বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ২২

CMGPublished: 2024-11-10 19:07:11
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. হাইনান এলডস হরিণ : এক হৃদয় ছোঁয়া গল্প

২. শাহু লেকের নাটকীয় পরিবর্তন

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা, মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠানে থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া বিশাল

হাইনান এলডস হরিণ : এক হৃদয় ছোঁয়া গল্প

চীনের দক্ষিণের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের দেশীয় প্রজাতি হাইনান এলডস ডিয়ার । কিভাবে এই হরিণকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা হয়েছে শুনবো সেই হৃদয় ছোঁয়া গল্প।

হাইনান দ্বীপের ট্রপিকাল নিবিড় অরণ্য। এর ভিতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন প্রবীণ বনরক্ষক ও পরিবেশকর্মী লিন সিয়ানমেই। হঠাৎ দেখলেন ঘন ঝোঁপের আড়ালে অসহায়ভাবে পড়ে আছে একটি সদ্যজাত হরিণ শাবক। লিন ভাবলেন এখানে যদি হরিণ শাবকটি পড়ে থাকে নাহলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত। নিশ্চিতভাবে অজগর সাপের খাদ্যে পরিণত হবে। তিনি হরিণশাবকটিকে উদ্ধার করে তাথিয়ান ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভের দপ্তরে নিয়ে এলেন। ওর নাম রাখা হলো থিয়ানথিয়ান। হরিণশাবকটিকে বনরক্ষকরা মায়ের মতো যত্ন করে সুস্থ করে তুললো। একটু বড়সড় হওয়ার পর ওকে তাথিয়ান সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হলো। এরপর ছয়বছর কেটে গেছে। সেদিনের সেই ছোট্ট শাবক থিয়ান থিয়ান এখন নিজেই ছয়টি শিশুর মা। তবে থিয়ানথিয়ান তার পালকদের ভোলেনি। প্রায়ই এসে দেখা করে যায় লিন সিয়ানমেই এবং অন্যদের সঙ্গে। থিয়ান থিয়ান হলো হাইনান এলডস ডিয়ার প্রজাতির সদস্য। এটি হাইনানের দেশীয় প্রজাতি। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার এই প্রজাতিকে বিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। চীনে এই প্রজাতি প্রথমশ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে আছে।

১৯৫০ এর দশকে এই প্রজাতির হরিণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। চোরা শিকার ও বিভিন্ন কারণে এদের সংখ্যা মাত্র ২৬টিতে এসে দাঁড়ায়।

বিপন্ন এ প্রজাতিকে বাঁচাতে জাতীয়ভাবে কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত তাথিয়ান জাতীয় প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চল এবং পাংসি প্রাদেশিক প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলে বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়।

বনরক্ষক, প্রাণী গবেষক, পরিবেশ কর্মীদের অক্লান্ত চেষ্টায় তাথিয়ান রিজার্ভে হরিণের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। হরিণরা বনরক্ষদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের বিশ্বাস করে। থাং পিয়াওই নামের একজন বনরক্ষক বলেন, ওরা যখন বিপদের আভাস পায় দৌড়ে আমাদের কাছে চলে আসে। ওরা জানে আমরা এখানে ওদের রক্ষা করার দায়িত্বে আছি।

তাথিয়ান ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভে বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরাও কাজ করছেন। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় বর্তমানে এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে একহাজারের মতো হাইনান এলডস ডিয়ার রয়েছে। এখানে ৫১৯ প্রজাতির ভাসকুলার উদ্ভিদ এবং ৯৪ প্রজাতির মেরদণ্ডী প্রাণী আছে। এদের মধ্যে প্রথমশ্রেণীর জাতীয় সুরক্ষার অধীনে থাকা এশিয়ান ওয়াটার মনিটর প্রজাতির সরীসৃপ এবং সিভেট বা গন্ধগোকুল রয়েছে। আছে বিপন্ন প্রজাতির শূকর ও কয়েক প্রজাতির বিপন্ন পাখি। তাথিয়ান এবং পাংসি রিজার্ভের বাইরেও হাইনানের বিভিন্ন স্থানে এসব বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ওয়েনছাং এবং মিহোওলিং সিটির ফরেস্ট সিনিক স্পটেও এদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ।

শাহু লেকের নাটকীয় পরিবর্তন।

উত্তর-পশ্চিম চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শাহু হ্রদ একসময় ছিল অবহেলিত একটি অঞ্চল। সম্প্রতি সেখানকার প্রকৃতিতে ঘটেছে নাটকীয় রূপান্তর। স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় শাহু হ্রদ হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এতে হ্রদের পানিতে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল।

চলুন ঘুরে আসি শাহু লেক থেকে।

চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিচুইশান শহরের শাহু হ্রদ। মরুবেষ্টিত এই হ্রদে এখন শোনা যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলী। মরুর মাঝে এসব পাখির আনাগোনায় বলতে গেলে নাটকীয় রূপান্তর ঘটেছে শাহু হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশে।

শিচুইশান শহরের এই উপকণ্ঠ এখন অনেক প্রজাতির পাখির দক্ষিণ অভিবাসনের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পাখিরা কিন্তু এমনি এমনি আসতে শুরু করেনি এখানে। দীর্ঘ পথচলার মাঝপথে তাদের যেন খাবারের সংকটে পড়তে না হয় সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন এখানকার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপণ করেছে ধান। তাই আগামী দিনেও এখানে পাখির আগমন যে আরও বাড়বে তাতে একটুও সন্দেহ নেই।

আট বছর আগে পাখিরা এ জলাভূমিতে আসতো না বললেই চলে। জলাভূমিতে ছিল কোনো স্পন্দন, পানি ছিল একদম স্থির। তাই এখানে বেড়ে যায় রোগজীবাণু। মারা যেতে থাকে মাছ ও জলজ উদ্ভিদ।

২০১৭ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শাহু হ্রদকে ঘিরে ব্যাপক পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা শুরু করে। সেই উদ্যোগের আওতায় ৪০০ হেক্টর পরিমাণ জলাভূমির মূল এলাকা তৈরি করা হয়, যাতে সেখানে তৈরি হয় পানির প্রবাহ। এতে পরিশোধিত হতে থাকে হ্রদের নোংরা পানি। তিন বছরের প্রচেষ্টায় শাহু হ্রদের জলের গুণমান বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

এখন এই জলাভূমি এলাকায় ব্ল্যাক স্টর্কসহ মোট ৩২ জাতের পাখি দেখা যায়, ওরা এর আগে কখনই শাহুতে আসেনি। এগুলো এখন চীনের প্রথম স্তরের সুরক্ষিত প্রজাতির তালিকাতেও স্থান করে নিয়েছে। অন্যান্য প্রজাতিসহ এই জলাভূমিতে এখন দেখা যায় মোট ২১০ প্রজাতির পাখি। এখানেই স্থায়ী আবাস গড়েছে ধূসর রাজহাঁস ও পানকৌড়ির দল।

সম্প্রতি নিংসিয়ার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জলাভূমি সংরক্ষিত ভূমির আওতায় এনেছে প্রশাসন। পাখির জন্য উপযুক্ত আবাস তৈরিতে ২৬টি আলাদা জলাভূমি পার্ক এবং চারটি প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল স্থাপন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানও হয়েছে এটি।

এখন নিংসিয়ার শহরগুলোর বায়ুমানও বেশ উন্নত হয়েছে। টানা ৯ বছর এর গ্রেড ছিল ৮০ শতাংশের উপরে। আর তাই নীল ভেড়া ও লাল হরিণের মতো বন্য প্রাণীর সংখ্যাও এখানে ক্রমাগত বেড়েছে। এমনকি বহু বছর পর তুষার চিতাবাঘের দেখাও মিলেছে এখানে।

প্রতিবেদন : ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। একটু উষ্ণতার খোঁজে শীতল ভূমি থেকে দক্ষিণে উড়ে আসা পারিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn