বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি পর্ব ৪

CMGPublished: 2024-07-07 15:04:12
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. বাঘের কিন্ডারগার্টেন

২. বারোশ বছর পর ঘুম ভাঙলো ফুলের

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

বাঘের কিন্ডারগার্টেন

প্রকৃতির এক সুন্দর সন্তান বাঘ। চীনের দেশীয় প্রজাতি সাউথ চায়না টাইগার। এই সাউথ চায়না টাইগারকে প্রকৃতিতে বন্য অবস্থায় টিকিয়ে রাখার জন্য নেয়া হয়েছে এক চমকপ্রদ উদ্যোগ। বাঘের শাবককে বন্য পরিবেশে টিকে থাকার শিক্ষা দিতে খোলা হয়েছে কিন্ডারগার্টেন। কেমনভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ছোট ছোট বাঘের ছানাকে। চলুন শোনা যাক প্রতিবেদনে

বাঘের জন্য কিন্ডার গার্টেন- শুনতে যতই অবাক লাগুক এমন স্কুল সত্যিই রয়েছে চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শাওকুয়ান সিটিতে। এই কিন্ডার গার্টেনে বাঘের শাবকরা শিখছে তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা। বন্য পরিবেশে তাদের টিকে থাকার পাঠ তারা নিচ্ছে।

মানবশিশুর মতো বাঘের ছানারও দরকার স্কুল। । পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষায় সাউথ চায়না টাইগারকে কিভাবে রক্ষা করতে হবে সে বিষয়েও নানা রকম সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চলে এখানে।

বাঘদের জন্যও বেড়ে ওঠার সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই চিন্তা থেকেই বাঘের জন্য কিন্ডারগার্টেন গড়ে তোলা হয় শাওকুয়ান সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। অ্যানিমেল পার্কের ধারণাকে আরও বেশি প্রসারিত করা হয়েছে এখানে যা তাদের বাসস্থানের জন্য আরও বেশি প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে।

চীনা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাঘ। শাওকুয়ান জেলার প্রকৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এখানকার বাঘমামা। প্রকৃতির এই রাজকীয় সন্তানকে এখানে শেখানো হয় বন্য পরিবেশে টিকে থাকার কলাকৌশল।

সাউথ চায়না টাইগার চীনে বাঘের একমাত্র নেটিভ সাবস্পিসিস। ১৯৯০এর দশক থেকে তাদের সংকটময় বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় এনেছে প্রাকৃতিক সুরক্ষা আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন।

একটি বাঘের জন্য অরণ্যে অন্তত ৭০ কিলোমিটার বিচরণক্ষেত্র প্রয়োজন।

১৯৫০ এর দশকে মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম চীনে প্রায় ৪০০০ বাঘ ছিল। কিন্তু মানুষের সংখ্যা এবং বসতি বিস্তারের কারণে বাঘের বিচরণভূমি কমতে থাকে। খাবারের সন্ধানে অনেক সময় বাঘ লোকালয়ে এসে হামলা চালায়, স্থানীয় অধিবাসীদের হাতে মারাও পড়ে।

১৯৯১ সালে চাপালিং ন্যাশনাল নেচার রিজার্ভে শেষবারের মতো সাউথ চায়না টাইগার দেখা যায়। এরপর থেকে বন্য অবস্থায় কুয়াংতোং প্রদেশের দক্ষিণে সাউথ চায়না টাইগার দেখা যায়নি।

বর্তমানে সংরক্ষিত অবস্থায় সাউথ চায়না টাইগারের প্রজনন ঘটানো হচ্ছে এবং তাদের সংখ্যা ২০০তে পৌছেছে। কিন্তু বন্দী অবস্থায় তাদের প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি ও দক্ষতা কমে যায়।

কৃত্রিম পরিবেশে জন্ম নেয়া বাঘ শাবকরা যেন বন্য অবস্থায় টিকে থাকার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারে সেজন্যই চেষ্টা করছেন প্রকৃতিপ্রেমী গবেষকরা।

একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি।

প্রকৃতি সংবাদ

বারোশ বছর পর ঘুম ভাঙলো ফুলের

হাজার বছরের বেশি সময় মাটির নিচে ঘুমিয়ে ছিল এক পদ্মফুল। প্রাচীন সেই ফুলের বীজ থেকে ফুটেছে ফুল। ফুলের ঘুমভাঙার এই গল্প শুনবেন প্রতিবেদনে।

বারোশ’ বছরের বেশি সময় ধরে মাটির নীচে ঘুমিয়ে থাকার পর বীজ থেকে পদ্মফুল ফোটানো সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে ফুলটির প্রাচীন চেহারা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে।এই প্রাচীন ফুলটি রয়েছে চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী নাননিংয়ের বোটানিকাল গার্ডেনে।

উত্তরপূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে খননকাজের মাধ্যমে তিনটি বীজ পাওয়া যায়। কার্বন-১৪ পরীক্ষায় জানা যায় বীজগুলো প্রায় ১২০০ বছরের পুরনো।

গত বছরের মে মাস থেকে কুয়াংসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের উদ্ভিদবিদরা বীজগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। তারা পর্যবেক্ষণ করা পরিবেশে স্থাপন করার আগে অঙ্কুরিত হওয়ার সুবিধার্থে বীজের খোসাগুলোকে সাবধানে কেটে ফেলেন। অবশেষে, দুটি বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে, এবং একটি গত মাসে প্রথমবার ফুলেছে।

পদ্মফুল চীনের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীনের প্রাচীন সাহিত্য, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, সঙ্গীত সব জায়গায় পদ্মফুলের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। লোটাস বা পদ্মফুল চীনা লোকজ সংস্কৃতিতে বিশুদ্ধতা ও অখণ্ডতার প্রতীক। সং ও মিং রাজবংশের সময় পদ্মফুল চীনা সংস্কৃতির এক অনন্য প্রতীকে পরিণত হয়।

চীনে পদ্মফুলের বীজ এবং মৃণাল সবজি খাদ্য হিসেবেও খুব জনপ্রিয়। চীনের বহু শতাব্দী প্রাচীন পদ্মের বীজকে জীবিত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মিং রাজবংশের( ১৩৬৮-১৬৪৪ সাল) ইতিহাসে অজানা বয়সের পেট্রিফাইড পদ্ম বীজ পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া নথিভুক্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিককালে অবশ্য প্রাচীন পদ্মবীজকে পুনরুজ্জীবিত করা হয় ল্যাবরেটরিতে। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানীরা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মাটির নীচে থাকা একটি বীজ থেকে ফুল ফুটাতে সক্ষম হন। বীজটি বেইজিংয়ের ওল্ড সামার প্যালেস বা ইউয়ানমিং ইয়ুয়ান থেকে পাওয়া যায়।

ইনস্টিটিউটের গবেষক ওয়েই মিয়াওছিন বলেছেন, পদ্মের বীজে একটি বহু-স্তর বিশিষ্ট কাঠামো রয়েছে যা জল এবং বাতাসকে বন্ধ করে দেয়। শুষ্ক, শীতল এবং সিল করা পরিবেশে রাখা হলে তাদের হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে সুপ্ত রাখা সম্ভব।

ওয়েই বলেন, এই প্রাচীন বীজগুলোকে পুনরুত্থিত করার ফলে আজকে মানুষ প্রাচীন ফুল কেমন ছিল সেটা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছে। এগুলো আধুনিক জাতের চেয়ে কম পাপড়িযুক্ত বলে জানান তিনি । ওয়েই বলেন, ‘এটা ঠিক টাইম ট্রাভেলের মতো। আমরা সেই একই ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি যার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছিলেন আমাদের পূর্বপ্রজন্মের মানুষরা।’

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। এখন বর্ষাকাল চলছে। বৃক্ষরোপণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মৌসুম। আসুন এই বর্ষামৌসুমে আমরা আমাদের চারপাশকে সবুজ করে তুলি। ব্যালকনিতে, ছাদে, বাড়ির সামনে যে কোন স্থানে ছোট বড় যে কোন রকম বাগান গড়ে তুলি।

আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn