বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ১৩

CMGPublished: 2024-09-08 15:55:27
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. পৃথিবীর ছাদে হরিণ শাবক

২. চীনে ফিরে আসছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

পৃথিবীর ছাদে হরিণ শাবক

চীনের সিচাং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জাতীয় প্রাকৃতিক রিজার্ভ ছাংথাং। এটি পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম এলাকা। এখানে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য হরিণ শাবক। নেকড়ের আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে কিভাবে নতুন শিশুর জন্ম দিচ্ছে মা হরিণ শুনবো সেই গল্প।

ছাংথাং প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ মালভূমি। যা পৃথিবীর ছাদ নামে পরিচিত। একটি গর্ভবতী মা হরিণ তার পালের অন্যান্য হরিণদের চেয়ে একটু আলাদা হয়ে ১০০ মিটার দূরে নিরিবিলি ঘাসে ঢাকা ভূমির দিকে যাচ্ছে। সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি শাবকের জন্ম দেয় সে। শাবকটি তখনও নিজে দাঁড়াতে পারছে না। তবু মা হরিণ তাকে নিয়ে এগিয়ে যায় তার পালের দিকে। কারণ একা থাকলেই বিপদ। ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে নেকড়ে।

সিচাং মালভূমিতে এখন চলছে প্রাণের মৌসুম। কারণ টিবেটান অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণরা এখন সন্তান জন্ম দিচ্ছে ছাংথাং নেচার রিজার্ভে। ছিংহাইসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে দরে দলে তারা এসেছে এখানে। এই এলাকাকে বলা হয় চীনের টিবেটান অ্যান্টিলোপদের ডেলিভারি রুম।

এখানে আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। বুনো ইয়াক, কালো গলা সারস এবং নেকড়ে। এখানে নাইমা কাউন্টিতে নরবু ইয়ুগাইল ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন স্টেশনের প্রধান কালচাং লুনধ্রুপ জানান ছাংথাং একসময় ছিল বিশ্বের দুর্গমতম এলাকার অন্যতম। এখানে চোরা শিকারিদের দাপট ছিল। তারা প্রচুর সংখ্যক অ্যান্টিলোপ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার করে এগুলোকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। তবে এখন টিবেটান অ্যান্টিলোপ ও কালো গলা সারস পাখি বিলুপ্তির আশংকা থেকে মুক্ত। ওদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

৭১ বছর বয়সী প্রবীণ প্রাণী বিজ্ঞানী লিউ উলিন গত ৪০ বছর ধরে সিচাং এর বন্য প্রাণী নিয়ে গবেষণা করছেন। ঊনিশশ নব্বইয়ের দশকে এখানে টিবেটান অ্যান্টিলোপ ছিল ৭০ হাজারের মতো। এখন ৩ লাখের বেশি বন্য অবস্থায় টিবেটান অ্যান্টিলোপ আছে।

২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছাংথাং এ ৭৩টি ওয়াইল্ড লাইফ স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে যেখানে ৭৮০ জন অফিসার কাজ করছেন। নরবু ইয়ুগেইল স্টেশনে আছেন ১৪জন। তাদের মধ্যে মাইল স্টেশনে তিনটি মাতৃহীন অ্যান্টিলোপ শাবককে পালন করা হয়েছে। পরে তাদের বন্য পরিবেশে মুক্ত করা হয়।

নোবু নামে একজন রেঞ্জার শোনালেন এক করুণ অভিজ্ঞতা।

এ বছর জুন মাসের ঘটনা। একটি গর্ভবতী হরিণ নেকড়ের থাবায় আহত হয়ে ছুটতে ছুটতে তাদের ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নেয়। মানুষকে দেখে তাড়াকারী নেকড়েটি পালায়। আহত হরিণটির পেট নেকড়ের থাবায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল। নোবু তাকে চিকিৎসা দেন। ব্যান্ডেজ করে দেন। বিকেলের দিকে মা হরিণটি তার পালের সঙ্গীদের কাছে ফিরে যায়। যাবার আগে নোবুর হাত চেটে তাকে কৃতজ্ঞতা জানায়। পরদিন সকালে তুষারের ওপর মা হরিণের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন নোবু। তার আশপাশে ছিল অন্য গর্ভবতী হরিণরা। সদ্য জন্ম নেয়া মা হারা শাবকটিকে পালন করেন নোবু।

প্রবীণ জীববিজ্ঞানী লিউয়ের মতে, টিবেটান অ্যান্টিলোপদের নাটকীয় সংখ্যাবৃদ্ধি এবং ফিরে আসা এক অনন্য সাফল্য।

পরিবেশ রক্ষায় চীনের সাফল্যকে যেমন এই ঘটনা তুলে ধরেছে তেমনি মানুষ ও প্রকৃতির শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মানুষ কিভাবে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে সেই চমৎকার আদর্শও স্থাপন করেছে।

প্রকৃতি সংবাদ

চীনে ফিরে আসছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য

ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। বিশ্বের উপকূলীয় কয়েকটি দেশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ ও চীন আছে। দূষণ, অরণ্য ধ্বংসসহ বিভিন্ন কারণে এই অরণ্য ক্রমশ কমছে। তবে চীনে ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রসারিত করা সম্ভব হয়েছে।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে সংরক্ষণমূলক প্রচেষ্টার পর চীনে প্রসারিত হচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। চীন এক্ষেত্রে বিশ্বের হাতে গোণা কয়েকটি দেশের অন্যতম যারা ম্যানগ্রোভ অরণ্য ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।

ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম অনুসারে, লোনা এবং লোনা জলে বসবাসের জন্য অভিযোজিত, গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ১২৩টি দেশে উপকূল এবং মোহনা বরাবর ম্যানগ্রোভ পাওয়া যায়।

ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঝড়, ক্ষয় এবং বন্যার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে, জলের গুণমান উন্নত করে, ১৫০০ টিরও বেশি প্রজাতিকে প্রাকৃতিক বাসস্থান সরবরাহ করে এবং প্রবাল প্রাচীরের মতো পার্শ্ববর্তী বাস্তুতন্ত্রকে উপকৃত করে।

ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয়। চীনও ম্যানগ্রোভের ক্ষতির সমস্যা মোকাবেলায় অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১৯৫০ থেকে ২০০০সাল পর্যন্ত, ভূমি পুনরুদ্ধার, চিংড়ি ও ধান চাষ, শিল্প সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কারণের কারণে চীন তার ম্যানগ্রোভ বনের অর্ধেকেরও বেশি হারিয়েছে। এই ক্রমহ্রাসমান প্রবণতাকে ফিরিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

২০০০ সালে, দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ফাংছ্যংকাং শহরের প্রকৃতি সংরক্ষণকে একটি জাতীয় স্তরের রিজার্ভে উন্নীত করা হয়, যা ম্যানগ্রোভ সুরক্ষার জন্য একটি ক্লাসিক মডেল হয়ে উঠেছে।এই প্রাকৃতিক সংরক্ষিত অঞ্চলটি এখন ৩০০০ হেক্টরের বেশি জমি জুড়ে রয়েছে এবং এটি ১৮ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছপালা, ১৫৫ প্রজাতির বড় প্রাণী, প্রায় ৬০ প্রজাতির মাছ এবং ৩০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখির আবাসস্থল।

প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং প্রস্তাবিত "উজ্জ্বল জল এবং সুন্দর পর্বত অমূল্য সম্পদ" নীতির দ্বারা পরিচালিত, চীন তার ম্যানগ্রোভ বনগুলোকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

চীনের ম্যানগ্রোভ বনের আয়তন এখন প্রায় ২৯,২০০ হেক্টর, চলতি শতাব্দীর শুরু থেকে প্রায় ৭২০০ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চীনকে সেই কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি করে তুলেছে যেখানে ম্যানগ্রোভ বন আসলেই বিস্তৃত হচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn