বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ২৪

CMGPublished: 2024-11-24 14:37:18
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. আজব প্রাণী চাইনিজ প্যাংগোলিন

২. সবুজ হচ্ছে ঊষর মরু

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

চাইনিজ প্যাংগোলিন

আজব এক প্রাণী। পিপড়া তার প্রিয় খাদ্য। সারা শরীর শক্ত আঁশে ঢাকা। নাম চাইনিজ প্যাংগোলিন। বাংলায় একে চায়না বনরুই নামেও ডাকা হয়। প্রকৃতির এক অনন্য সন্তান এই প্রাণী বিষয়ে চলুন শুনি একটি বিশেষ প্রতিবেদন।

পাহাড়ি অরণ্য। রাতের অন্ধকারে জেগে উঠেছে নিশাচর প্রাণীরা। ঘন ঝোঁপের মধ্যে চলাফেরা করছে একটি ছোট আকারের প্রাণী। ইনফ্রা রেড ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার ছবি। কি প্রাণী এটি? এর নাম চাইনিজ প্যাংগোলিন। ক্রিটিকালি এনডেজারড বা মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী।

চীনের কুয়ানতোং প্রদেশের শেনচেন পৌর এরাকার মধ্যে উথোং মাউন্টেন। এই পাহাড়ি অরণ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে লুওহু ব্যুরো অব ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের কর্মীরা ইনফ্রা রেড ক্যামেরা স্থাপন করেন।

সেপ্টেম্বর মাসে সেই ক্যামেরার ডেটা পরীক্ষা করে দেখা যায় চাইনিজ প্যাংগোলিনের ছবি। লুওহু জেলায় ত্রিশ বছরের মধ্যে এই প্রথম বন্য অবস্থায় ইনফ্রা রেড ক্যামেরায় এই মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটির ছবি তোলা সম্ভব হলো।

চাইনিজ প্যাংগোলিনের বৈজ্ঞানিক নাম মানিস পেনটাডাকটাইলা। বাংলায় একে চায়না বনরুই নামে ডাকা হয়। এই প্রজাতির প্রাণী চীনের সিছুয়ান, ইয়ুননান, হাইনান, কুয়াংসিচুয়াং, কুয়ানতোং, হুনান, ছোংছিং, ফুচিয়ান, চিয়াংসি, চ্যচিয়াং, আনহুই প্রদেশের পাহাড়ি অরণ্যে এদের দেখা মেলে। দক্ষিণ নেপাল, উত্তর ভারত , ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমারেও এদের বসবাস রয়েছে।

চাইনিজ প্যাংগোলিন স্তন্যপায়ী প্রাণী। দেহ গোলাকার ও মাংসল। মাথা ছোট ও সূচালো। মুখ খুব সরু। মাথাসহ দেহের দৈর্ঘ্য ৪৮ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। লেজ ২৬ থেকে ৪০ সেমি পর্যন্ট দীর্ঘ এবং ওজন ২ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত।

আশযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শেষ জীবন্ত প্রজাতি হলো প্যাংগোলিন। ৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে আঁশযুক্ত যে বিশাল স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ঘুরে বেড়াতো তাদেরই শেষ বংশধর এই ছোট আকারের প্রাণী।

প্যাংগোলিন পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বিপন্ন হলো চাইনিজ প্যাংগোলিন।

এরা পিপড়া, ছোট পোকা, কেঁচো, ঝিঝি পোকা, মাছি, মৌমাছির লার্ভাসহ বিভিন্ন ছোট কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে।

প্যাংগোলিন খুব লাজুক প্রজাতির প্রাণী। বিপদের আঁচ পেলেই গুটিয়ে গোল বলের আকার ধারণ করে।

এদের মাংস বেশ সুস্বাদু। তাই চোরা শিকারীদের কারণে একসময় এরা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। বন ও পরিবেশ ধ্বংসের ফলে এরা আবাসন সংকটে ভুগছে।

তবে পরিবেশ সংরক্ষণে চীনের বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগের ফলে প্রকৃতিতে আবার এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। চীনে এরা জাতীয় সুরক্ষার অধীনে রয়েছে।

প্রতিবেদন শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ।

সবুজ হচ্ছে ঊষর মরু

চীনের সিনচিয়াং অঞ্চলের তাকলামাকান মরুভূমির একটি অংশকে সবুজ ও প্রাণময় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। একসময় যেখানে ছিল অনুর্বর ঊষর মরু সেখানে এখন দেখা মিলছে সবুজের।

মরুভূমির বুকে সারি সারি সোলার প্যানেল । সোলার ফটোভোলটাইক প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে বিদ্যুৎ। শুধু তাই নয় তীব্র বাতাস ও বালির ঝড়কেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। অবাক করা এমন ঘটনা ঘটছে উত্তর পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের হোথান প্রিফেকচারের লুয়োফু কাউন্টিতে। এখানে তাকলামাকান মরুভূমির প্রান্তে এক সময়ের অনুর্বর ঊষর মরু এখন সবুজ হয়ে উঠেছে। মরুকরণ বিরোধী প্রচেষ্টার ফলে এমনটা ঘটেছে।

লুয়োফু কাউন্টিতে চলছে মরুকরণ প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক যুদ্ধ। এখানে সবুজ গাছপালার অভাবে প্রতি বসন্ত ও গ্রীষ্মে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে তীব্র বাতাস ও বালি ঝড় বয়ে যেত।

তবে ছয় মাস আগে মরুভূমি এবং কাউন্টির একটি গ্রামের মধ্যবর্তী সীমান্তে অবস্থিত একটি ফটোভোলটাইক প্রকল্প চালু হওয়ায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে।

প্রকল্পটিতে বিশাল সৌর প্যানেল রয়েছে যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে এবং ধাতব উইন্ডব্রেক হিসাবে কাজ করতে পারে। প্যানেলগুলো বাতাসের গতি কমিয়ে দেয়, যার ফলে কাছাকাছি গ্রাম এবং শহরে বাতাসের সঙ্গে বালির পরিমাণ কম হয়।

এছাড়াও, প্রকল্পটি বালিকে স্থিতিশীল করার জন্য বিশেষভাবে গাছ লাগানোর প্রবর্তন করেছে। বালি সরানোর সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষিকাজ করা হচ্ছে যাতে উদ্ভিদের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে।

কৃষি প্রযুক্তিবিদরা ব্যাপকভাবে ফসলের পানি খরচ এবং প্রতি ইউনিট এলাকায় আউটপুটের অর্থনৈতিক মূল্য গণনা করেছেন। এখানে আলফা আলফা গাছ লাগানো হয়েছে। সবুজ করে তোলা হয়েছে অনেকটা জমি। আলফা আলফা গাছ গবাদি পশু ও ভেড়ার জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। পরিবেশও উন্নত হয়। বাড়ে সবুজ আচ্ছাদন।

ফোটোভোলটাইক প্যানেল একই সময়ে জল বাষ্পীভবন কমাতে গাছপালার জন্য ছায়া প্রদান করবে।

পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পটি একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বালি নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে একের ভিতর তিন সমাধান দিচ্ছে।

ঊষর মরুকে করে তুলছে সবুজ।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি।

উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন স্থানে এখখন শীতকাল শুরু হয়েছে। একটু উষ্ণতার খোঁজে শীতল ভূমি থেকে দক্ষিণে উড়ে আসা পারিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।

এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn