলক। উদ্বোধন করা হলো দেশের সর্ববৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আর এর মধ্য দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যৌথ মালিকানায় রয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দেখভালের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড বা বিসিপিসিএল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি এবং চীনের ‘চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি)’ সমান অংশীদারিত্বে নির্মাণ করা হয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

নতুন এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কেবল জ্বালানিখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণই করবে না বরং সবুজায়ন ও টেকসই উন্নয়নের যাত্রাকেও আরো গতিশীল করবে।

লি জিমিং, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত

“এই সকালে আমি এখানে এলাম, দেখলাম এবং অনুপ্রাণিত হলাম। বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বের নতুন নিদর্শন দেখে আমার মতো যে কেউ ই অনুপ্রাণিত হবেন। পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সফল নির্মাণের জন্য আমি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিডিটেডকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”

সম্প্রতি এক হাজার একর জমির ওপর গড়ে তোলা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, ‌'দেশের প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালতে পেরেছি, এটিই সবচেয়ে বড় কথা। কোন ঘর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতিটি মানুষের জীবন আলোকিত হবে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।'

মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে উপহার হিসেবেও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'আলোর পথে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে আমাদের এই যাত্রা কেউ দমাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা অর্জনের অনেক পূর্বেই এ অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্ধ শিল্প কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।'

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর ৮০ শতাংশ অর্থ এসেছে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণসহায়তা থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের জন্য দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বিসিপিসিএল। প্রতিটি কেন্দ্রে আছে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে ইউনিট। প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের জুনে। একই বছরের আগস্টে উৎপাদনে আসে দ্বিতীয় ইউনিট। আগামী ডিসেম্বর মাসে সঞ্চালন লাইন তৈরির কাজ শেষ হলে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় প্রতিদিন দরকার হবে ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। ১০ বছরের চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হবে কয়লা। কয়লা আনা-নেওয়া করতে পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে পায়রা নৌ-বন্দর। সংশ্লিষ্টা বলছেন, পরিবেশের উপর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষতি কমিয়ে আনতে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি।

বাংলাদেশ ছাড়া বর্তমানে এশিয়ার দেশ চীন, ভারত, জাপান ও মালয়েশিয়া ব্যবহার করে এ প্রযুক্তি। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ২০১৪ সালে চীন সফরের সময় চীনের সঙ্গে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn