বাংলা

হানফু ঐতিহ্যে ফিরছে চীন

CMGPublished: 2023-02-25 18:43:10
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য- ৫

হানফু ঐতিহ্যে ফিরছে চীন

নিজের পরিচয় খুঁজে নেয়ার অন্যতম বাহক পোশাক। কথিত আছে, পোশাক ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। কোনো মানুষের বাহ্যিক পোশাক অনেক ক্ষেত্রে তার ভিতরের রুচিরই প্রকাশ।

হানফু এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী চীনা পোশাক। ৩০০ বছর আগে বিলুপ্ত প্রায় এ পোশাকের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। মূলত চীনে একটি পোশাক বিপ্লব ঘটছে – লোকেরা যা পরিধান করছে তার পরিচয় খুঁজছে বা জানতে চাচ্ছে।

ক্রমবিকাশমান চীনা শৈলীর সবচেয়ে আইকনিক পোশাক এই হানফু। অপরিহার্য উপাদান হিসেবে, হানফু আজকে চীনের প্রায় সর্বত্র রয়েছে। এমনকি থিম পার্কেও। তরুণদের পাশাপাশি বয়স্করাও হানফুর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, সমাজের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তন হচ্ছে। এই ঐতিহ্যগত শিল্পটি আবার এখন শক্তিতে ফিরছে বলে মনে করা হয়। বর্তমানে ২০ মিলিয়নেরও বেশি হানফু উৎসাহী আছে। ২০২২ সালে, হানফুর বাজারের আকার ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এটি চীনা পোশাক খাতের আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। তবু গত ৬ বছরে ৬০ বার বৃদ্ধি পাওয়া ইতিবাচক ব্যাপার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এই খাতে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

চিরায়ত চীনা সাহিত্য

লি শাংইন: শিরোনামহীন কবিতার কবি

থাং রাজবংশের সময়কার কবিদের মধ্যে লি শাংইন এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তার বিশেষ স্টাইল হলো শিরোনামহীন কবিতা। লি শাংইন থাং রাজবংশের শেষ দিকের কবি। তার জন্মসাল এবং মৃত্যুসাল নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ পন্ডিতের মতে ৮১৩ সালে লি শাংইনের জন্ম এবং ৮৫৮ সালে মৃত্যু। সে সময় থাং সাম্রাজ্য পতনের দিকে ছিল। চারিদিকে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে রাজদরবারে ইউনাখ বা খোজাদের প্রতিপত্তি যেমন ছিল তেমনি তারা প্রায়শই ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতেন। লি শাংইন তার ৪৫ বছরের জীবনে ছয়জন সম্রাটের শাসন দেখেছেন।

লি শাংইন দরবারে চাকরি করলেও কখনও উঁচু পদে যেতে পারেননি। এটা তার স্পষ্টবাদিতার জন্যও হতে পারে অথবা লিউ ফেন নামে একজন ইউনাখের সঙ্গে বন্ধুত্বের জন্যও হতে পারে।

লি থাং রাজবংশের কবিদের মধ্যে বেশ উঁচু স্থান পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্টাইলে কবিতা লিখেছেন। তার শিরোনামহীন স্টাইল কবিতায় এক নতুন মাত্রা নিয়ে আসে। তিনি প্রেম ও প্রকৃতির বর্ণনামূলক কবিতায় নতুন সৌন্দর্য ও জীবনের স্পন্দন নিয়ে আসেন। তিনি সাহিত্যিক সৌন্দর্য সৃষ্টিকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। ছন্দ, মাত্রা, উপমা ইত্যাদি ব্যবহারে তিনি সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। কখনও কখনও বলা হয়েছে তিনি আরোপিতভাবেও কবিতায় সুষমা সৃষ্টি করেছেন।

লি শাংইনের একটি বিখ্যাত কবিতা এখানে শ্রোতাদের শোনাচ্ছি। কবিতাটির শিরোনাম

অনামিকার প্রতি

একসঙ্গে থাকা কঠিন, বিচ্ছেদ কঠিনতর

তুষারপাতে ফুল ঝরে যায় কিন্তু স্মৃতি অমলিন

যেমন, বসন্তের রেশমপোকা তার মৃত্যু অবধি

প্রেমকাতর হৃদয় থেকে রেশম তৈরি করে।

অশ্রুর মতো মোমবাতি গলে যায়

সময় চলে যায় আরও দ্রুত

ভোরবেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে করি

আয়নায় দেখা তোমার কালো চুল ধূসর হয়ে যাচ্ছে সময় প্রবাহে।

জোছনায় আমি তাকিয়ে আছি বিরহী চাঁদের দিকে

আমার প্রিয়তমা একা শীতল রাতের নিঃসঙ্গ শয্যায়

তিনপরীর পাহাড় খুব দূরের পথ তো নয়

নীলপাখি উড়ে গিয়ে তোমায় দেখে আসতে পারে

আর আমাকে এনে দিতে পারে প্রিয়ার সংবাদ।

কালের কঠিন স্পর্শ এড়িয়ে লি শাংইনের কিছু কবিতা বর্তমান কাল অবধি পৌছেছে। তার কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায়। বর্তমানে পাশ্চাত্যের কয়েকটি গানেও ব্যবহৃত হয়েছে তার কবিতার পংক্তি।

লি শাংইন তার কবিতায় সৌন্দর্য ও প্রেমের যে অনন্য জগত সৃষ্টি করেছেন তা চিরায়ত চীনা সাহিত্যে তাকে অমর করেছে।

----------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, শান্তা মারিয়া

কবিতা অনুবাদ: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn