মানুষ ও প্রকৃতি পর্ব ৬
কী রয়েছে এ পর্বে
১. বুনো হাতির গল্প
২. মিইয়ুন জলাভূমিতে পাখির কাকলি
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
বুনো হাতির গল্প
একপাল বুনো হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের পথে। যে কোন সময়ে বিপদে পড়তে পারেন গ্রামবাসী। হাতিদের প্রাণও বিপন্ন হতে পারে মানুষের হাতে। হাতির পাল কি ফসলের ক্ষেতে ভোজ খাবার প্ল্যান করেছে? গ্রামবাসীরা ওদের কিছু বলবে নাতো? যে কোন সময়ে ঘটতে পারে মহাবিপদ। চলুন শোনা যাক সেই রোমাঞ্চকর গল্প
পাহাড়ি অরণ্যের পাশে ছোট্ট গ্রাম। সবুজ গাছপালা আর ফসলের ক্ষেত। অরণ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে একপাল বুনো হাতি। ও্ররা ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের পথে। ওদের ইচ্ছা ফসলের মাঠে নেমে ভুরিভোজ করবে। কিন্তু ওরা একটু মন খারাপ করেছে। কারণ এ বছর তো বরাবরের মতো পাকা ফসল দেখা যাচ্ছে না। তাহলে উপায় কি? ওরা গ্রামের পথে ঘুরছে খাবারের খোঁজে।
যে কোন সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে গ্রামের কোন মানুষ। বুনো হাতির পালের সামনে পড়লে তো মহাবিপদ। কিন্তু এই বিপদ ঘটেনি। কারণ বুনো হাতিকে মনিটর করার জন্য বিশেষ কর্মীরা পৌছে গেছেন ঠিক সময়ে। সতর্ক করে দিয়েছেন গ্রামবাসীকে। রাস্তায় যেন কোন যানবাহন না বের হয় সে সতর্কতাও পৌছে দিয়েছেন তারা।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের ফুআর সিটি, সিশুয়াংবান্নাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অরণ্য এলাকায় এমনটা হরহামেশাই ঘটে। এখানে বুনো হাতির পালকে বিশেষ সুরক্ষা দেয়া হয়।
ওয়াইল্ড এশিয়ান এলিফেন্ট বা বন্য এশীয় হাতি একটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অরণ্যে এদের দল বেঁধে ঘুরতে দেখা যায়। তবে অরণ্য ধ্বংস, চোরা শিকার, খাদ্যের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। চার হাজার বছর আগে চীনের হলুদ নদীর তীরবর্তি অঞ্চলেও ওদের দেখা মিলতো।
এখন ইয়ুননান প্রদেশের অরণ্য অঞ্চলে ওদের কয়েকটি দল বাস করে। গত কয়েক দশকের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষামূলক কাজের ফলে এখন বন্য এশীয় হাতির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তিনশ’র বেশি বন্য হাতি রয়েছে। চিয়াংছ্য কাউন্টিতেই আছে ৫৫টি হাতি।
১৯৮৮ সাল থেকে চীনের বন্য প্রাণী সুরক্ষা আইনের অধীনে প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষায় রয়েছে ওয়াইল্ড এশিয়ান এলিফেন্ট।
হাতির দলকে মনিটর করেন এমন একজন কর্মী তিয়াও ফাসিং।
তিনি জানান, এ বছর বর্ষা মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ায় ভুট্টার ফসল দেরিতে হয়েছে। জুলাইয়ের শেষ নাগাদও ফসল পাকবে না। হাতিরা তাই খাবারের খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ওরা ঘুরছে বলে তাদের মনিটরিং করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তিয়াও যখনি খোঁজ পান হাতির পাল লোকালয়ে এসেছে সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীকে সতর্ক করেন। রাস্তায় যান চলাচলও নিয়ন্ত্রিত করা হয়। ড্রোন প্রযুক্তির সাহায্যে হাতিদের খোঁজ সহজেই পাওয়া যায়।
গ্রামবাসীরা অবশ্য বুনো হাতিদের ক্ষতি করে না। কারণ এই এলাকার বাসিন্দা দাই জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা হাতিদের সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করে। তাছাড়া ক্ষেতের ফসল হাতি নষ্ট করলে সরকার থেকে ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়।
কয়েকবছর আগে সিশুয়াংবান্নায় একপাল বুনো হাতি দীর্ঘদিন লোকালয়ে ঘুরে বেরিয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ উপভোগহ করেছে লোকালয়ে বুনো হাতির পাল বিশেষ করে শাবক হাতিদের মজার কাণ্ডকারখানা।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষামূলক কাজের ফলে এখন বাড়ছে বন্য এশিয়ান হাতির সংখ্যা। ওরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে পারছে ইয়ুননানের অরণ্যে।
বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি। অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে শুনবো প্রকৃতি সংবাদ
প্রকৃতি সংবাদ
মিইয়ুন জলাভূমিতে পাখির কাকলি
গ্রীষ্ম মৌসুমে এখন উত্তর ও পূর্ব চীনের বিভিন্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের মেলা বয়েছে। বেইজিংয়ের মিইয়ুন জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের কথা রয়েছে প্রতিবেদনে।
বেইজিং এর মিইয়ুন জলাশয়ে এখন পাখির মেলা বসেছে। বিভিন্ন প্রজাতির তিন হাজারের বেশি পাখি এখানে বাস করছে। এরা মূলত পরিযায়ী পাখি। গ্রীষ্মের মনোরম আবহাওয়ায় এরা দক্ষিণ থেকে চলে এসেছে উত্তরে। এখন পাখিদের ডিম ফোটানোর মৌসুম চলছে।
বিভিন্ন পাখির বাসায় ডিম ফুটে বের হচ্ছে নতুন পাখির ছানা। পাখি মা-বাবা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে শাবকদের খাবার খাওয়াতে। শীত আসতে আসতে এই শাবকরা বেশ শক্তপোক্ত হয়ে উঠবে এবং আবার দক্ষিণে পাড়ি দেয়ার সামর্থ্য অর্জন করবে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিইয়ুন জলাশয়ের পরিবেশ উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে এখানে জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে । এখানকার পরিবেশও পাখিদের বসবাসের জন্য আগের চেয়ে বেশি উপযোগী হয়েছে।
বিভিন্ন প্রজাতির বক বাস করছে এই জলাশয়ে। এদের মধ্যে রয়েছে ইগ্রেট বা লম্বা পা প্রজাতির বক, হেরন(বক), করমোরেন্ট বা কালো রঙের জলজপাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ পাখি।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। গ্রামে কিংবা শহরে যেখানেই আমরা থাকি না কেন, আমাদের আশপাশের জীবজন্তু ও পাখিদের রক্ষায় ভূমিকা পালন করি। ঘরের অনেক খেলে দেয়া খাবার দিয়েও পশুপাখির প্রতি সদয় ব্যবহার করা সম্ভব। পথের বিড়াল কুকুর, ব্যালকনিতে উড়ে আসা পাখিদের খাবার দিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ