বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-১৭: চীনে লোকসংস্কৃতির প্রসারে ইউননানে লোকসংগীত উৎসব

CMGPublished: 2023-05-20 20:29:57
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের ঐতিহ্যবাহী লোকসাহিত্য ও লোকসংগীত সংগ্রহ, প্রচার, প্রকাশ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীনের লোকসাহত্যি ও শিল্প সমিতি সম্প্রতি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশের দালি শহরে আয়োজন করে বর্ণাঢ্য লোকসংগীত উৎসবের। এতে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের ২২টি জাতিগোষ্ঠীর ২৬০ জন পরম্পরা লোকশিল্পী অংশ নেন। প্রায় ১৩ শ’ বছরের প্রাচীন একটি জাতিগত উৎসবের স্মারক অনুষ্ঠানও ছিল আয়োজনটি।

ইউননানসহ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যিক লোকসংগীতকে তুলে ধরা এবং এর উন্নয়ন ও সংরক্ষণই ছিল চারদিনব্যাপী উৎসবের লক্ষ্য। উচ্চমানের আয়োজনটিতে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয় এবং তাদেরসহ অন্যান্য শিল্পীদের পরিবেশনা তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

লোকসংগীতের প্রসারে একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কারিক্যুলামে এর অন্তর্ভুক্তির কথা বললেন খ্যাতিমান পরম্পরা লোকশিল্পী লু লিহুয়া।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের মূল্যবান লোকঐতিহ্যকে নিয়ে যাওয়াটা আমরা শুরু করতে চাই একেবারে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সপ্তাহে দুটি আনন্দদায়ক পাঠ দেব আমরা যাতে ছাত্রছাত্রীরা লোকসংগীতকে ভালোবাসতে শেখে’।

বর্তমানে চীনের ২৪টি প্রদেশ, অঞ্চল ও মিউনিসিপ্যালিটি লোকসংগীত সংগ্রহ ও প্রাকাশের কাজ করছে।

২. চীন-কাজাখস্তান সাংস্কৃতিক বিনিময়

বেইজিংয়ের ক্লাসরুমে বাজছে কাজাখ সংগীত। কাজাখ ডোমব্রা বাজাচ্ছে চীনা শিক্ষার্থীরা।

চীন এবং কাজাখস্তানের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে কাজ করছেন দু’দেশের সংগিতজ্ঞ এবং সংগীত শিক্ষার্থীরা। যা এই দু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করছে।

বেইজিংয়ের চায়না ন্যাশনাল চিলড্রেন সেন্টারে দু’বছর আগে খোলা হয়েছে কাজাখ সংগীতের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ ক্লাস, যেখানে অংশ নিয়ে কাজাখ ডোমব্রা শিখছেন ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা।

এই প্রোগ্রামের একজন প্রশিক্ষক লিউ হুই, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডোমব্রা শেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বেইজিংয়ের চাইনিজ অর্কেস্ট্রা দলে একজন পারফর্মার হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শুধু বেইজিংয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, অন্য প্রদেশ থেকেও অনেকে এসেছেন কাজাখ ডোমব্রা শেখার জন্য।

লিউ তার বাদ্যযন্ত্র দক্ষতার প্রথম দিকে শিখেছিলেন পিপা বাজানো। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই বাজানো শুরু করেন ঐতিহ্যবাহী এই চীনা বাদ্যযন্ত্র। তার চমৎকার একাডেমিক পারফরম্যান্সের কারণে ১৩ বছর বয়সেই সুযোগ পান ডোমব্রা অধ্যয়নের জন্য ।

লিউ হুই বিশ্বাস করেন যে একই সময়ে পিপা এবং ডোমব্রা শেখা ছিল সংগীত ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।

‘ঠিক যেভাবে পিপা বাজানোর কৌশল এবং পদ্ধতি আমাকে ডোমব্রা শিখতে সাহায্য করেছে ঠিক সেভাবে কাজাখ ডোমব্রার অভিজ্ঞতা আমার ব্যাক্তিসত্তার বিকাশ ও নান্দনিকবোধকে সমৃদ্ধ করেছে’।

লিউয়ের মতই একজন কাজাখ সংগীতজ্ঞ মুরাল বিমুরাত। ২০০৯ সালে যখন তিনি চীনের মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন তিনি ডোমব্রা প্রশিক্ষণের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদের একজন ছিলেন। এখন তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক।

মুরাল তার দক্ষতা উন্নত করতে কাজাখস্তানের একটি সংগীত একাডেমিতেও অধ্যয়ন করেছেন। এ সময় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে স্থানীয় ছাত্রদের সাথে।

বেইজিংয়ের অর্কেস্ট্রা দলের প্রধান লি চ্যাংজুনের মতে, চীনা এবং কাজাখ সংগীত শিল্পীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক এ সম্পর্ক উন্নয়ন, দুই দেশের সংস্কৃতিক বিনিময়ে আরও সমৃদ্ধ করবে।

৩. সিল্ক রোডের গৌরবের সাক্ষী সি’আন

৩ হাজার বছরের পুরানো ঐতিহ্যের শহর সি’আন। প্রাচীন সিল্ক রোডের গৌরব, বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের রাজধানী শহর সি’আন। এ শহর ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বাণিজ্য পথে প্রাচীন চীন এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রত্যক্ষ করে আসছে।

৩ হাজার বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই সি’আন চীনা ইতিহাসে ১৩টি রাজবংশের আমলে জাতীয় রাজধানী হিসেবে কাজ করে। এটিই সেই জায়গা, যেখানে পশ্চিম হান রাজবংশের একজন দূত চাং ছিয়ান মধ্য এশিয়া হয়ে পশ্চিম অঞ্চলে যাত্রা শুরু করেন। এ অভিযান শেষ পর্যন্ত সিল্ক রোড খোলার দিকে নিয়ে যায়।

সিল্ক রোডের সূচনা বিন্দু হিসেবে সি’আনে মোট ১৫৯টি জাদুঘর আছে।

থাং রাজবংশের নান্দনিকতাসহ তিন রঙা চকচকে মাটিরপাত্রগুলো প্রদর্শনীর একটি প্রধান অংশ।তিন রঙের চকচকে মাটির পাত্র। সাদা মাটি দিয়ে তৈরি এবং চকচকে একটি স্তর দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়, যার মধ্যে হলুদ, সবুজ এবং সাদা রঙ সবচেয়ে প্রাধান্য পায়। থাং রাজবংশের সময় এটি খুবই জনপ্রিয় ছিল।

বছরের পর বছর ধরে, সি’আন কেবল সিল্ক রোড ধরে বাণিজ্যের মাধ্যমে আনা দুর্লভ রত্নই সঞ্চয় করে না, বরং পূর্ব এবং পশ্চিম অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও প্রত্যক্ষ করে।

সি’আন উত্তর-পশ্চিম চীনের বিজ্ঞান ও শিক্ষা কেন্দ্রও হিসেবেও পরিচিত। প্রাচীন সিল্ক রোডের সূচনা বিন্দু হিসাবে, চীন ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা গভীরতর করতে এবং এই অঞ্চলে অভিন্ন উন্নয়নের প্রচারে সি’আনের অনন্য সাংস্কৃতিক ও ভূতাত্ত্বিক সুবিধা বেশ সহায়ক। শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমমুখী গেটওয়ে এবং নতুন সিল্ক রোডের একটি ট্রানজিট হাব হিসেবে কাজ করে।

আর হাজারো বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী এ শহরেই ১৮ ও ১৯ মে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সভাপতিত্বে এই শীর্ষ সম্মেলনে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং চীনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।

------------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশিম, হোসনে মোবারক সৌরভ

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn