বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ১৯

CMGPublished: 2024-10-20 17:14:39
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. বাংলার বাঘ

২ চীনে নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধানলাভ

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। এ পর্বে আপনাদের বলবো বিশ্বখ্যাত বাংলার বাঘের কথা।। আরও বলবো চীনে বিরল

প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান পাওয়ার আকর্ষণীয় গল্প।

বাংলার বাঘ

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। বাংলার বাঘ প্রকৃতির এক অনন্য ঐশ্বর্য।

সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালের জরিপে দেখা গেছে সুন্দরবনে মাত্র ১২৫টি বাঘ রয়েছে। চলুন বাংলার বাঘ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনি।

সুন্দরবনের বাদা অঞ্চল। ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এখানে গোলপাতা আর ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে হলুদ ডোরাকাটা বাঘ। তীক্ষণ চোখে সে দেখছে চারপাশ। সুন্দরবনের রাজা এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তার বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা টাইগ্রিস বেঙ্গলেন্সিস।

বাংলাদেশের জাতীয় পশু এই বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে অনন্য। উজ্জ্বল হলুদ ডোরাকাটা এই বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ক্ষিপ্র ও বুদ্ধিমান।

২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২.৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১ টি, বৃদ্ধির হার ৯.৬৫ শতাংশ এবং এই হার ২০১৫ সালের তুলনায় ১৭.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই তথ্য জানান।

পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল, আর ঘনত্ব ছিল ২.১৭।

২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায়, আর ঘনত্ব ছিল ২.৫৫। ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা ৮টি বেড়েছিল এবং বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।

রিজওয়ানা বলেন, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছেএ তবে শাবকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ ছোট বয়সে শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মাত্র ৫টি শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।

জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। সুন্দরবনের ৬০৫টি গ্রীডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়। যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রীডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়। প্রায় ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে ৭ হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশি সংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি। রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির এই খবর দেশের সবার জন্য আনন্দের। বাঘ সংরক্ষণে সরকার ৫৩.৫২ শতাংশ বন রক্ষিত এলাকা ঘোষণা, ৬০ কি.মি. নাইলন ফেন্সিং, ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ ও পুরস্কার প্রদান এবং ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে।

বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের কোন কোন অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। ২০০৪ সালেও সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪০৫টি বাঘ ছিল।

অতীতে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই বাঘের দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু চোরা শিকার, বন ধ্বংস, বাঘের খাদ্য ঘাটতি, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বিভিন্ন কারণে আজ এই প্রাণী বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে।

সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগারের বৈশিষ্ট্য হলো এরা সাঁতার কাটতে পারে। গায়ের রঙ হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়। ডোরার রঙ হয় গাঢ় খয়েরি থেকে কালো, পেট সাদা এবং লেজ কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা।

লেজসহ একটি পুরুষ বাঘের দৈর্ঘ্য ২১০ থেকে ৩১০ সেন্টিমিটার। নারী বাঘের দৈর্ঘ্য ২৪০ থেকে ২৬৫ সেন্টিমিটার।

বেঙ্গল টাইগারের গর্জন তিন কিলোমিটার দূর পর্যন্ত শোনা যায়।

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাংলার বাঘের শেষ আশ্রয়। অবৈধ শিকার কঠোরভাবে বন্ধ করে এবং বাঘের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে এই বাঘকে বাঁচানো এখন সময়ের দাবি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম

প্রকৃতি সংবাদ

বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ

চীনে নতুন প্রজাতির প্রাণীর সন্ধানলাভ

গেল কয়েক বছরে চীনের জাতীয় উদ্যানগুলোতে বেড়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। পূর্ব চীনের উয়িশান জাতীয় উদ্যানে কীটপতঙ্গের নতুন ১৭টি প্রজাতি আবিষ্কার করেছে দেশটির গবেষকরা। অন্যদিকে হুয়াংকাং পর্বতেও মিলেছে নতুন প্রজাতির খোঁজ। প্রকৃতপক্ষে পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ এবং ফুচিয়ান প্রদেশে বিস্তৃত বিভিন্ন উদ্যানে নতুন নতুন বিরল প্রজাতির প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। বিস্তারিত আফরিন মিমের প্রতিবেদনে।

২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত সংরক্ষিত চীনের জাতীয় উদ্যান। পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশ এবং ফুচিয়ান প্রদেশে এসব উদ্যানের মধ্যে রয়েছে সানচিয়ানইউয়ান ন্যাশনাল পার্ক, হাইনান ট্রপিক্যাল পার্ক, উত্তর-পূর্ব চীন বাঘ এবং চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান, হাইনান ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক ও উয়িশান ন্যাশনাল পার্ক ও জায়ান্ট পান্ডা ন্যাশনাল পার্ক।

গত তিন বছরে চীনের এই জাতীয় উদ্যানগুলোতে বেড়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। সেই সময়ে দেশটির কানসু, শানসি এবং সিছুয়ান প্রদেশজুড়ে বিস্তৃত জায়ান্ট পান্ডা ন্যাশনাল পার্কে জায়ান্ট পান্ডার সংখ্যা ১ হাজার ৯০০তে পৌঁছেছে। পাশাপাশি সোনালী বানর, তুষার চিতাসহ এখানে রয়েছে ৮ হাজার প্রজাতির গাছ ও বন্যপ্রাণী।

এদিকে ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন এবং হেইলংচিয়াং প্রদেশে উত্তর-পূর্ব চীন বাঘ এবং চিতাবাঘ জাতীয় উদ্যান। গেল কয়েক বছরে এই উদ্যানে সাইবেরিয়ান বাঘ এবং আমুর চিতাবাঘের সংখ্যা যথাক্রমে ৭০ ও ৮০’তে পৌঁছেছে। পাশাপাশি এই উদ্যানে আটটি বাঘ ও দশটি চিতাবাঘ পরিবারও খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।

সানচিয়ানইউয়ান ন্যাশনাল পার্কে তিব্বতি হরিণ এবং তুষার চিতাবাঘের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। তিন বছরে এখানে তিব্বতি হরিণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে এবং তুষার চিতাবাঘ বারোশতে। পাশাপাশি এই উদ্যানে হাইনান উল্লুকের সংখ্যা বেড়ে ৪২-এ পৌঁছেছে।

এদিকে পূর্ব চীনের উয়িশান জাতীয় উদ্যানে নতুন ১৭ প্রজাতির কীটপতঙ্গ আবিষ্কৃত হয়েছে। পোকামাকড়ের আদর্শ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত এই উদ্যানে ২০২১ সালে শুরু হয় অনুসন্ধান। ওই সময় নতুন প্রজাতিগুলোর সন্ধান পান গবেষকরা। নতুন আবিষ্কৃত এই পোকামকড়ের মধ্যে এলাফ্রোপেজা প্রজাতির পাঁচটি নতুন পতঙ্গ পাওয়া গেছে।

সরকারি তথ্য বলছে, উয়িশান জাতীয় উদ্যানে ৭ হাজার ৯২৫টি কীটপতঙ্গের প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি জাতীয় সুরক্ষিত প্রাণীর শ্রেণিভুক্ত। এ ছাড়া এখানে প্রথম-শ্রেণির সুরক্ষিত টেইনোপালপাস অরিয়াস নামের প্রজাপতিও রয়েছে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn