বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সত্যিই খুব বিপন্ন: আসাদ চৌধুরী
চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কবি আসাদ চৌধুরী। ছবি: তানজিদ বসুনিয়া
এক. পাকিস্তানিরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে ধংস করতে চেয়েছিল। সেই পাকিস্তানি ভুত এখনো কারো কারো কাঁধে চেপে রয়েছে। সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন হচ্ছে মেয়েদের টিপ নিয়ে পুলিশ সদস্যের আপত্তিকর মন্তব্য। আইয়ুব খানের আমলেও টিপ পরা বন্ধ করা হয়েছিল। টিপ পরে কেউ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতে পারবে না- এমন নির্দেশনা জারি হয়েছিল।
দুই. মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এখন সত্যি সত্যি খুব বিপন্ন! গ্রামাঞ্চলে যাত্রা-নাটক হয় না। কবিগান অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এই হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি! এফএম রেডিওগুলো বাংলা ভাষা নিয়ে যে কাণ্ড করছে, টেলিভিশনে যে নাটকগুলো হচ্ছে, এমনকি যে সিনেমাগুলো হচ্ছে- সেগুলো কি বাংলা ভাষা? এই যে অনাচারগুলো হচ্ছে- দেখার কেউ নেই, কারো যেন কিছু করার নেই।
তিন. এটা সত্যি কথা যে, ছায়ানট বাঙালি সংস্কৃতির অনেক কিছুকে ধারন করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমি এটাও বলবো- না বললে অবিচার করা হবে- উদীচী, ক্রান্তি – এরা যে অনুষ্ঠানগুলো করতো সেগুলোও সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে।
চার. প্রবাসীদের অনেক সমস্যা রয়েছে- নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার সমস্যা। মাদার টাং-এ (চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবালের প্রামাণ্যচিত্র) এ সমস্যাটি ভালোভাবে উঠে এসেছে। আজকে এই যে আমরা স্বপ্ন দেখছি বিদেশে বাংলা ভাষা থাকবে, বাঙালি সংস্কৃতি থাকবে- এ স্বপ্ন যদি আমাদের থাকে, উদ্যোগ যদি আমাদের থাকে তাহলে হয় তো বাংলা ভাষা মরবে না।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশবরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী নববর্ষ উদযাপন, বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে এমন অনেক হিরন্ময় কথামালার জাল বুনেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের ক্ষমহীন নির্লিপ্ততায়। তাঁর কয়েকটি অসামান্য আবৃত্তিতেও ছিল সেই প্রতিধ্বনি!
সাক্ষাৎকার গ্রহণ, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম।
অডিও সম্পাদনা ও ছবি: তানজিদ বসুনিয়া।