জেলা শহরগুলো এখন কালচারালি, স্যোশালি মুমূর্ষু : আবুল মোমেন
আপন আলোয় ৮৫তম পর্বে অতিথি সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন
এক.
বাংলাদেশ আসলে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে, অনেক স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মতো আমাদের দেশটিও এক নগরীর দেশে পরিণত হয়েছে। ফলে কেবল যে গণমাধ্যমের সুযোগ সমর্থন-পাওয়া, সুযোগ পাওয়া তা নয়, পৃষ্ঠপোষকতার জায়গাটাও ঢাকা-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
অতীতে চট্টগ্রামে অনেক শিল্প-কারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের, সরকারি অনেক দপ্তরের হেডঅফিস ছিল। যে কারণে অনেক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন যেহেতু দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্ত ব্যাপারটা ঢাকা কেন্দ্রিক হয়েছে, ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ তাদের কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায় চলে গেছে। ফলে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিশেষ করে প্রায়োগিক শিল্প চর্চায় ভাটা পড়তে বাধ্য। এটা শুধু চট্টগ্রামে নয়, আসলে সারা বাংলাদেশে জেলা শহরগুলো এখন কালচারালি, স্যোশালি ডায়িং সিটিজে পরিণত হয়েছে, মুমূর্ষ নগরীতে পরিণত হয়েছে।
ফুলকির শিক্ষার্থী ও সর্বাধ্যক্ষ শীলা মোমেনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা আবুল মোমেন
দুই.
আগেকার দিনে বড় বড় সাহিত্যিকেরা নিজেদের (চট্টগ্রাম) জেলাতেই থেকেছেন। আবুল ফজল থাকলেন, মাহবুব আলম চৌধুরী এখানে থেকে গেলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী- এরা তো সবাই বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। সুচরিত চৌধুরী উঠে এলেন। এখান থেকে তারা জাতীয় পর্যায়ে লিখেছেন এবং পরিচিতি পেয়েছেন। এটা ৫০ ও ৬০-এর দশকে ভালোভাবে ছিল।
চট্টগ্রাম থেকে সীমান্ত পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে- যেখানে দুই বাংলার লেখকরা লিখতেন। ১৯৫০-এর ঘটনাবলীর পর দাঙ্গাবিরোধী যে সংখ্যাটা বেরিয়েছিল সেটা সম্পর্কে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল হালদার এরা বলেছেন যে এরকম কোনো দাঙ্গাবিরোধী প্রয়াস পশ্চিমবঙ্গেও হয়নি। এ রকম উচ্চমানের কাজ চট্টগ্রামে হয়েছে। ফলে সেদিক থেকে চট্টগ্রাম স্বাবলম্বী ছিল। লেখালেখির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের যোগাযোগটা কলকাতার সাথে ঢাকার চেয়েও বেশি ছিল।