তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৫
‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণের অগ্রযাত্রা।
১. তরুণদের জন্য কাজের সুযোগ
বর্তমান প্রজন্মকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় কাজের সুযোগ করে দিতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির বিভিন্ন স্থানে তরুণদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত থাকছে আমার করা একটি প্রতিবেদনে।
নতুন প্রজন্মের দোরগোড়ায় কাজ পোঁছে দেয়া এবং আকর্ষণীয় পেশা বেছে নেয়ার সুযোগ করে দিতে চীনের কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি করেছে দেশটির সরকার।
একটি ব্যবসা বা যেকোনো কাজ শুরু করার জন্য উন্নত পরিবেশ অনেক বড় সহায়ক, যা তরুণদের নিজ এলাকায় কাজ করার জন্য আকৃষ্ট করে। চীন সরকার মনে করে, নিজের শহর বা গ্রামে কাজের ভালো পরিবেশ থাকলে তরুণপ্রজন্ম নিজ এলাকাতেই তাদের মেধা ও শ্রম কাজে লাগাতে আগ্রহবোধ করবে।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে উত্তর চীনের হ্যপেই প্রদেশের হেচিয়ান সিটিতে চারটি ব্যবসায়িক ইনকিউবেটর ঘাঁটি স্থাপন করেছে স্থানীয় সরকার। এর মাধ্যমে তরুণদের জন্য শূন্য খরচে ব্যবসা শুরু করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস ও ব্যাপক পরিষেবা প্রদান করা সহজ হবে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশে ফসল চাষে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। সুইনিং কাউন্টির বাসিন্দা লি সিনলিং এই প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হচ্ছেন। বসন্তের ফসল কাটাতে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন লি।
কৃষি ড্রোন উন্নত প্রযুক্তির একটি অংশ। চীনে এর ব্যবহার বেড়েছে। লি কৃষি ড্রোন পরিচালনায় বেশ ভালো। তিনি দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণ প্যানেলে ফ্লাইটের গতি, উচ্চতা এবং দিকনির্দেশ সেট করতে পারেন। তাই এই কাজটিকে তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
গেল বছর ২শ’ হেক্টরের বেশি কৃষি জমিতে সার প্রয়োগ করতে কৃষি ড্রোন ব্যবহার করেন লি। অন্যান্য কৃষি সেবার সঙ্গে লি প্রায় ২৯ হাজার মার্কিন ডলার উপার্জন করেছেন। লিয়ের এমন সাফল্যের কথা জেনে অনুপ্রাণিত হয়ে, তার গ্রামের প্রায় ১ শ’ পরিবার একটি করে কৃষি ড্রোন কিনেছে এবং তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ও অন্যদের সাহায্য করছে।
‘যখন আমি এই পেশায় যোগ দিয়েছিলাম, আমি দিনে ১৩ হেক্টর থেকে ২০ হেক্টর জমিতে সার প্রয়োগ করতে পারতাম, যা প্রায় ১৪৭ মার্কিন ডলার , আমার জন্য এটা সত্যিই উচ্চ আয়।‘
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের ইয়ংফেং কাউন্টিতে, স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত জৈব শাকসবজি এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ প্রক্রিয়াকরণের জন্য উৎপাদন ক্ষেত্র বৃদ্ধি করেছে স্থানীয় সরকার, যা বাসিন্দাদের জন্য আরও কাজের সুযোগ তৈরি করেছে।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. দ্য ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল এডুকেশন কনফারেন্স
স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। যেহেতু প্ল্যাটফর্মটি অনেক তরুণ তরুণীরা ফোলো করে তাই গত বছরের মার্চের ২২ তারিখ থেকে কর্মসংস্থান পরিষেবা শুরু করেছে স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না। আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রতিবেদনে থাকছে বিস্তারিত।
তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র খুজে দিতে কাজ করছে চীনা প্ল্যাটফর্ম স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না। এটি অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু করে ২০২২ সালের মার্চের ২৮ তারিখ।
ডিজিটাল রূপান্তর এবং শিক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্য ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল এডুকেশন কনফারেন্স। অনুষ্ঠানটি চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও চাইনিজ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো যৌথভাবে আয়োজন করে। এতে ১৩০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধি অনলাইন এবং অফলাইনে যুক্ত ছিলেন। কনফারেন্সটিতে আধুনিক শিক্ষার রূপান্তর ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসময় স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না কীভাবে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এ সম্পর্কে বক্তারা বিভিন্ন তথ্য জানান।
কনফারেন্সে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না হলো বুহুমূখী এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার। বর্তমানে এটি প্রাইমারি শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ২ শ’টিরও বেশি দেশে কাজ করছে।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং তথ্যায়ন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সু হুয়া বলেন, ন্যাশনাল ইয়ুথ রীডিং এবং সোশ্যাল ক্লাসরুম নিয়ে বিশেষ কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা আছে সরকারের।
‘বিভিন্ন শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে আমরা আমাদের প্ল্যাটফর্মটিকে আগের থেকে সাত গুণ আপগ্রেড করেছি। আমরা চাই শিক্ষার আধুনিকায়নের প্রভাব যেনো শুধু স্কুলের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে, এটি যেনো আমাদের সারাজীবনের চলার পাথেয় হয়ে থাকে।’
স্মার্ট এডুকেশন অব চায়না অনলাইন প্যাটফর্মে নিয়মিত কাজ করায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত এই পেজের ভিউ ৬৭০ কোটি ছাড়িয়েছে।
প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
৩. গানের মাধ্যমে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছে তরুণরা শিল্পীরা
চীনে মহামারির বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর সঙ্গীতাঙ্গনকে জমজমাট করতে তরুণ শিল্পীরা রাজধানী বেইজিংয়ে লাইভ গানের কনসার্ট করছেন। শহরের বিভিন্ন স্পটে গান পরিবেশন করে দর্শকদের বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। পাশাপাশি আগের মতোই স্টুডিওগুলোতে চলছে নতুন গান তৈরির ব্যস্ততা। এসবে তরুণ শিল্পীদের সম্পৃক্ততাই বেশি।
মহামারির বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে চীনের সাংস্কৃতিক জগৎ। বেইজিংয়ের তরুণ তরুণীদের কাছে ব্যান্ড মিউজিকের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এতদিন মহামারির বিধিনিষেধে তারা সরাসরি কনসার্টে অংশ নিতে পারেনি। এখন শুরু হয়েছে লাইভ পরিবেশনা। সেখানে দর্শক মাতাচ্ছে চীনের মিউজিক ব্যান্ডগুলো।
চাং চিনছান, ডাস্ক ডন ক্লাবের সত্ত্বাধিকারী
‘রিথানের এই ক্লাবটি আমাদের জন্য নতুন স্থান। করোনা প্যানডেমিকের কারণে আগের ভেন্যুটি ২০২০ সালের মে মাসে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের এপ্রিলে আমরা নতুন ভেন্যুতে অনাড়ম্বরভাবে শুরু করি। কিন্তু এর তিনদিন পরেই আবার মহামারীর প্রকোপ বাড়ে। ফলে আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। তারপরও আমরা কোনভাবে কাজ চালিয়ে যাই। এখানে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেছি, বিশ্বকাপের সময় লাইভ স্ট্রিমিং করেছি। মূলত চেয়েছি তরুণদের ধরে রাখতে। এখন তো উৎসবের মৌসুম চলছে। আমরা অনেক অপেক্ষা করেছি। শেষ পর্যন্ত ভালো সময় এসেছে।’
ডাস্ক ডন ক্লাব হলো শহরের ব্যান্ডগুলোর জন্য জমজমাট একটা জায়গা। গেল তিন বছরে কোভিডের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে সুদিন ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিল্পীরাও আবারো শ্রোতা-দর্শকদের সামনে লাইভ পারফরমেন্সের আশা করছেন । তাই অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে যাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।
ডাস্ক ডন ক্লাবের মতো বেইজিংয়ের অন্যান্য মিউজিক ভেন্যুও জমে উঠছে। তরুণ তরুণীরা আবার মেতে উঠছে মিউজিক ব্যান্ডগুলোর লাইভ পরিবেশনায়।
প্রতিবেদকঃ শান্তা মারিয়া
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী