বাংলা

মানুষ ও প্রকৃতি পর্ব ২

CMGPublished: 2024-06-23 22:45:43
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. হাইথাং ফিরে গেল সাগরের জলে

২. চীনের ৭ বছরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনায় যা থাকছে

৩. প্রকৃতি সংবাদ : বিরল প্রজাতির প্রাণী আনজি স্যালামান্ডার

নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।

হাইথাং ফিরে গেল সাগরের জলে

নীল সমুদ্রে মুক্ত স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো এক তিমি। নাম তার হাইথাং। একদিন ভীষণ বিপদে পড়ে সে। আহত হয়, আটকে পড়ে সাগর সৈকতে। কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার পেল হাইথাং, ফিরে যেতে পারলো কি তার চিরচেনা পরিবেশে? শুনবো প্রতিবেদনে।

সুনীল সাগর। এক ঝলকে সাগরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো তিমিমাছ হাইথাং। সে ফিরে গেলো তার সুনীল আবাসে। দক্ষিণ চীনের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক জাহাজ থেকে রোববার অবমুক্ত করা হয় শর্ট ফিনড পাইলট হোয়েল (খাটো ডানা পাইলট তিমি) হাইথাংকে। ৩ জানুয়ারি পুরুষ তিমি হাইথাংকে আহত ও আটকে পড়া অবস্থায় সানইয়া শহরের হাইথাং উপসাগর থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৪৫ দিন তাকে হাইছাং প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয় এবং তার নামকরণও করা হয়।

অলাভজনক সংস্থা ব্লু রিবন ওশেন কনজারভেশন অ্যাসোসিয়েশন (বিআরওসিএ) এর সেক্রেটারি জেনারেল পু বিংমেই বলেন, ‘এই প্রথম চীনে কোনো শর্টফিনড পাইলট তিমিকে সফলভাবে উদ্ধার ও অবমুক্ত করা সম্ভব হলো।’

এই ঘটনাটি সামুদ্রিক প্রাণীদের উদ্ধার, অবমুক্তকরণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। পু জানান, প্রথমদিকে হাইথাং এত দুর্বল ছিল যে তার জলে ডুবে মৃত্যুর আশংকা ছিল। একশ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক তার দেখাশোনা করেন। একবার ভয় ও মানসিক উদ্বেগ থেকে হাইথাং একজন স্বেচ্ছাসেবককে আক্রমণও করে বসে।এরপরও স্বেচ্ছাসেবকরা তার যত্নে ত্রুটি ঘটতে দেননি।

প্রাণী চিকিৎসক সিয়ং ছুনলিন জানান ‘১৪৫ দিনে হাইথাং ৩.৬ মিটার থেকে বেড়ে ৩.৭ মিটার হয়েছে । তার বুকের মাপ ১.৯ মিটার থেকে প্রসারিত হয়ে ২ মিটার হয়েছে।’ ৭ মে বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে হাইথাংকে সমুদ্রের জলে অবমুক্ত করা যাবে এবং সে বন্য অবস্থায় টিকে থাকতে পারবে।

মুক্তির পরিকল্পনার পর হাইছাং প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র তিমির জন্য একটি বিশেষ ধরনের জলের ট্যাংক তৈরি করে, পরিবহনের জন্য বিশেষ ধরনের যান এবং জাহাজের খোঁজ করে। এর অবস্থা ট্র্যাক এবং নিরীক্ষণ করতে, বিজ্ঞানীরা এর পিছনে একটি ডিভাইস সংযুক্ত করেছেন। বেশ কয়েকবার মহড়ার পর হাইথাংকে খোলা সমুদ্রে ছেড়ে দেয়া হয়।

পু বিংমেই বলেন "আমি নিশ্চিত যে হাইথাং তার বাড়ি খুঁজে পাবে এবং সমুদ্রে স্বাস্থ্যকরভাবে বসবাস করতে পারবে।’

হাইথাং এখন সুনীল সাগরে গড়ে নিয়েছে তার নিজস্ব নীড়।

চীনের ৭ বছরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিকল্পনায় যা থাকছে

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চীন আগামি ৭ বছরের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে ।

৭টি প্রধান লক্ষ্য এবং ২৮টি প্রকল্প নিয়ে চীন একটি সাত বছরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মসূচি চালু করবে। সম্প্রতি এমনটা জানিয়েছে চীনের প্রতিবেশ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

এ কর্মসূচিতে থাকছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জরিপ, কিছু প্রজাতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করা।

দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের উচিশান শহরে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

চীন আগামী দশকে একটি সম্পূর্ণ জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে ওই কর্মসূচিতে বলা হয়।

এই বছর চীন গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকাগুলোয় প্রাথমিক জরিপ পরিচালনা করবে। তাতে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বন্য প্রাণীর প্রজনন, ইকোসিস্টেমের বণ্টন এবং ইয়েলো রিভারের উৎসমুখে মানুষের কার্যক্রমের প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে।

২০১২ সাল থেকে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ৩০টিরও বেশি আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করেছে চীন। এ ছাড়া জাতীয়ভাবে সুরক্ষিত বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের তালিকাও সংশোধন করা হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য জাতীয় উদ্যান নির্মাণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাণীর সুরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত করেছে।

ফলস্বরূপ, দেশটির ৪৩ শতাংশেরও বেশি এলাকা এখন প্রাণীর মানসম্পন্ন আবাসস্থল হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জায়ান্ট পান্ডা, হাইনান ব্ল্যাক-ক্রেস্টেড গিবন এবং সাগো পামের মতো বিরল বন্যপ্রাণীর সংখ্যা।

সম্প্রতি চীনের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের জন্য ১৬টি এলাকা মনোনীত করার পরিকল্পনাও জারি করেছে।

চীনের জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক চাং তেহুই জানালেন,

‘২০৩৫ সালে চীন প্রায় ১০টি জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন স্থাপনের চেষ্টা করবে। এতে ৮০ শতাংশ বুনো গাছপালা এবং ৭০ শতাংশেরও বেশি বিরল গাছপালা সুরক্ষিত করা যাবে।’

পৃথকভাবে, চায়না একাডেমি অব সায়েন্সেসের জীববৈচিত্র্য কমিটি বুধবার ক্যাটালগ অব লাইফ চায়না ২০২৪ বার্ষিক চেকলিস্ট প্রকাশ করেছে। এতে মোট এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৪ প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত আছে। ২০২৩ সালের করা তালিকার চেয়ে যাতে ৬৪২৩টি প্রজাতি এবং ২৬৭টি উপপ্রজাতি বেড়েছে।

প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

প্রকৃতি সংবাদ

চীনে বেড়েছে বিরল প্রজাতির আনজি স্যালামানডারের সংখ্যা

চীনে বেড়েছে বিরল প্রজাতির উভচর প্রাণী আনজি স্যালামান্ডারের সংখ্যা। পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশে ২০০৬ সালে যেখানে আনজি স্যালামানডারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০, এখন সেখানে ৬০০ এর বেশি এই উভচর প্রাণী রয়েছে।

বিরল উভচর প্রাণীটিকে চীনে প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষিত প্রাণী হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

সম্প্রতি গবেষকরা তাদের মাঠ গবেষণার সময় আনজি বনাঞ্চলে বন্য অবস্থায় আনজি স্যালামান্ডারের লার্ভার সন্ধান পেয়েছেন। সাধারণত এই প্রজাতি মে মাসের শেষ দিকে তাদের পাখনা হারাতে শুরু করে।

গবেষকরা দেখেছেন যে, এই বন্য স্যালামান্ডারটি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম নেয়া স্যালামান্ডারের চেয়ে দশ গুণ বড়। জুন বা জুলাই মাস নাগাদ এটি পাখনা হারিয়ে জল থেকে উঠে এসে ডাঙায় বাস করা শুরু করবে।

বাসস্থান হারানো, শীতকালে খাদ্যের অভাব এবং একই ধরনের প্রজাতির শিকারে পরিণত হওয়ায় বন্য আনজি স্যালামান্ডার বেশ বিরল প্রাণী।

সাউথওয়েস্ট ইউনিভারসিটির স্নাতক ছাত্র হুয়াং চেনইয়াং বলেন, ‘আমরা অনুমান করি যে এটি লার্ভা খায় বলে এত দ্রুত বৃদ্ধি পায়’।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ১০০টি স্যালামান্ডার ডিমের মধ্যে, মাত্র তিন থেকে পাঁচটি সফলভাবে বন্য প্রকৃতিতে বেঁচে থাকতে পারে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

কণ্ঠ: আফরির মিম

সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় হোক, ছাদে কিংবা ঘরের ছোট্ট ব্যালকনিতে, আসুন গড়ে তুলি নিজস্ব বাগান। অপ্রয়োজনে গাছ কাটা বন্ধ করি। নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn