বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৫৩

CMGPublished: 2024-01-27 16:49:47
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১. সংস্কৃতি সপ্তাহ

শাংহাইয়ে বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য লণ্ঠন মেলা

আসন্ন বসন্ত উৎসব বা চীনা চান্দ্র নববর্ষ উদযাপিত হবে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষ্যে চীনের শাংহাই মহানগরীর ইয়ুইয়ুয়ান গার্ডেন সেজেছে আলোর সাজে। সেখানে চলছে বর্ণাঢ্য লণ্ঠন প্রদর্শনী।

বসন্ত উৎসব উদযাপনের একটি প্রধান ইভেন্ট হলো শাংহাইয়ের ইয়ুইয়ুয়ান গার্ডেনের এই ল্যান্টার্ন ফেয়ার। বিচিত্র সব আকার ও রঙে চাইনিজ লণ্ঠন প্রদর্শন করা হচ্ছে মেলায়।

এ বছরের মেলার প্রতিপাদ্য বেছে নেয়া হয়েছে প্রাচীন চীনা গ্রন্থ শানহাইচিং থেকে। এই বইতে পাহাড়, সাগর এবং বিচিত্র সব প্রাণীর বর্ণনা রয়েছে যার অনেকগুলো পৌরাণিক কাহিনীভিত্তিক।

এই প্রদর্শনীতে ড্রাগন প্রতীকেও অনেক লণ্ঠন বানানো হয়েছে কারণ এ বছরটি ড্রাগন বর্ষ।

শায়ানসিতে চীনা চান্দ্র নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বিশেষ পেপার কাটিং

উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের ইয়ান’আন শহরের স্থানীয়রা আসন্ন চীনা চান্দ্র নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছে লোং বা চীনা ড্রাগনের প্রতিকৃতি ও বৈশিষ্ট-সম্পন্ন বিশেষ পেপার কাটিং দিয়ে।

পেপার কাটিং, চীনে উৎসবের সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় সাজসজ্জার হস্তশিল্প যা দেশটির অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

লুচুয়ান কাউন্টির স্থানীয় বাসিন্দা উ ইয়ুছিন এই ধরনের শিল্প-কৌশলের উত্তরাধিকারী। এ বছর, তিনি ড্রাগনের থিমের উপর শুভ অর্থসহ বিভিন্ন কারুকাজ করা কাগজের কাটিং প্রস্তুত করেছেন। এ গুলোর মধ্যে রয়েছে, আকাশে উড়ন্ত ড্রাগন, ‘মুক্তা নিয়ে খেলায় রত দুই ড্রাগন’ ইত্যাদি।

উ-এর কাজ, সহজ অথচ এর প্রাণবন্ত শৈলী এবং সূক্ষ্ম কারুকাজ কাউন্টির অনেক পেপার কাটিং-প্রেমিককে তার সৃষ্টি থেকে শিখতে আকৃষ্ট করেছে। লোকশিল্পের মাধ্যমে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে তারা নিজেদের উদ্ভাবিত কিছু পেপার কাটিং শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন।

চীনা চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনে ইউএইতে ড্রাগন নৃত্য

আসন্ন চীনা চন্দ্র নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আরব আমিরাতের আবুধাবিতে শত শত বিদেশী চীনা ড্রাগন নৃত্য পরিবেশন করে এবং চীনা গান গায়।

শনিবার ল্যুভর আবুধাবির সামনের চত্বরে, পারফর্মাররা দুটি ১৮-মিটার লম্বা ড্রাগনের প্রতিকৃতি নিয়ে ড্রাগননৃত্য প্রদর্শন করে।

নাচের পরে, অংশগ্রহণকারীরা মাতৃভূমির প্রতি তাদের শুভেচ্ছা জানাতে কিছু দেশাত্মবোধক গানও গান যা পর্যটক এবং স্থানীয়দের আকৃষ্ট করে।

ল্যুভর আবু ধাবির পরিচালক ম্যানুয়েল রাবেতে এবং অন্যান্য অনেক দর্শককে বসন্ত উৎসবের পংক্তিগুলো কীভাবে লিখতে হয় সে অভিজ্ঞতা লাভের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

২. ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চীনের সিনেমা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাজধানী ঢাকায় আয়োজন করা হয় ২২তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলাদেশ ও চীনসহ ৭৪টি দেশের ২৫২টি সিনেমা নিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন।

তবে এবারের উৎসবে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয় ‘ওয়াইড অ্যাঙ্গেল’ সেকশনটিকে। আর এই সেকশনের আওতায় ১৬টি চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে।

উৎসবের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে উদ্বোধন করা হয় চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর। মূলত চীন-বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে এই বিশেষ অংশ গ্রহণ।

এতে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ড. দীপু মনি, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্টদূত ইয়াও ওয়েন এবং চীনের শাংহাই ফিল্ম এসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার ড. শি ছুয়ান।

এর আগে অডিটোরিয়ামের লাউঞ্জে ১৬টি চীনা চলচ্চিত্রের পোস্টার গ্যালারীর উদ্বোধন করেন রাষ্টদূত ও দীপু মনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ প্রদর্শিত হয় জনপ্রিয় চীনা সিনেমা ‘দ্য গ্রেট ডিসটেন্স ডেলিভার্স ক্রেন’ এবং ‘মুনলাইট ওয়ারিওর’।

মুনলাইট ওয়ারিওরের পরিচালক হং ইং বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা।:

‘এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি প্রথমবারের মতো এসেছি। এই উৎসবের মাধ্যমে আরও অনেক মানুষ আমার সিনেমা দেখছে এটা ভেবেই বেশ আনন্দ হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের সিনেমাগুলো দেখবো। চীন বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এবার এই চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি হবে এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় হবে।’

উৎসবের এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় লড়ে চীনা চলচ্চিত্র ‘দ্য কর্ড অব লাইফ’।

এদিকে, বাংলাদেশের নির্মাতা ও চলচ্চিত্র পরিচালকদের চীনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দেশটির নির্মাতা ও পরিচালকরা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিকশিত এবং দুইদেশের যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের লক্ষেই এ আমন্ত্রণ জানান তারা।

এ উৎসবে প্রদর্শিত হওয়া চীনের দুটি চলচ্চিত্রের পরিচালক ও প্রযোজকরা সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে চীনা সিনেমা ‘দ্য গ্রেট ডিসটেন্স ডেলিভার্স ক্রেন’ এর পরিচালক লাপাল কিয়াল এবং চিত্রনাট্য লেখক চাও ওয়াং এবং ‘মুনলাইট ওয়ারিওর’ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক হং ইং তাদের সিনেমা নির্মাণের অভিজ্ঞতা, সিনেমার গল্পের পেছনের নানা ঘটনা গণমাধ্যমকে তুলে ধরেন।

দ্য গ্রেট ডিসটেন্স ডেলিভার্স ক্রেনের পরিচালক লাপাল কিয়াল বলছিলেন উৎসবে যোগ দিতে পেরে তার ভালোলাগার কথা:

‘আমি প্রথম বার ঢাকায় এসেছি। অনেক ভালো লাগছে। গত দুইদিনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর দু’টি স্থানীয় টিভি কেন্দ্রে গিয়েছি, এবং ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানকার মানুষের জীবন যাত্রা আর ও সংস্কৃতি খুবই আকর্ষণীয়। গতকাল আমি স্থানীয় টিভি কেন্দ্রে গিয়ে অনেক স্থানীয় চলচ্চিত্র কর্মীর সঙ্গে দেখা করেছি। তারা অনেক অভিজ্ঞ। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকবে।’

এদিকে, উৎসবে শনিবার একটি ‘মাস্টার ক্লাস’ নেন চীনের শাংহাই ফিল্ম এসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার ড. শি ছুয়ান। তিনি বলেন তাঁর ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতার কথা:

‘ঢাকায় আমি এবারই প্রথম আসলাম। আমি ঢাকার বেশ কিছু স্থান ও স্থাপনা ঘুরে দেখেছি। দুই দেশের মানুষ একে অপরকে জানার জন্য বোঝার জন্য চলচ্চিত্র একটি ভালো মাধ্যম। এ কারণে আমরা এখানে এসেছি। আমি একটি মাস্টারক্লাস নিবো আজকে। সেখানে আমি চীনে কীভাবে চলচ্চিত্র মার্কেটিং করা হয়, তৈরি করা হয় বা চীন কীভাবে তরুণ নির্মাতাদের সহায়তা করছে এসব বিষয় থাকবে।’

এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সহযোগিতা করছে ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাস এবং শাংহাই ফিল্ম এসোসিয়েশন।

নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’- এই প্রতিপাদ্যে গেল শনিবার ঢাকায় শুরু হয় ৯ দিনব্যাপী এই উৎসব।

প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার/সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

----------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn