বাংলা

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৯: বেইজিংয়ে শতবর্ষ-স্মারক শিশু-চলচ্চিত্র উৎসব

CMGPublished: 2023-03-25 18:47:52
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

শিশুদের চলচ্চিত্র শিল্পের শতবর্ষী বিকাশের স্মরণে ১৫তম চীন আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেল রোববার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রসহ সেরা শিশু অভিনেতার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় শিশুদের চলচ্চিত্র নির্মাণ শিল্পের ভবিষ্যৎ বিকাশের প্রত্যাশা প্রকাশ করেন লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীরা। চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চতুর্থ প্রজন্মের একজন শীর্ষস্থানীয় নারী পরিচালক ওয়াং হাও ওয়েই উৎসবের শিল্প পরামর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, চলচ্চিত্রগুলো দেখার সময়, শিশুরা জীবন সম্পর্কে শিখতে পারে, সমাজকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং বিশ্বকে জানতে পারে। আমি বিশ্বাস করি , চীনা চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরা শিশুদের চমৎকার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাবেন।

অনুষ্ঠানে চিলড্রেনস ফিল্ম স্টাডি সিরিজের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দ্বিবার্ষিক ইভেন্টটি ১৯৮৯ সাল থেকে চালু হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০০টি শিশু চলচ্চিত্র এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।

২. আধুনিক প্রযুক্তি সংরক্ষণ করছে প্রাচীন নির্দশন

চীনের কানসু প্রদেশে অবস্থিত প্রাচীন তুনহুয়াং গুহাগুলোর সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করতে কাজে লাগানো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এখানে একটি ডিজিটাল সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হয়েছে যা প্রাচীন ঐহিত্যের অধ্যয়ন ও গবেষণা সহজ করেছে। 'ডিজিটাল তুনহাং' নামের একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে ঘুরে আসা যায় হাজার বছর আগের ইতিহাসে।

তুনহুয়াং গুহাগুলো 'থাউজেন্ড গ্রোটেস' নামেও পরিচিত। গেল বছরের ডিসেম্বরে চালু হওয়া 'ডিজিটাল তুনহুয়াং নামের এই প্ল্যাটফর্মটি সারা বিশ্বে এরই মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে। এর ব্যবহারকারীরা ছয় হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ঐহিত্য সম্পর্কে জানতে পারছেন। বিশেষ করে বিখ্যাত বৌদ্ধ খোদাই এবং ঐহিত্যবাহী শিল্প নজর কেড়েছে সবার।

সম্প্রতি চীনের কানসু প্রদেশে অবস্থিত তুনহুয়াং একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যবহারকারীরা ৬ হাজারেরও বেশি ফিচার ডাউনলোড করতে পারবেন।

তুনহুয়াং একাডেমির গবেষকরা প্ল্যাটফর্মটি চালু করতে চাইনিজ টেক জায়ান্ট টেনসেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছে। একাডেমির ডিন সু বোমিন এই উদ্যোগের বড় সফলতা প্রত্যাশা করে বলেন, 'টেনসেন্ট আমাদের ভালো সহযোগিতা করেছে। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে যেখানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও প্রবেশ করা যায় এবং সহজে কাজ করা যায়। এ প্রযুক্তি প্রাচীন ছবিগুলোকে যথাসম্ভব সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছে।'

ডিজিটাল অ্যাক্সেস দেয়ার পাশাপাশি, তুনহুয়াং একাডেমি গুহাগুলোতে সরাসরি ভ্রমণ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।

টেনসেন্টের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা লিউ সিয়াওলান নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, 'টেনসেন্ট এবং তুনহুয়াং একাডেমি পাঁচ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেছে। প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহার করে প্রাচীন সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা আরও বেশি মানুষকে সরাসরি প্রাচীন ঐতিহ্যের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটা একরকম ডিজিটালাইজড অনলাইন জাদুঘর।

ডিজিটাল বিশ্বকে আরও বৃহত্তর দর্শকদের কাছে তুলে করার চেষ্টা করছে তুনহুয়াং একাডেমি।

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

কাও শি: রূঢ় জীবন-বাস্তবতার রূপকার এক যোদ্ধা-কবি

কবির জীবন মানেই দুঃখের জীবন এটা অনেকে মনে করলেও কোনো কোনো সৌভাগ্যবান কবি আছেন যারা পেশাগত ও বৈষয়িক জীবনেও উন্নতি করেন আবার কবিতাও ভালো লেখেন। এমনি একজন সৌভাগ্যবান কবি হলেন কাও শি। তিনি সামরিক অফিসার হিসেবে যেমন সফল ক্যারিয়ার গড়েছিলেন তেমনি কবিতা লিখেও জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।

থাং রাজবংশের সমৃদ্ধির যুগে কাও শির জন্ম ৭০৪ খ্রিস্টাব্দে। অনেক পণ্ডিতের ধারণা ৭০২ সালে তার জন্ম হ্যপেই প্রদেশের ছাংচৌ শহরে। তার শৈশব কাটে কুয়াংচৌ শহরে। সেখানে তার বাবা সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। কিশোর বয়সে প্রায় দশ বছর তিনি মধ্য ও দক্ষিণ চীনের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন যা তার উপর বেশ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে চীনের প্রকৃতির সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে। ৭৩১ সালে কাও শি শুয়োফাং শহরে যান এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি খিথান জাতির সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ বিষয়ে তিনি লেখন তার বিখ্যাত কবিতা এ সং অব দ্য ইয়ান কান্ট্রি বা ইয়ান দেশের গান।

যুদ্ধের পর কাও শি সংচৌ শহরে আসেন। এরপর আবার তার ভ্রমণ শুরু হয়। ১০ বছরের ভ্রাম্যমান জীবনে লি পাই, তুফুসহ বিখ্যাত কবিদের সঙ্গে তার দেখা হয়। তার কবিতা লেখাও গতি পায়। কাও শি সীমান্তবর্তী স্থানগুলো সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধে সাফল্যের পরিচয় দেয়ায় তার পদোন্নতি হতে থাকে।

৭৫৫ সালে লুশান বিদ্রোহের সময় সম্রাট কাওশির কৃতিত্বে মুগ্ধ হন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি ছাংদু শহরের প্রধান সামরিক গভর্নর হন।

৭৬৪ সালে তিনি রাজধানীতে আসেন। জীবনের শেষদিনগুলো এখানে কাটান। এ সময় তিনি শাস্তি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন। ৭৬৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ছাংআন শহরে নিজের বাড়িতে কাও শির মৃত্যু হয়।

কাওশির কবিতায় জীবনের রূঢ় বাস্তব মূর্ত হয়েছে কাব্যিক সুষমায়। থাং রাজবংশের কবিদের মধ্যে এখানেই তার অনন্য অবস্থান। কাওশির একটি কবিতার অনুবাদ।

একজন বীণাবাদকের প্রতি বিদায়জ্ঞাপন

মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে থাকা হলুদ মেঘ দিনটিকে আবৃত করেছে

উত্তর বায়ু বয়ে এনেছে তুষার, উড়ে চলে গেছে বুনো হাঁসের দল

ভয় পেও না যদি একা চলতে হয়, চারপাশে না থাকে ভক্তের দল

মনে রেখো, পৃথিবীতে এমন কোনো গুণী নেই, যে তোমার গান ভালো না বাসে।

চীনা প্রকৃতির সৌন্দর্য আর জীবনের চিরন্তন মুহূর্তগুলো ধরে রেখে চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন কাও শি।

----------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, শান্তা মারিয়া, সাজিদ রাজু

কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn