বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪২

CMGPublished: 2023-11-11 19:47:13
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

১. ৩৬তম গোল্ডেন রোস্টার অ্যাওয়ার্ড

৩৬তম গোল্ডেন রোস্টার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেনে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

চায়না গোল্ডেন রোস্টার এবং হানড্রেড ফ্লাওয়ার্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিজয়ীদের মধ্যে সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী, পরিচালক এবং ফিচার ফিল্মের জন্য ২০টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ফ্যান্টাসি মহাকাব্য "ক্রিয়েশন অফ দ্য গডস আই : কিংডম অব স্টর্মস" দুটি ট্রফি জিতে নেয়।

হংকং থেকে টনি লিউং চিউ-ওয়াই "হিডেন ব্লেড"-এ তার অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান, যা জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় অশান্ত সাংহাইতে নির্মিত একটি নাটক।

একজন শাওসিং অপেরা তারকা এবং তার পরিবারের গল্প বলা একটি ফিচার ফিল্ম "অফ দ্য স্টেজ"-এ অভিনয়ের জন্য হ্য সাইফেই সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।

অ্যানিমেটেড ফিচার "ছাং আন" সেরা অ্যানিমেশন পুরস্কার জিতে নেয়। এটি থাং রাজবংশের "অমর কবি" লি পাইয়ের গল্পগুলোকে চিত্রিত করে।

গোল্ডেন রোস্টার অ্যাওয়ার্ডস, একটি জাতীয় অনুষ্ঠান যা চায়না ফেডারেশন অব লিটারারি অ্যান্ড আর্ট সার্কেল এবং চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ আয়োজনে পরিচালিত হয়। এটি ১৯৮১ সালে চালু হয়।

গ্রিস ও ওআইসির সঙ্গে সিএমজির চুক্তি

সম্প্রতি চীন-গ্রিস সভ্যতা কেন্দ্র এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক একাডেমির সঙ্গে দুটি সহযোগিতা-চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)।

গ্রীসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস সিএমজি’র সাথে অলিম্পিক একাডেমির সহযোগিতা গভীরতর করা এবং সংশ্লিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানান।

চীনের কেন্দ্রীয় উপপ্রচারমন্ত্রী ও সিএমজি’র মহাপরিচালক শেন হাই সিয়োং এ সময় বলেন, চীন-গ্রিস সভ্যতা কেন্দ্রের মাধ্যমে দু’টি শীর্ষ সভ্যতার সম্মিলিত উন্নয়ন বৃদ্ধি হচ্ছে। সিএমজি কেন্দ্রটির সঙ্গে মিডিয়া ও বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে, দু’দেশের জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবে এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলতে সভ্যতার শক্তি যোগাবে বলে জানান তিনি।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

২. ক্যালিগ্রাফি-চিত্রকলার ‘চিয়াংসি স্টাইল’

চীনা ক্যালিগ্রাফি ও চিত্রকলার অনেক মাস্টার শিল্পীর জন্ম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশে।

হাজার বছর আগে থাং রাজবংশের সময়কালে এখানে জন্ম নেন চীনের প্রধান চারজন ল্যান্ডস্কেপ চিত্রশিল্পীর দু’জন তং ইউয়ান ও চু রেন।

ইন্ক পেইন্টিংয়ে পাখি ও ফুলের ছবি আঁকার উদ্ভাবক সু সি এবং ক্যালিগ্রাফি মাস্টার হুয়াং তিংচিয়ানসহ আরও অনেক খ্যাতিমান শিল্পী তাদের কাজের মধ্য দিয়ে চিয়াংশিকে গৌরবান্বিত করেছেন।

সপ্তদশ শতকের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী লু মু প্রতিষ্ঠা করেন চিয়াংসি পেইন্টিং স্কুল। তখনকার একদল শিল্পীর যৌথ প্রচেষ্টা প্রথাভেঙ্গে নতুন অঙ্কন রীতি প্রতিষ্ঠা করেন যা আজকের চিত্রকলার জগৎকে প্রভাবিত করছে ব্যাপকভাবে।

চিয়াংসি পেইন্টিং স্কুলের একটি উজ্জ্বল নাম চু তাও- যিনি বাতা সানরেন নামে সমধিক পরিচিত। বাতা সারেনের কাজ চিয়াংসির হাজার বছরের চিত্রকলাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

বৃহৎ কোনো কিছুকে তুলির এক আঁচড়ে সীমিত পরিসরে প্রকাশের তাঁর উদ্ভাবিত অঙ্কন রীতি চীনের চিত্রকলাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। তার মাস্টারপিস ‘জয়ফুল ফিশ’-বিশাল সমুদ্রে ছোট্ট মাছের অবারিত স্বাধীনতা এর উজ্জ্বল উদাহরণ।

চু তাও বা বাতা সানরেনের অঙ্কন শৈলীতে মুগ্ধ তরুণ চিত্রশিল্পী লাও ওয়েইওয়েন। তার কাজে অনুপ্রাণিত চু এখন চিয়াংসিতে বসবাস করছেন এবং চর্চা করছেন ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিং। তিনি বলেন:

‘ঐতিহ্যবাহী চীনা চিত্রকলায় শুরুতে পশ্চিমা চিত্রকলার মতো স্কেচ করার রীতি ছিল না। তার বদলে একজন শিল্পী সরাসরি ক্যানভাসে তুলি ব্যবহার করেন। যার ফলে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিত্রকলায় একটা নমনীয়ভাব থাকে, তবে একই সঙ্গে থাকে শক্তি আর ওজস্বিতা’।

চিয়াংসির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর বৈশিষ্ট্যময় নৈসর্গিক সৌন্দর্যই তাকে এ প্রদেশের সঙ্গে আত্মিক করেছে বলেছে জানান লও।

‘চিয়াংসি পেইন্টিংয়ে এখানকার পাহাড়-নদীর নিসর্গ একাকার হয়ে মিশে আছে। বড় বড় শিল্পীরা এক সময় যে ল্যান্ডস্কেপে ছিলেন, আজ আমি সেখানেই বসবাস করছি। এজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি’।

নিজের চর্চার পাশাপাশি লও ওয়েইওয়েন এখন তার শিক্ষার্থীদের মাঝে চিয়াংসি পেইন্টিং স্কুলের মূল ধারণার প্রসার ঘটাতে কাজ করছেন যাতে এ শিল্পে নতুন নতুন প্রতিভার আগমন ঘটে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

হান ইয়ু: চীনা সাহিত্যের মহান গদ্যশিল্পী

চীনের থাং রাজবংশের সময়কার একজন কবি, দার্শনিক, গদ্যকার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন হান ইয়ু। তিনি কবিতার চেয়ে গদ্য লেখার জন্য বেশি বিখ্যাত। তাকে থাং ও সং যুগের মহান আটজন গদ্যকারের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি কনফুসিয়াসের দর্শনের অন্যতম ব্যাখ্যাকার এবং নিও কনফুসিয়ানিজমের একজন প্রভাবশালী লেখক। চীনের সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তাকে দান্তে, শেকসপিয়ার ও গ্যেটের সঙ্গে তুলনা করা হয়। মিং যুগের পন্ডিত মাও খুন তাকে চীনের আট মহান গদ্যকারের মধ্যে শ্রেষ্ঠজনের আসন দিয়েছেন।

হান ইয়ুর জন্ম ৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে হ্যইয়াং সিটিতে। বর্তমানে এটি হ্যনান প্রদেশের মংচৌতে অবস্থিত। তিনি অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তবে মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান হান ইয়ু। তাকে প্রতিপালন করেন জ্যেষ্ঠভ্রাতা হান হুই। ৭৭৪ সালে তার পরিবার রাজধানী ছাংআনে চলে আসে। হান হুইয়ের সঙ্গে মন্ত্রী ইয়ুয়ান চাইয়ের বন্ধুত্ব ছিল। ইয়ুয়ান চাই সম্রাটের বিরাগ ভাজন হলে হান হুইও রাজরোষে পড়েন। পরিবারসহ দক্ষিণ চীনে চলে যান তারা। হান হুই কুয়াংতং প্রদেশের শাসক হন এবং ৭৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

৭৯২ সালে চারবারের চেষ্টায় সরকারি চাকরির পরীক্ষা চিনশি পাশ করেন হান ইয়ু। তবে রাজধানীতে তিনি পদ পাননি। ফলে প্রাদেশিক সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে রাজধানীর বাইরে চলে যান হান ইয়ু। ৮০২ সালে তিনি সুচৌ শহরের সামরিক প্রশাসক হন। চাকরি জীবনে তাকে অনেক বার উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কর্মদক্ষতার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। আবার স্পষ্টবাদিতার জন্য শাসকের বিরাগভাজনও হয়েছেন। সম্রাট মুচোং তাকে পছন্দ করতেন। হান ইয়ু রাজকীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রেকটর হিসেবেও কাজ করেছেন। ৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে হ্যইয়াংয়ে পারিবারিক সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়। তার নামে একটি নদী ও পাহাড়ের নাম করণ করা হয়। হান নদী ও হান পাহাড় দক্ষিণ চীনের ছাওচোওতে অবস্থিত। এই পাহাড় ও নদীর পাশেই রয়েছে হান ইয়ু মন্দির।

গদ্য রচনার জন্য বিপুল খ্যাতি পেলেও তার কবিতা সমকালে খুব বেশি প্রশংসিত হয়নি। তবে পরবর্তিকালের সমালোচকরা তার কবিতাকে ভালোভাবেই মূল্যায়ন করেন। তিনি বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছেন। তিনি ভাষায় খুব বেশি অলংকার ব্যবহার পছন্দ করতেন না।

চাংচির জন্য লেখা প্রথম বসন্ত

রাজপথ সিক্ত হয়েছে ক্ষীরের ধারার মতো বৃষ্টিতে

কাছে নয় দূরে দেখা যায় সবুজ তৃণরাশি

এটা বছরের সবচেয়ে সবচেয়ে সুন্দর সময় যখন

উইলোর ঘোমটায় রাজধানীকে ঢেকে দিতে বৃথা চেষ্টা করে বসন্ত।

চীনের মহান সাহিত্যিক হান ইয়ু তার লেখা ও জীবন দর্শনের জন্য চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn