বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২৬

CMGPublished: 2023-07-22 20:37:45
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

দেশিয় লোকগানের আসর চালু সিএমজি’র

চীনের চমৎকার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সৃজনশীল উত্তরাধিকারের প্রচার-প্রসারে দেশিয় লোকগানের আসর চালু করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এই নতুন প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হয়।

দেশটির ঐতিহ্যবাহী লোকগীতিতে গভীরভাবে সাংস্কৃতিক যে থিমগুলো রয়েছে তা অন্বেষণ করা এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য।

আয়োজকরা জানান, এই অনুষ্ঠানটি ১০টি পর্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে। এটি চীনা চমৎকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সৃজনশীল উপস্থাপন, উদ্ভাবনী উন্নয়নের একটি সংগীত প্রতিযোগিতা এবং রিয়েলিটি শোতে রূপ নেবে বলে জানানো হয়।

আয়োজকরা আরো জানান, তরুণ সংগীতশিল্পীদের উদ্ভাবনী উত্তরাধিকার এবং বিকাশের মাধ্যমে চীনের গতিশীল সংস্কৃতিকে মূল্য দিতে উত্তর চীনের শানসি প্রদেশের চৌছুয়ান কাউন্টিতে গালা শো মঞ্চস্থ হবে।

তরুণ সংগীত শিল্পীদের প্রতিভা প্রদর্শনের পাশাপাশি, অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের উত্সাহী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাদের নিজ শহরের লোকগানের নিজস্ব রেকর্ডিং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে। এইভাবে চীনের লোকসংস্কৃতিকে বিস্তৃত বিশ্বে প্রচার করছে সিএমজি।

এডিনবরা কার্নিভালে চীনা শিল্পীদের পরিবেশনায় মুগ্ধ দর্শকরা

স্কটল্যান্ডের বৃহত্তম বহুসংস্কৃতির উৎসব এডিনবরা ফেস্টিভ্যাল কার্নিভাল গেল সপ্তাহে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।

এডিনবরায় চীনা কমিউনিটির ২৮০ জনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ৮০০ শিল্পী যোগ দেন বর্ণিল এ কার্নিভালে।

বহুভাষা, বহুসংস্কৃতির এ কার্নিভালে দর্শকদের মুগ্ধ করে চীনা শিল্পীদের পরিবেশনা। ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাকের বর্ণবিভা, রাজসিক লায়ন ও ড্রাগন ড্যান্স বর্ণিল করে তোলে এডিনবরা কার্নিভালকে।

২. ২০তম সামার ক্যাম্প: তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারের হাজার তরুণ-তরুণীর সম্মিলন

কোভিড মহামারি অবসানের পর ফের তাইওয়ানের তরুণদের জন্য মূল ভূখন্ডে শুরু হয়েছে আকর্ষণীয় সামার ক্যাম্প।

২০তম সামার ক্যাম্পে যোগ দেন তাইওয়ান প্রণালীর দুইপারের হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী। নানা অনুষ্ঠানের তারা আনন্দ করেন, বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন এবং পরস্পরের বিষয়ে জানাশোনা গভীর করেন।

৪ জুলাই সামার ক্যাম্পের শুরুতে বেইজিং স্পোর্টস ইউনিভার্সিটিতে জড়ো হন তাইওয়ানের ২০০ কলেজ শিক্ষার্থী। মূল-ভূখন্ডের প্রাত্যহিক জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুব খুশি তারা।

তাইওয়ানের চায়নিজ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইউনিয়নের চেং তিং ই জানালেন তার গভীর উচ্ছ্বাসের কথা।

‘আমরা এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি। আরও বেশি খুশি এ জন্য যে, মূলভূখণ্ড ও তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা আমরা এখানে এক হতে পেরেছি’।

তাইওয়ানের ছেংছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উ ইউ’র আগ্রহ বইয়ে পড়া মূলভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর প্রতি।

‘আমি এখানে একটা টিম স্পিরিট অনুভব করছি। আমি পাঠ্যবইয়ে পড়া মূল ভূখন্ডের গুরুত্পূর্ণ স্থানগুলো দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি’।

স্যামার ক্যাম্পের প্রথম দিনেই তাইওয়ানের যুবরা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে সময় কাটান। তারা মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট গ্যালারিতে ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন এবং লাইভ পারফরমেন্স উপভোগ করেন।

অল চায়না ফেডারেশন অফ তাইওয়ান কমপ্যাট্রিয়টসের আয়োজনে সান্ধ্য পার্টির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সামার ক্যাম্পের।

সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াং ইচৌ তুলে ধরেন সামার ক্যাম্পের গুরুত্বে কথা।

‘আমরা খুব খুশি, কারণ এমন সরাসরি যোগাযোগ ও বিনিময়ের মাধ্যমেই আমরা পরস্পরের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে পারবো, মতৈক্যে পৌঁছতে পারবো এবং তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সকল বাধাকে অতিক্রম করতে পারবো’।

সামার ক্যাম্পে যোগ দেওয়া তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা পরে মূল ভূখন্ডের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে যান। গোটা গ্রীষ্মকাল জুড়েই চলবে সামার ক্যাম্পের এ কার্যক্রম।

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

চাং রুয়োসু: দুই কবিতায় অমরত্ব

চিরায়ত চীনা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবি চাং রুয়ো সু। তাঁর মাত্র দুটি কবিতা আধুনিক যুগ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। কিন্তু এ দুটি কবিতা এতই খ্যাতি পেয়েছে যে বলা হয় চীনের সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সম্পদ চাং রুয়োসুর কবিতা।

থাং রাজবংশের সময়কার প্রথম দিকের কবি চাং। তার জন্ম ৬৬০ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ৭২০ খ্রিস্টাব্দে। আধুনিক চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচোও শহরে তার জন্ম। তিনি শানতোং প্রদেশে চাকরি করতেন। তার জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না।

সম্ভবত তিনি সেনাবাহিনীতে ছোট পদে চাকরি করতেন। তাকে মধ্য উ রাজ্যের চারজন কবির অন্যতম বলা হয়। এই চারজন কবি হলেন হ্য চিচাং, চাং সু, বাও রোং এবং চাং রুয়োসু। ইয়াংজি নদীর নিম্ন অববাহিকায় তার বসবাস ছিল। চাং রুয়োসুর যে দুটিমাত্র কবিতা পাওয়া গেছে তার একটিকে চীনা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ বলা হয়। কবিতাটির শিরোনাম ‘এক বসন্তের রাতে নদীবক্ষে চাঁদ’। এই কবিতায় ইয়াংসি নদীর দৃশ্য, ভ্রমণকারীর পথের কষ্ট, গৃহে রেখে আসা প্রিয়জনের স্মৃতি, নদীর জলে চাঁদের ছায়া, জোছনার সৌন্দর্য ইত্যাদি ফুটে উঠেছে।

এক বসন্তের রাতে নদীবক্ষে চাঁদ

বসন্তে নদী ফুলে ওঠে সাগরের মতো

নদীতে জোয়ার আসে ঝলমলে জ্যোৎস্নায়

দশ হাজার লি জুড়ে ওঠে ঢেউ

নদী যেখানে বয়ে যায় সেখানে ছড়িয়ে পড়ে চাঁদের আলো

নদীর বাতাস বয়ে আনে সুরভিত দ্বীপের সৌরভ

যেখানে ফুটন্ত ফুল জ্যোৎস্নায় মনে হয় যেন তুষারকণা

কত প্রজন্ম এলো আর চলে গেল

বছরের পর বছর চাঁদ তো সেই চির পুরাতন, চির নতুন।

অভিযাত্রী আজ রাতে কোন দিকে পাল তুলেছে তার নৌকার?

চাঁদের আলোয় কে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরে?

হায়! চাঁদের আলো খেলা করছে সুউচ্চ ভবনে

হয়তো তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে সে একা

সে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে, প্রিয়তম স্বামী তার বহুদূরে

পথিক গতরাতে স্বপ্ন দেখেছে তার দীঘির জলে ঝরে পড়ছে ফুল

হায়, বসন্ত অর্ধেক চলে গেছে এখনও গৃহের পথে তার যাত্রা করা হলো না।

এই জ্যোৎস্নামাখা জোয়ারে কতজন বাড়ি ফিরতে পারবে?

নদীর তীরে বৃক্ষের মাথায় ডুবে যাচ্ছে চাঁদ, শুধু জেগে আছে স্বপ্ন।

চাং রুয়োসুর এই কবিতা পরবর্তিকালের অনেক শিল্পকর্মে প্রভাব বিস্তার করেছে। অনেক শিল্পী তাদের তুলিতে এই কবিতার দৃশ্য এঁকেছেন। লণ্ঠন উৎসবের সময়ও কবিতাটি আবৃত্তি হয়েছে। সুর দিয়ে গাওয়া হয়েছে।

এই কবিতায় প্রথমযুগের থাং কবিতার সারল্য, গীতিময়তা ও সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে।

---------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, সাজিদ রাজু, শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn