চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৭: বাংলাদেশের দর্শকদের মাতিয়ে গেলেন চীনের শিল্পীরা
চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৭: বাংলাদেশের দর্শকদের মাতিয়ে গেলেন চীনের শিল্পীরা
দুই দিনের পরিবেশনায় বাংলাদেশিদের মাতিয়ে গেলেন চীনের শিল্পীরা। তাদের নাঁচ, গান ও ঐহিত্যবাহী বাজনা হৃদয় ছুঁয়ে যায় দর্শকদের। চীন-বাংলাদেশের মধ্যে সম্প্রীতি জোরদার করতে এ ধরনের কার্যক্রম ভালো ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দু’দেশের বিশিষ্টজনরাও।
সম্প্রতি রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে চীনা দূতাবাসের আয়োজনে মঞ্চায়িত হয় 'চীন-বাংলাদেশ কালচার এন্ড আর্ট নাইট' শিরোনামে প্রথম অনুষ্ঠানটি।
চীনের ইউননান থেকে আসা এ শিল্পীদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে সবাইকে।
এতে অংশ নেন বাংলাদেশী শিল্পীরাও। তাদের নান্দনিক আয়োজনে রীতিমত অবাক হয়ে যান বিদেশী অতিথিরাও।
দর্শক সারিতে থেকে পুরো আয়োজন উপভোগ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, 'এ ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন দু'দেশের মানুষকে আরো বেশি কাছে আনবে। এগিয়ে নেবে উন্নয়নের পথে।'
জমকালো এ আয়োজনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, 'বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে ভালোমানের সংস্কৃতি। এক্ষেত্রে এক হয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ ও চীন।'
মানবিক বাংলাদেশ, রেড ফিশ, কালারফুল ইউননান আয়োজনে মেতে ওঠেন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বিশিষ্ট অতিথি ও দর্শকরা।
এদিকে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামেও নিজেদের পরিবেশনা দেখান চীনের এই সংস্কৃতিকর্মীরা। মন মাতানো আয়োজন ‘হর্স রেসিং’, ‘দি ফ্লোয়িং ক্রিক’ এবং ডিপ ইন দ্যা ফরেস্ট’ এর পরিবেশনা সবার মন ছুঁয়ে যায়।
চিরায়ত চীনা সাহিত্য
কবি ওয়াং ওয়ান: চীনের ক্ল্যাসিক সৌন্দর্য্যের কবি
থাং রাজবংশের সময়কার অন্যতম সেরা কবি ওয়াং ওয়ান। তার জন্ম ৬৯৩ এবং মৃত্যু ৭৫১ খ্রিস্টাব্দে। তিনি চীনের অপরূপ সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তার কবিতায় তুলে ধরার জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি থাং রাজত্বের উত্তর অংশে বাস করতেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি রাজত্বের দক্ষিণ দিকেও ভ্রমণ করেছেন।
ইয়াংজি নদীর দক্ষিণে তিনি ভ্রমণ করে সেখানকার পর্বতমালা, নদী, জলাশয়, হ্রদের সৌন্দর্য তার কবিতায় মূর্ত করে তোলেন। চিয়াংনান বা দক্ষিণ দিকের ভ্রমণ তার লেখার অনেক অংশ জুড়ে আছে। দক্ষিণ চীনের সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য অমর হয়েছে তার কবিতায়।
তিনি অনেক কবিতা লিখলেও মহাকালের হাতে মাত্র দশটি কবিতা টিকে আছে। এগুলো ছুয়ান থাং শি বা সম্পূর্ণ থাং কবিতা নামের বইতে সংগৃহীত হয়েছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত লেখা হলো ‘উত্তর পাহাড় পরিভ্রমণের পথে’ শিরোনামে একটি কবিতা। বিশেষ করে এই কবিতার
‘গতরাতে জন্ম নেয়া আলো নিয়ে এসেছে সূর্য
এই পংক্তি চীনা সাহিত্যের পাঠকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
ওয়াং ওয়েনের কবিতা পরবর্তিকালের কবিদের উপর বেশ প্রভাব বিস্তার করে এর ক্ল্যাসিক সৌন্দর্যের কারণে। শ্রোতাদের জন্য তুলে ধরছি ওয়াং ওয়েনের অমর কবিতা
উত্তর পাহাড় পরিভ্রমণের পথে
সুউচ্চ সবুজ পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলে আমার নৌকা
বয়ে চলে নদীর নীল জল কেটে
পূর্ণ জোয়ারে তীরভূমি আরও প্রশস্ত দেখায়
মৃদু বাতাসে আরামে দোলে পাল
গতরাতে জন্ম নেয়া আলো নিয়ে এসেছে সূর্য
বিবর্ণ পুরনো বছরকে অধিকার করছে নতুন বসন্ত
শেষ পর্যন্ত কোথায় আমি আমার বার্তা পাঠাতে পারি?
বুনো রাজহাঁস পশ্চিমে উড়ে গিয়ে আমার ঘরে খবর দিও বন্ধু।
চীনের চিরায়ত প্রকৃতির শান্ত রূপ বর্ণনা্র মাধ্যমে থাং রাজবংশের সোনালি কবিতার সারিতে অমর হয়ে আছে এই কবিতাটি ।
----------------------------------------------------------------------
প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি, শান্তা মারিয়া
কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল
প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।