চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-১৮: চীনের ঐতিহ্যবাহী চা-সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রসারে জোরালো উদ্যোগ
চীনের ঐতিহ্যবাহী চা উৎপাদন, পরিবেশন ও পানের রীতি গত বছর জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নেয়। এর আগে ২০১৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চা-পান শিল্পের ঐতিহ্যগত ও অর্থনৈতিক মূল্যকে বিবেচনায় নিয়ে ২১ মে’কে আন্তর্জাতিক চা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
এ দিনটিকে কেন্দ্র করে চীনের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্প নিয়ে রাজধানী বেইজিংসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চা-সংস্কৃতিকে তুলে ধরে হয়েছে নানা আয়োজন।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিজিটিএন হাজার বছর আগে সং রাজবংশের সময়কালের চা পান রীতি ‘তিয়ান ছা’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে প্রাচীন চা-সংস্কৃতির নান্দনিক দিকটি তুলে ধরা হয়।
রাজধানী বেইজিংয়ে এ উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ছাইয়োয়াং আন্তর্জাতিক চা সংস্কৃতি উৎসব। ঐতিহাসিক চু ওয়াং ফু প্রাসাদে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী উৎসবটি চীনাদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও মনোযোগ আকর্ষণ করে।
রুবেন এনোচ নামে একজন বিদেশি বলছিলেন তার ভালো লাগার কথা।
‘চীনের সবুজ চা স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিই খুব ভালো। আমি এ উৎসবে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। চীনের সবুজ চা পান এবং চমৎকার পারফরমেন্স উপভোগ করছি। আমি তো আসলে এর প্রেমেই পড়ে গেছি’।
পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ সিটিতে ছিল থিমভিত্তিক স্টেজ পারফরমেন্স, সেমিনার এবং প্রদর্শনীর আয়োজন। ঐতিহ্যবাহী চা-সংস্কৃতিতে তুলে ধরতে এবং এর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিই ছিল এর লক্ষ্য।
চীনের সংস্কতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগের পরিচালক ওয়ান চেনইয়াং ব্যাখ্যা করেন বিষয়টি। ‘আয়োজনগুলোতে অংশ নেওয়া অতিথি, স্কলার ও চা-শিল্পে পরম্পরা প্রতিনিধিরা চা শিল্পের রূপান্তর ও উন্নয়ন, গ্রামীণ পুনরুজ্জীবন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চা-সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার বিষয়আশয় নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের অবৈষয়কি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটির প্রসার ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে’।
চীনের একটি অন্যতম চা উৎপাদন অঞ্চল চ্যচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে হয়েছে ৫ম আন্তর্জাতিক চা প্রদর্শনী। ৫০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে প্রদর্শনীতে ১০টি দেশ ও অঞ্চলের চার শ’র বেশি চা কোম্পানী অংশ নেয়।
প্রদর্শনীতে চ্যচিয়াং প্রদেশের অধিকারে থাকা চা-সংস্কৃতির ৫২টি মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।
২. চীন-মধ্যএশিয়া সম্মেলনে জমকালো গালা পারফরম্যান্স
সম্প্রতি শেষ হওয়া চীন মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং এবং মধ্য এশিয়ার শীর্ষ পাঁচ সফররত নেতার উপস্থিতিতে সিয়ান শহরে আয়োজন করা হয় এক বর্ণাঢ্য গালা পারফরম্যান্সের।
মধ্য এশিয়া ও চীনের জনগণের সংস্কৃতি ও শিল্পের বছর এবং চীন-মধ্য এশিয়া যুব শিল্প উৎসব গালা আয়োজনেই উদ্বোধন হয়। এই পুরো আয়োজনটি সিয়ানের থাং প্যারাডাইসে অনুষ্ঠিত হয়।
এই গালা আয়োজনে চীন ছাড়াও কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের শিল্পীদের সম্মিলিতি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিলো।
ছিন রাজবংশের সময় থেকেই ছিনছিয়াং অপেরার উৎপত্তি। ২ হাজার বছর ধরে এটি বিকশিত হয়ে আসছে। বাজানো হয় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র। বিভিন্ন রঙের ঐতিহ্যিক নানা পোশাকে মঞ্চস্থ হয় মনোমুগ্ধকর নাচ।
এর আগে থাং রাজবংশের সময়কার সাম্রাজ্যের বাগানের ধাচে নির্মিত থাং প্যারাডাইসে বর্ণিল চীনা ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয় পাঁচ দেশের নেতাদের।
৩. বাংলাদেশে চায়নিজ কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা জরুরি: মুহম্মদ নূরুল হুদা
গত ৪ মে রাজধানী ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ‘সিএমজির নতুন অগ্রযাত্রা: চীনা বই প্রকাশ’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী গোলটেবিল বৈঠক। চীন বিষয়ক বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের সাংস্কৃতি কাউন্সিলর ইউয়ে লি ওয়েন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা। বেইজিং থেকে অনলাইনে যুক্ত হন সিএমজি বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।
অনুষ্ঠানে অন্য অতিথি ও আলোচকদের পাশাপাশি চীন বিষয়ক বই প্রকাশের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। এ জন্য প্রথমেই একটি জরিপ করার কথা বলেন তিনি।
সিএমজির দায়িত্বে এ জরিপটি পরিচালনা করা যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ থেকে বোঝা যাবে আমরা আর কোন কোন বই নিয়ে কাজ করবো।
দু’দেশের অনুবাদকদের প্রশিক্ষণের জন্য বাংলা একাডেমি একটি প্রকল্প নিয়েছে বলেও জানান নূরুল হুদা।
বাংলাদেশে একটি চায়নিজ কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ কাজে সুবিধা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক।
------------------------------------------------------------------------------
প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশিম
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।