চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪৯
১. সংস্কৃতি সপ্তাহ
সিএমজির ‘ভিলেজ গালা’ প্রদর্শনী
আসন্ন চীনা চান্দ্র নববর্ষকে স্বাগত জানাতে জাতীয় ‘ভিলেজ গালা’ প্রদর্শনী ২০২৪ এর কার্যক্রম সম্প্রতি শুরু হয়েছে। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং দেশের প্রধান সম্প্রচারকারী রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম চায়না মিডিয়া গ্রুপের যৌথ আয়োজনে ড্রাগন বছর উৎসবের অংশ হিসেবে এটি শুরু হয়।
আয়োজকরা জানান, "আনন্দময় গান এবং প্রচুর ফসলের সঙ্গে চান্দ্র নববর্ষ উদযাপন" এই থিমে ইভেন্টটি সারা দেশে গ্রামীণ অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমন্বিত অনলাইন এবং অফলাইন কার্যক্রমের সংমিশ্রণ দেখাবে।
এবার দর্শক, শ্রোতারা লাইভ ব্রডকাস্ট গালাস, গ্রামীণ পণ্যের প্রচার এবং অনলাইন নতুন বছরের পেইন্টিং প্রদর্শনীর মতো মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান উপভোগ করবে।
লাইভ সম্প্রচার অনুষ্ঠান "মাই ভিলেজ গালা, মাই নিউ ইয়ার" সিএমজির মোবাইল প্ল্যাটফর্ম এবং জাতীয় পাবলিক কালচার ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে আগামী বছরের ২ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রিমিয়ার করা হবে বলে জানানো হয়। টানা তিন বছর ধরে ব্যাপক সাফল্যের সঙ্গে ভিলেজ গালার এই আয়োজন করে আসছে সিএমজি।
চীন-আসিয়ন চলচ্চিত্র সংস্কৃতি সপ্তাহ
দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী শহর নাননিংয়ে সম্প্রতি শেষ হলো চীন-আসিয়ান চলচ্চিত্র সংস্কৃতি সপ্তাহ ২০২৩। চীন এবং দশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে চার দিনব্যাপী এই ইভেন্টের আয়োজন করা হয়।
চীন এবং আসিয়ান দেশগুলোর চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথি এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনের শেষ দিনে হংকংয়ের প্রখ্যাত পরিচালক স্ট্যানলি থং অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এই ইভেন্টে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের দশটি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি চারটি চীনা চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এই বছর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) ১০ম বার্ষিকীকে মাথায় রেখে কুয়াংসিচুয়াং প্রশাসন আসিয়ানভুক্ত প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে।
ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম নিয়ে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আসিয়ান।
আয়োজকরা জানান, টিসিএম সংস্কৃতিতে থাকা স্বাস্থ্যের জ্ঞান প্রচার করা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিসিএম পণ্যগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হয়েছে। চীনা বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে টিসিএমের গল্প বলার জন্য চায়না টিসিএম কনফারেন্স নামে, এই প্রোগ্রামটি প্রায় ১০০ টিসিএম বিশেষজ্ঞ এবং পণ্ডিতকে জড়ো করে।
প্রথম পর্বে টিসিএমের চারটি ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির পরিচয় দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন, শ্রবণ এবং ঘ্রাণ, অনুসন্ধান এবং প্যালপেশন, যা দর্শকদের টিসিএমের প্রাচ্য জ্ঞানের একটি আকর্ষণীয় আভাস প্রদান করে, যা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করেছে।
প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।
২. ৫ম হাইনান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
৫ম হাইনান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ প্রদেশটির জন্য দেশ-বিদেশে সুনাম বয়ে এনেছে।
উপকূলীয় রিসোর্ট সিটি সানইয়াতে ১৬ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে উৎসবটি। সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশের ৪ হাজার চলচ্চিত্র থেকে নির্বাচিত প্রায় ১০০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শতি হয়। এর মধ্যে ২৪টি চলচ্চিত্র নমিনেশন পায় গোল্ডেন কোকোনাট অ্যাওয়ার্ডের জন্য।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিচিত্রধর্মী সব চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পেরে খুশি চলচ্চিত্রপ্রেমিরা। স্থানীয় বাসিন্দা সং সিন বলছিলেন উৎসবকে ঘিরে তাঁর আগ্রহের কথা।
‘এই চলচ্চিত্র উৎসবে আমি এমন সব সিনেমা দেখেছি যেগুলো সচরাচর দেখবার সুযোগ নেই। এ জন্য আমি উৎসবটির বিষয়ে খুবই আগ্রহী’।
এ চলচ্চিত্র উৎসবের কারণে চীনের সানইয়া সিটি এবং হাইনান প্রদেশ বিশ্বের কাছে ভালো পরিচিতি পাচ্ছে বলে মনে করেন উৎসবে ফিচার ফিল্ম বিভাগের জুরি প্রেসিডেন্ট ও তুরস্কের খ্যাতিমান পরিচালক নুরি বিলজে সেইলান।
‘আমি মনে করি যে কোনো চলচ্চিত্র উৎসবের নিজস্বতা থাকতে হয়। আয়োজক শহরের ওপর এর বড় প্রভাব পড়ে আর স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বের সেরা ছবিগুলো দেখেন এবং তাদের জীবনধারাও প্রভাবিত হয় এতে'।
চীনা অভিনেতা হুয়াং সিয়াওমিং মনে করেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে এ উৎসবের মাধ্যমে চীনা চলচ্চিত্র শিল্প পুনরায় চাঙ্গা হয়ে উঠছে।
‘আমি মনে করি চীনা চলচ্চিত্র শিল্প খুবই উজ্জ্বল। এর অসাধারণ একটা ইতিহাস রয়েছে। কোভিড মহামারির কারণে এতে ভাটা পড়েছিল। তবে এখন এটি পুনরায় চাঙ্গা হচ্ছে’।
বিশ্বের অন্যতম রিসোর্ট দ্বীপ হাইনান। এখানে রয়েছে একটি মুক্ত বাণিজ্য বন্দর। এ দুটির সম্মিলন হাইননাকে চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি চমৎকার স্থান করে তুলেছে।
প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিমৃ।
৩. এবার চিরায়ত চীনা সাহিত্য
চাং চি : চিত্রকল্পময়তার কবি
চিরায়ত চীনা কবি চাং চি’র বিষয়ে খুব সামান্যই জানা গেছে। তবে তিনশ থাং কবিতার বিখ্যাত সংকলনে তার কবিতা অন্তর্ভুক্ত থাকায় তিনি যে সত্যিই থাং যুগের কবি সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
চাং চি’র জীবন বিষয়ে যতটুকু জানা গেছে তাতে পণ্ডিতরা মনে করেন তার জন্ম হুবেই প্রদেশে। সে সময় এ স্থানের নাম ছিল সিয়াংইয়াং। ৭১২ থেকে ৭১৫ সালের মধ্যে তার জন্ম। মৃত্যুর তারিখও অনিশ্চিত। তবে গবেষকরা মনে করেন ৭৭৯ সালে তার মৃত্যু হয়। ছাং ছি এবং ইসুন নামেও তার পরিচিতি ছিল। ৭৫৩ সালে তিনি সরকারী চাকরির জন্য রাজকীয় পরীক্ষা চিনশি পাশ করেন। তিনি রাজস্ব বিভাগে চাকরি করতেন। তিনি একসময় রাজস্ব বিভাগের সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন।
চাং চি’র বেশিরভাগ কবিতা তার ভ্রমণের সময় লেখা হয়েছে। তিনি সহজ সরল ও ঋজু ভাষায় কবিতা লিখতেন। সহজ শব্দ ব্যবহার করতেন। কিছু সরল উপমার মাধ্যমে তিনি তার জীবনবোধকে তুলে ধরেছেন। তার ৫০টির মতো কবিতা কালের স্পর্শ এড়িয়ে এখনও বেঁচে আছে।
তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা হলো ‘রাতে ম্যাপল সেতুর কাছে নোঙর’। কবিতাটি শোনাচ্ছি
হিমশীতল আকাশকে চিরে দিচ্ছে রাতজাগা পাখির কর্কশ চিৎকার
টিমটিমে আলোয় ম্যাপল সেতুর নিচে জেলে নৌকাগুলো নিশ্চলভাবে শুয়ে আছে
নগরপ্রাচীরের পাশে শীত-পাহাড়ের মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘন্টাধ্বনিতে
নৌকার ভিতরে থাকা মাঝি ঘুম ভেঙে দেখে তখনও স্থবির মধ্যরাত।
এই কবিতায় এক অসামান্য চিত্রকল্প ফুটে ওঠে। বিষণ্ন রাত্রি , জেলে নৌকার ভিতরে থাকা শীতার্ত নাবিকদের গৃহকাতর অনুভূতি এবং পাহাড়ের উপরের মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘন্টাধ্বনিতে গম্ভীর এক পরিবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে। এই চিত্রকল্পগুলো চীনের প্রাচীন জীবনযাত্রা, ভ্রমণকারীর কষ্ট ও বিষণ্নতাকে তুলে ধরেছে। এই আপাত সরল অথচ গভীর বোধের চিত্রকল্পের জন্য চিরায়ত চীনা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন কবি চাং চি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া/সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম।
---------------------------------------------------------------------------
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।