বাংলা

আপন আলোয়-৮৪

cmgPublished: 2022-09-02 20:42:44
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

এ পর্বে অন্তরঙ্গ আলাপনে অতিথি বাতিঘরের প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ

চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য

মিড-অটাম ফেস্টিভ্যালকে বরণ করে নিতে চলছে জোর প্রস্তুতি

মিড-অটাম ফেস্টিভ্যালের আর মাত্র ক’দিন বাকি। উৎসবকে বরণ করে নিতে এরই মধ্যে প্রস্তুত গোটা চীন।

মধ্য শরৎ উৎসব বা চোং ছিউ চিয়ে মূলত ফসল তোলার উৎসব। এ সময় হেমন্তের নতুন ফসল ওঠে কৃষকের ঘরে। চীনারা এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবারের সবাই একসঙ্গে হয়। বাহারি সুস্বাদু খাবারের আয়োজনের পাশাপাশি প্রার্থনা করে সমৃদ্ধ জীবনের জন্য।

প্রতিবছরের মতো এবারো ১০ সেপ্টেম্বর মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল গালা সম্প্রচার করবে চায়না মিডিয়া গ্রুপ CMG। গালা অনুষ্ঠানটি মধ্য-শরৎ উৎসবের পূর্ণিমা রাতে বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারিত হবে।

পূর্ব চীনের সুচোও শহর। এটি একটি স্থান যেখানে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমারোহ রয়েছে। এই সুচোও তার ঐতিহাসিক উদ্যান, কারুশিল্প,ফিংতন বাদ্যযন্ত্র এবং নানা শিল্পের জন্য সুপরিচিত। এ সবের মধ্যে গালায় তিনটি ঐতিহ্যবাহী উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই আসন্ন গালা উপলক্ষে চিয়াংসু প্রদেশের চাংচিয়াকং এবং সুচোওয়ের বিভিন্ন স্থানের চিত্রধারণ করা হয়েছে। এখানকার মুতু একটি প্রাচীন শহর, যার রয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি সময়ের পুরানো ইতিহাস।

এবারের গালায় তারকা শিল্পীদের তিনটি ক্লাসিক গান, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিপাও পরিহিত ফ্যাশন শো এবং অভিনয় পরিবেশিত হবে।

উৎসবের পুরানো ঐতিহ্য, স্মৃতিচারণ, নাচ, অপেরা আর্ট, মিউজিক্যাল এবং স্কেচ কমেডির মতো বিচিত্র পারফরম্যান্স এ গালায় মঞ্চস্থ হওয়ার কথা রয়েছে। চীনা মূল ভূখণ্ড, হংকং, ম্যাকাও এবং তাইওয়ানের তারকা শিল্পীরা এতে অংশ নেবেন।

চিরায়ত চীনা সাহিত্য

তু মু: চিরায়ত ছন্দের কবি

থাং রাজবংশের কবিদের মধ্যে অন্যতম সেরা ছিলেন তু মু। ইংরেজিতে তার নামের বানান লেখা হয় Du Mu. তুমু বিখ্যাত তার গীতল কবিতা এবং রোমান্টিক চতুর্পদী কবিতার জন্য। তিনি ছিলেন একাধারে ক্যালিগ্রাফার, কবি ও রাজনীতিবিদ।

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো চীনে প্রাচীনকাল থেকেই ক্যালিগ্রাফারদের রয়েছে বিশেষ সম্মান। ক্যালিগ্রাফিকে চীনা ভাষায় বলা হয় শু ফা shu fa । এটা একটা বিশেষ শিল্প। এটা বিশেষ ধরনের তুলি ও কালি ব্যবহার করে লেখা হয়। যারা ক্যালিগ্রাফির চর্চা করেন তারা উচ্চমানের শিল্পীর মর্যাদা পান। অনেক প্রাচীন ক্যালিগ্রাফির নমুনা চীনে সংরক্ষিত রয়েছে। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস ৬টি বিষয়কে শিল্প বলে অভিহিত করেছেন। এই ছয়টি শিল্প হলো আচরণ বা আদবকায়দা

তুফু এবং লি পাই কবিদ্বয় যেমন বন্ধু ছিলেন এবং তাদের নাম প্রায়শই একত্রে বলা হয়। তেমনি তু মু এবং কবি লি শাংইনের নামও একসঙ্গে বলা হয়। লি পাই এবং তুফু কে বলা হয় মহান লি তু এবং লি শাংইন ও তুমু কে বলা হয় ছোট লি তু। থাং রাজধানী চাং আনের একটি অভিজাত পরিবারে তু মুর জন্ম হয় ৮০৩ সালে। তারা ধন্যাঢ্য বংশ হলেও তখন তাদের অবস্থা ছিল ক্ষয়িষ্ণু। তার পিতামহ তু ইয়ু থাং দরবারের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি থাং রাজবংশের কোষগ্রন্থ থংডিয়ান এর লেখক ছিলেন।

তুমু ৮২৮ সালে ২৫ বছর বয়সে সরকারী চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেন এবং একজন আমলা হিসেবে নিজের পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি ছোট ছোট পদে চাকরি করে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে থাকেন। পাশাপাশি কবিতা লেখাও চলতে থাকে। বিভিন্ন জেলায় তিনি চাকরি করেছেন। মাঝে মধ্যে বিতর্কিত কিছু রাজনৈতিক বিষয়েও জড়িয়ে পড়েছেন। তবে তিনি কখনও প্রশাসনে খুব উঁচু পদে যেতে পারেননি। এটার কারণ ছিল সম্ভবত তিনি দরবারে রাজার পদলেহনের চেয়ে স্পষ্টকথা বলতে ভালোবাসতেন। এছাড়া দরবারের কূটচালেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারতেন না। ৮৩৭ সালে তিনি তার বাসস্থান ইয়াংচোও শহরে ফিরে আসেন। তিনি এখানে এসেছিলেন ছোট ভাইয়ের সেবা যত্ন করতে। তার ছোট ভাই তু ই অসুস্থ ছিলেন এবং অন্ধ হয়ে যান। ভাইকে নিয়ে তিনি আবার তার কর্মস্থল সুয়ানচোওতে ফিরে আসেন। তিনি বিভিন্ন দরিদ্র জেলার প্রশাসক হিসেবে কাজ করেছেন যেগুলো কোনটাকেই খুব সন্তোষজনক পদ বলা যায় না। পেশাগত জীবনে উন্নতি না হওয়ায় তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করতো। এগুলো তার কবিতাতেও ছাপ ফেলেছে। তিনি অনেক কবিতাতেই হতাশা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান, মানব জীবনের অক্ষমতা কবিতায় তুলে ধরেছেন। তবে তার প্রেমের কবিতাগুলো এ সময় জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।

চাকরিরত অবস্থাতেই ৮৫২ সালে তু মু মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রাচীন চীনা গদ্য রচনা শি ফুতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি একটু চাঞ্চল্যকর, গীতল চতুর্পদী কবিতার জন্য খ্যাতি পান। এগুলো কোন ঐতিহাসিক স্থান, ঘটনা বা প্রেম বিষয়ক। ছন্দ ও শব্দের নানা রকম খেলার জন্য খ্যাতি ছিল তার। তিনি শুধু ছোট ছোট চারলাইনের কবিতাই নয়, বড় বর্ণনামূলক কবিতাও লিখেছেন।

তু মুর একটি বিখ্যাত কবিতা হলো ছিংমিং ফেস্টিভ্যাল বা ছিংমিং চিয়ে। এটি চার পংক্তির কবিতা। এখানে ছিংমিং দিবস বিষয়ে লেখা হয়েছে। এখানে চীনের ছিং মিং দিবস বিষয়ে কিছু কথা বলি। ছিংমিং দিবস হচ্ছে চীনের একটি লোকজ উৎসব। এটি সমাধি পরিস্কার করণ উৎসব। চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো ছিং মিং ফেস্টিভ্যাল। এদিন পূর্ব প্রজন্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। এটি সাধারণত এপ্রিলের ৪, ৫ বা ৬ তারিখে হয়ে থাকে। এই দিনে অনেকে মৃত আত্মীয় স্বজনের সমাধিতে যান। সমাধির আগাছা ও ধুলাবালি পরিস্কার করেন। অনেকে সমাধিতে কাগজের তৈরি টাকার মতো ছবিযুক্ত কাগজ, খাদ্য সামগ্রী ইত্যাদিও উৎসর্গ করেন। শিশু ও তরুণদের মনে পরিবারের গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ফেস্টিভ্যাল। এ সময় পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়। এটি মূলত চীনের লোকজ ধর্মের একটি উৎসব। এই সময় চীনের অনেক মানুষ নিজের গ্রামে তার বাবা মা অথবা দাদাদাদী, নানান নানীর কবর পরিস্কার করার জন্য এবং জীবিত বয়োবৃদ্ধ মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফিরে আসে। এই ফিরে আসাকে নিয়েই তু মুর কবিতা ছিংমিং চিয়ে।

অন্তরঙ্গ আলাপন

পাঠক-লেখক-প্রকাশক ও সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনকেন্দ্র বাতিঘর: দীপঙ্কর দাশ

আপন আলোর ৮৪তম পর্বের অতিথি বাতিঘরের প্রকাশক ও স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ

এক.

একসময় চট্টগ্রামে বইয়ের বড় দোকান ছিল কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি। ঢাকা, সিলেট ও করাচিতে এটির শাখা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি এখনো আছে, তবে নিষ্প্রাণ বলা যায়।

চট্টগ্রামে বইঘরের মতো প্রতিষ্ঠান ছিল। বইঘর কিন্তু দুই বাংলার একটা সেরা প্রকাশনা সংস্থা। সেখান থেকে শামসুর রাহমানের বই যেমন বেরিয়েছে, সৈয়দ শামসুল হকের বই বেরিয়েছে, কলকাতা থেকে লীলা মজুমদারের বই বের হয়েছে, বঙ্কিম রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে। নান্দনিক বই ছিল ওগুলো; ডিজাইন করেছেন খালেদ চৌধুরী। পুর্ণেন্দু পত্রীর মতো শিল্পী কাজ করেছেন; কাইয়ূম চৌধুরী চট্টগ্রামে গিয়ে কাজ করেছেন। ফলে চট্টগ্রামের একটা ঐতিহ্য ছিল। নানা কারণে হারিয়ে যায় সেটা।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn