বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি ৫

CMGPublished: 2024-07-14 18:14:10
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. সোনালি বানরের সোনালি ভুবন

২. উড়ন্ত মাছকে শিকার করে যে পাখি

৩. কুইচৌ প্রদেশে চায়না রোজের বিপন্ন প্রজাতির সন্ধান লাভ

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

সোনালি বানর

সোনালি বানর। প্রকৃতির এক সুন্দর সন্তান। চীনের হুবেই প্রদেশের শ্যননংচিয়া ফরেস্ট্রি জেলায় বাস করে সোনালি বানরের কয়েকটি দল। শ্যননংচিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্যতম প্রধান উল্লেখযোগ্য প্রাণী এই সোনালি বানর। চলুন শোনা যাক সোনালি বানরের সোনালি ভুবনের গল্প।

নিবিড় অরণ্য। গাছের ডালে পাতার ফাঁকে ফাঁকে সোনালি বানর। শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরছে মা বানর। কোথাও তাদের ভয় নেই। কারণ এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

হুবেই প্রদেশের শ্যননংচিয়া ফরেস্ট্রি জেলা। পাহাড়ী অরণভূমি। এখানে গাছে গাছে দোল খায় সোনালি বানরের দল। পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজের ফলে এই অরণ্যে বাড়ছে সোনালি বানরের সংখ্যা।

এই অরণ্যে এক হাজার ৬১৮ টি বানর রয়েছে। ওরা ১১টি দলে বিভক্ত। পাঁচ বছর আগের জরীপে বানরের যে সংখ্যা ছিল এখন তার চেয়ে ১৪৭টি বানর বেশি রয়েছে।

এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে বানর বিষয়ে একটি জরীপ হয়েছে। দেখা গেছে, বানরদের বিচরণক্ষেত্র ৪০১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে।

শ্যননংচিয়া ন্যাশনাল পার্ক প্রশাসনের বিজ্ঞান গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ইয়াং চিংইয়ুয়ান জানান, তারা অনুমান করেছিলেন যে বানরদের সম্ভাবনাময় বিচরণ এলাকা ৩০০ বর্গ কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। জরিপে ভুল এবং ডুপ্লিকেশন এড়াতে তারা এলাকাটিকে কয়েকটি গ্রিডে ভাগ করেন। প্রতিটি গ্রিডে সময় নির্ধারণ করেন। এই জরীপে অনেক মানুষ অংশ নিয়েছেন।

২৪০টি সার্ভে রুট অনুসরণ করা হয়।

শ্যননংচিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের ফ্ল্যাগশিপ স্পিসিস হলো গোল্ডেন মাংকি। ১৬০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় পাহাড়ি বনভূমিতে এরা বাস করে। ফুল, ফল, লতাপাতা ও গাছের বাকল এদের প্রধান খাদ্য।

পুরুষ সোনালি বানর আকারে মেয়ে বানরের চেয়ে অনেক বড় হয়। শিশু অবস্থায় গায়ের রং থাকে তামাটে। বড় হয়ে সোনালি রঙ ধারণ করে।

চীনা বন একাডেমির, ইন্সটিটিউট অব ফরেস্ট ইকোলজির পরিবেশ ও সুরক্ষা বিষয়ক প্রধান বিজ্ঞানী,

লি তিছিয়াং জানান এবারই প্রথম ইনফ্রারেড সেনসিং ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে যেন গণনা সঠিক হয়, এবং প্রতিটি সোনালি বানরকে গণনা করা যায়।

১৯৯০ এর দশকে এই অরণ্যে মাত্র ১৬৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ৫০১টি সোনালি বানর বাস করতো। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সুরক্ষামূলক অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বানরের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ২০০৫ সালে ১৮৯ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২৮২টি বানর ছিল। ২০১৯ সালে ৩৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৪৭১টি বানর বাস করতো। আর সাম্প্রতিক জরিপে তাদের সংখ্যা ১৬১৮।

চীনের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজ, গবেষক ও প্রকৃতি কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় বাড়ছে সোনালি বানরের সংখ্যা। প্রকৃতির কোলে ফিরে আসছে প্রকৃতির এই সোনালি সন্তান।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

উড়ন্ত মাছকে শিকার করে যে পাখি

উড়ন্ত মাছকে শিকার করে উড়ন্ত পাখি। প্রকৃতির এই অবাক করা ঘটনার বিবরণ শুনবেন প্রতিবেদনে।

‘উড়ন্ত মাছ’ কথাটি শুনলে অনেকেই অবাক হবেন। ফ্লাইং ফিশ বা উড়ন্ত মাছ দক্ষিণ চীন সাগরের বাসিন্দা। এই মাছ এতে জোরে লাফ দেয় যে মনে হয় সে জলের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।

মাছটি লাফ দিয়ে জল ছেড়ে উঠে আসে এবং বাতাসের মধ্য দিয়ে বেশ অনেকটা পথ পাড়ি দেয়। উড়ন্ত মাছকে শিকার করতে বিশেষভাবে দক্ষ একটি পাখি। নাম তার লাল-পা বুবি। এই পাখি অত্যন্ত দক্ষ শিকারী। ‘উড়ন্ত মাছের শিকারী’ হিসেবে তার বেশ নাম ডাক।

পাখিগুলো প্রায়ই জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে ওড়ে আর উড়ন্ত মাছ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশ্য অনেক সময় জাহাজের শব্দে চমকে গিয়ে তার শিকার ফসকেও যায়। রেড ফুটেড বুবি বা লাল-পা বুবি পাখি চীনের জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী হিসেবে তালিকায় রয়েছে।

দক্ষিণ চীন সাগর বিভিন্ন জলজ প্রাণীর আবাসস্থল। উড়ন্ত মাছসহ নানা রকম জীববৈচিত্র্য এখানকার বাস্তুতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রকৃতি সংবাদ

কুইচৌ প্রদেশে চায়না রোজের বিপন্ন প্রজাতির সন্ধান লাভ

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশে সম্প্রতি চায়না রোজ ফুলের একটি বিপন্ন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। রোজা লুসিডিসিমা নামে এই অতি বিপন্ন প্রজাতির ফুলটি রোজা চিনেনসিস বা চায়না রোজের অন্তর্গত।

কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ফরেস্ট্রি এবং ফোতিং মাউন্টেন নেচার রিজার্ভ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের যৌথ গবেষণা দল এই ফুলের সন্ধান পায়। ফোতিং পাহাড়ের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চলের শিছিয়ান কাউন্টির অরণ্যে এই ফুল দেখা গেছে। একটি স্থানীয় চীনা প্রজাতি হিসেবে রোজা লুসিডিসিমা বিক্ষিপ্তভাবে দক্ষিণ ও মধ্য চীনে দেখা যায়। বন্য অবস্থায় এই প্রজাতির ফুল অত্যন্ত বিরল। এটি ক্রিটিকালি এনডেনজারড স্পিসিস হিসেবে চীনের জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষার লাল তালিকায় রয়েছে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণা দলের অন্তর্গত কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি বিভাগের একজন সদস্য উ সু বলেন, ‘এপ্রিল মাসে এক মাঠ জরিপের সময় আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০ মিটার উপরে রোজা লুসিডিসিমার চারটি গাছের সন্ধান পাই। নজরকাড়া লাল গোলাপগুলো গাছের শাখা থেকে ঝুলছিল ‘।

উদ্ভিদবিদরা বিশ্বাস করেন যে জাতীয় দ্বিতীয় শ্রেণীর সুরক্ষিত এই বন্য উদ্ভিদ প্রজাতি হল চীনের গোলাপের আদিম রূপ। এর উপর আরও অধ্যয়ন ও গবেষণা গোলাপ গাছের উৎপত্তি এবং বিবর্তন বিষয়ে অনেক তথ্য প্রদান করবে, যা গোলাপের জেনেটিক্স প্রজনন এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স প্রদান করতে পারে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এখন বর্ষাকাল চলছে। বৃক্ষরোপণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মৌসুম। আসুন এই বর্ষামৌসুমে আমরা আমাদের চারপাশকে সবুজ করে তুলি। ব্যালকনিতে, ছাদে, বাড়ির সামনে যে কোন স্থানে ছোট বড় যে কোন রকম বাগান গড়ে তুলি।

আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn