বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০৫৩

CMGPublished: 2024-01-14 18:51:37
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ডিস্পনিয়ার টিসিএম চিকিৎসা কী?

আপনি কি হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন? আপনার কি মনে হচ্ছে যে, আপনার ফুসফুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাতাস নিতে পারছে না? এমন অনুভূতি হলে আপনি ডিস্পনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। ডিস্পনিয়া এক ধরনের শ্বাসকষ্ট।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা-টিসিএমে মনে করা হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট এই ইঙ্গিত দেয় যে, আপনার দেহে মূল শক্তি বা ‘ছি’য়ে ঘাটতি রয়েছে। যখন আপনার শরীর খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি-শক্তি পায় না, তখন ‘ছি’য়ে ঘাটতি দেখা দেয়। অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল আপনার প্লীহা ও পাকস্থলীর কার্যকারিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, ফোলাভাব ও বর্ণহীনতা দেখা দিতে এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

ডিস্পনিয়ার লক্ষণ ও কারণ: কঠোর পরিশ্রমের পর স্বল্পমেয়াদী শ্বাষকষ্ট অনুভব করা স্বাভাবিক, তবে ব্যায়ামের পর স্বাভাবিকের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে, সেটা নির্দেশ করে, গুরুতর কিছু হয়ে থাকতে পারে৷ শ্বাসকষ্ট শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার পরে এক বা দুই মিনিট স্থায়ী হতে পারে বা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। এ সমস্যার দুটি ভিন্ন স্তর রয়েছে। একটি হালকা স্তর, যে স্তরে আপনার মনে হবে অপর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু আপনার ফুসফুসে যাচ্ছে এবং অন্যটি গুরুতর। গুরুতর স্তরে আপনি অনুভব করবেন যেন আপনার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

অন্য সেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা স্বল্পমেয়াদী ডিস্পনিয়া ঘটাতে পারে, সেগুলো হলো নিম্ন রক্তচাপ, নিউমোনিয়া, মানসিক চাপ বা উদ্বেগ, ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস, ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট ফেইলিউর, তাপমাত্রায় মারাত্মক পরিবর্তন, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ এবং গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়া। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘস্থায়ী যে কোনও ধরনের ডিস্পনিয়ায় ভুগতে পারেন।

টিসিএমে মনে করা হয়, শ্বাসকষ্ট সেইসব ব্যক্তিদের হয়, যারা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অভ্যস্ত থাকেন, বেশি পরিশ্রম করেন এবং যাদের জিনগত দুর্বলতা থাকে।

কোন ব্যক্তি যখন অত্যধিক ক্ষুধার্ত থাকেন, যখন অত্যধিক আহার করেন কিংবা যখন অনিয়মিতভাবে খাবার খান, তখন সেটা প্লীহা ও পাকস্থলীকে দুর্বল করে দেয় এবং ‘ছি’ ও রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে বিভিন্ন অঙ্গে ‘ছি’র ঘাটতি দেখা দেয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে মেজাজ ভারসাম্যহীন হয়, যেটা প্লীহায় ‘ছি’ ও রক্তের জৈব রসায়নকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এটি যখন ঘটে, তখন অঙ্গগুলো পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না।

চিকিৎসা

ভেষজ: আপনি যদি ডিস্পনিয়ায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনার ডায়েটে ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, ফাইটোকেমিক্যালস ও ভিটামিনযুক্ত খাবারের পাশাপাশি কতগুলো টিসিএম ভেষজ অন্তর্ভুক্ত করুন। দেহের ‘ছি’র ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে আপনার হজম শক্তি ও শরীরে পুষ্টিগ্রহণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কিছু ভেষজ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন জিনসেং, কোডোনোপসিস, অ্যাস্ট্রাগালাস রুট, চীনা আলু ও জুজুব বা চীনা খেজুর। এগুলো শক্তিদায়ী ভেষজ বলে পরিচিত।

‘ছি’র ঘাটতি দূর করার জন্য ঘরে একটি পানীয় তৈরি করে নিতে পারেন। এটির নাম আমেরিকান জিনসেং-নাশপতি ড্রিংক। প্রথমে ২৫ গ্রাম আমেরিকান জিনসেং, ২টি খোসা ছাড়ানো নাশপাতি এবং ৩টি শুকনো জুজুব নিন। এরপর ২ লিটার পানিতে সেগুলো ভিজিয়ে এবং স্বাদমতো চিনি দিয়ে ঘন্টাখানেক জ্বাল দিয়ে পান করুন।

আকুপাংচার: ডিস্পনিয়া নিয়ন্ত্রণে আকুপাংচার একটি ভালো উপায়। নির্দিষ্ট পয়েন্টে আকুপাংচার শরীরের ‘ছি’তে ভারসাম্য আনার পাশাপাশি ফুসফুস ও কিডনিকে শক্তিশালী করে এবং শ্বাসনালীকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে। জার্নাল অব পেইন অ্যান্ড সিম্পটম ম্যানেজমেন্টের ২০২০ সালের এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্টের তীব্রতা কমায় আকুপাংচার।

নিয়মিত ব্যায়াম: ডিস্পনিয়ার উপসর্গ প্রশমনের আরেকটি উপায় হলো ব্যায়াম। তবে ব্যায়ামে যাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম না হয়, সেজন্য ধীর গতিতে এটা করতে হবে। আর আপনার যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনও রোগ থাকে, তাহলে নিরাপদ ব্যায়ামের রুটিনের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন।

#ভেষজের গুণ

কত গুণ আখরোটের!

আখরোট খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ কম পাওয়া যাবে। এ বাদামটি জনপ্রিয় কেবল তার স্বাদের জন্য নয়, তার পুষ্টিগুণের জন্যও। আখরোটে থাকা ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রোটিন ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নানাভাবে শরীরের উপকার করে। চলুন জেনে নিই আখরোট স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে: আখরোট কেবল দেখতে মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতির মতো নয়, এটি মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্যও করে। এতে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এই কাজে ভূমিকা রাখে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে আখরোট। এর ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, পলিফেনলস ও ইউরোলিথিন ক্যান্সারবিরোধী বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। তাই স্তন, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে আখরোট। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চের গবেষণায় এর প্রমাণ মিলেছে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে আখরোট। এতে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য উপকারী। নিয়মিত আখরোট খেলে, সেটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় আবার অন্যদিকে ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়।

হাড় শক্ত করে: আখরোটে আছে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড নামে একটি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড হাড়কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে আখরোটে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডও হাড় ভালো রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আখরোট। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক রাখে। এছাড়া আখরোটে আছে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেমন তামা ও ভিটামিন বি সিক্স, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় উপকারী: গর্ভবতী নারীর জন্য আখরোট খুব উপকারী। এ বাদামে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন ও থিয়ামিন। এগুলো হবু মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আখরোটে থাকা ফলিক এসিড গর্ভবতী ও অনাগত সন্তানের জন্যও উপকারী।

ঘুমে সাহায্য করে: আখরোটে থাকা মেলাটোনিন ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। আখরোটের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং চাপ উপশম করে, যার ফলে ভালো ঘুম হয়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: আখরোট খেলে অন্ত্রে বসবাসকারী উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বাড়ে। এতে খাবার সহজে হজম হয় ও আমাদের অন্ত্র ভালো থাকে।

তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে: নিয়মিত আখরোট খেলে শরীর তো ভালো থাকবেই, ত্বকও থাকবে টানটান। উপকারী এই বাদামে থাকা তেল, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীরে করে দিতে পারে।

সতর্কতা: যেকোনো খাবারই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। আখরোটের বেলায়ও এ নিয়ম প্রযোজ্য। অতিরিক্ত পরিমাণে আখরোট খেলে অ্যালার্জি বা লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর কালো আখরোট অতিরিক্ত খেলে এতে থাকা ফাইটেটস শরীর থেকে আয়রন শুষে নিয়ে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn