বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩০

CMGPublished: 2023-08-19 19:53:26
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

ছিসি উৎসব উদযাপনে বিশেষ কর্মসূচি সিএমজির

আসন্ন চাইনিজ ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ছিসি উৎসব উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি। চীনা চান্দ্র ক্যালেন্ডারের সপ্তম চান্দ্র মাসের সপ্তম দিনে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। এ বছর ২২ আগস্ট উৎসবের দিন হওয়ায় সেদিনই এই বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করার ঘোষণা দেয় সিএমজি। তবে অনুষ্ঠানটি তৈরি করা হয়েছে আগেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সৃজনশীল স্টেজ ডিজাইন, তারকা-খচিত পারফর্মিং গ্রুপ এবং উদ্ভাবনী প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে দর্শকদের কাছে প্রেম এবং রোমান্স উদযাপনের জন্য একটি রিফ্রেশিং অডিও-ভিজ্যুয়াল পৌঁছে দেয়া এই প্রোগ্রামটির লক্ষ্য।

ছিসি উৎসবের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে চীনা-শৈলীর রোম্যান্স উপস্থাপনের সৃজনশীল ধারণার উপর ভিত্তি করে এই বছরের বিশেষ অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করা হয়েছে।

মূল মঞ্চের চারপাশে, চীনা বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ২০টিরও বেশি বুথ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বিশেষ খাবার, অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইন্টারেক্টিভ ইনস্টলেশন এবং চীনের বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করা হয়।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

নাইরোবিতে চীন-কেনিয়া চলচ্চিত্র উৎসব

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে হয়েছে চীন-কেনিয়া চলচ্চিত্র উৎসব।

দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৬০তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে শুরু হওয়া চীন-আফ্রিকা চলচ্চিত্র উৎসবে কুংফু, ড্রাগননৃত্য এবং কেনিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীতসহ পারফর্মিং আর্টসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ছিল।

উদ্বোধনী সন্ধ্যায় চীনা ব্লকবাস্টার "ওয়ান অ্যান্ড অনলি" প্রদর্শিত হয়। নাইরোবির টু রিভারস মলের প্রেক্ষাগৃহে উৎসবের দিনগুলোতে প্রদর্শন করা হয় বেশ ক’টি চীনা চলচ্চিত্র।

অনুষ্ঠানে চীন এবং কেনিয়া চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের জন্য একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করে, যা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কূটনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক চিহ্নিত করা হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী হু হ্যপিং এবং কেনিয়ার যুব, ক্রীড়া ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবাবু নামবাম্বা।

কেনিয়া ফিল্ম কমিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিমোথি ওয়াসে বলেছেন, কেনিয়া তার সৃজনশীল শিল্পের পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করার জন্য চীনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চীনের প্রযুক্তি এবং দক্ষতা ব্যবহার করে, কেনিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিশ্বমানের চলচ্চিত্র এবং বাজার তৈরিতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওয়াসে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

২. চীনে বাড়ছে সাংস্কৃতিক পর্যটন

গ্রীষ্মের ছুটিতে পর্যটন ব্যুমে চীন। চীনের পর্যটন একাডেমির জানাচ্ছে জুন-আগস্ট প্রান্তিকে দেশে পর্যটকের সংখ্যা ১৮৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর পর্যটনে ভোগব্যয় ছাড়িয়ে যাবে ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

চীনের পর্যটন শহরগুলো নানা আয়োজনে আকর্ষণ করছে বিপুল সংখ্যক দেশ-বিদেশের পর্যটক।

৫ হাজার বছরের চীনা সভ্যতার সূতিকাগার মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশের প্রাচীন শহর লুইয়াং।

শহরটির প্রাচীন দৃশ্যপটে, হাজার বছরের পুরনো ল্যান্ডমার্ক ওয়েনফেং টাওয়ারের পটভূমিতে চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু পরে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। প্রাচীন শহুরে পরিবেশে প্রাচীন পোশাক যেন দিব্যি খাপ খেয়ে যায়।

হানফু পরেতো বেজায় খুশি ক্ষুদে পর্যটক ইউ ছিয়ানলে। সে জানালো,

‘আমি এর আগে কখনো এমন পোশাক পরিনি। আমার কাছে কেমন যেনো ম্যাজিকের মতো লাগছে’।

হ্যনানের লুয়ি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন উন্নয়ন গ্রুপের চেয়ারপারসন লি ওয়েই বললেন কীভাবে হানফুর প্রতি আগ্রহী হলেন পর্যটকরা।

‘আমরা প্রথমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নজর কাড়তে সক্ষম হই। এ থেকে উৎসাহিত হয়ে বেশি বেশি মানুষ হানফু পরতে আগ্রহী হচ্ছেন’।

মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের একটি প্রচীন শহর ফেংহুয়াং। শহরটির রয়েছে ২ হাজার ২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য।

চলতি গ্রীষ্মে তারা নানা ইনডোর ঐতিহ্যিক পরিবেশনা এবং আউটডোরে লাইট শো ও জাতিগত সংস্কৃতিকে তুলে ধরে নানা পরিবেশনার আয়োজন করে।

ফেংহুয়াং শো’র পরিকল্পনাকারী চু চংহুই জানালেন পর্যটক আকর্ষণে তাদের কার্যক্রমের কথা।

‘পর্যটকদের ভালো অভিজ্ঞতা দিতে আমরা অনেক পরিশ্রম করছি। ফেংহুয়াং শো’তেও নানা বৈচিত্র্য এনেছি। এতে স্থানীয়দের জীবনমানেরও উন্নতি হচ্ছে’।

এ ছাড়াও পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের হুয়াই’আন সিটি, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের লিয়াংশান ই অটোনমাস প্রিফেকচারের সিচাং সিটি, মধ্যচীনের হুনান প্রদেশের হেংইয়াং সিটি এবং পূর্ব চীনের শানতং প্রদেশের চিনান সিটিতেও ঢল নেমেছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

কবি ওয়াং হান: যুদ্ধের বিপরীতে জীবন

ছবি: কবি ওয়াং হান

প্রাচীন চীনের সকল কবিই বীর বা যোদ্ধা ছিলেন না। অনেকে ছিলেন শান্তিময় এবং আনন্দমুখর জীবনের পক্ষে। যুদ্ধের নিষ্ফলতা, দুঃখ এবং বিপরীতে জীবনের ও বেঁচে থাকার আনন্দ ফুটে উঠেছে তাদের কবিতায়। এমনি একজন কবি ওয়াং হান। তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি।

কবির সঠিক জন্মসাল, মৃত্যু এবং জীবন বিষয়ে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে গবেষকরা ধারণা করেছেন তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত বা অভিজাত ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি অষ্টম শতাব্দির কবি ছিলেন। শানসি প্রদেশের চিনইয়াং পরিবারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। এ থেকে মনে করা হয় তিনি শানসি প্রদেশের মানুষ ছিলেন।

তিনি থাং রাজবংশের সময়কার কবি ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কারণ তিনশ থাং কবিতার বিখ্যাত সংকলনে তার একটি কবিতা রয়েছে।

তার বেশিরভাগ কাজই হারিয়ে গেছে। যে কটি কবিতা রয়েছে সেগুলোর মূল বক্তব্য হলো জীবন খুব সংক্ষিপ্ত। এই জীবনকে হাসি, আনন্দ, প্রেমে উপভোগ করা উচিত।

তার একটি কবিতার নাম লিয়াংচৌর গান। এই কবিতাটিকে যুদ্ধক্ষেত্র অভিমুখে যাত্রা শুরু এই নামেও অভিহিত করা হয়।

আঙুরের মদিরা ভরে নাও রাতে জ্বলে ওঠা জেড পাথরের পেয়ালায়

পিপা গান গেয়ে আমরা পান করি আনন্দে, আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে আবাহন করা হয়েছে

উপহাস করো না যদি আমরা মাতাল হয়ে পড়ি লড়াইয়ের ময়দানে

কতজন যোদ্ধা সুস্থভাবে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে বলো?

এখানে যে লিয়াংচৌর ভূমির কথা বলা হয়েছে সেটি হান রাজবংশের সময়কার। ১২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হান ও সিয়ংনু রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এই স্থানটি প্রাচীন রেশমপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেকপোস্ট ছিল।

আর পিপা হলো গিটার ধরনের লোকজ বাদ্যযন্ত্র। প্রায় দুই হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে পিপা বাদ্যযন্ত্রের।

এই কবিতায় যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর ডাক, যোদ্ধার অনিশ্চিত জীবনের বিপরীতে জীবনের জয়গান গাওয়া হয়েছে।

ওয়াং হানের এই কবিতাটি চার পংক্তির। প্রতিটি পংক্তিতে সাতটি করে চায়নিজ ক্যারেকটার বা শব্দ রয়েছে। এই বিশেষ ধরনের কবিতা সাধারণত সুর দিয়ে গাওয়া হতো। প্রতিটি চরণে অন্তঃমিল থাকতো।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে মধ্যএশিয়ার প্রচলিত গানের সঙ্গে এর কিছুটা মিল রয়েছে। এটি চিরায়ত চীনা সাহিত্যেরও এক বিশেষ সম্পদ।

প্রতিবেদন ও কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া

---------------------------------------------------------------------------

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn