বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০৪৭

CMGPublished: 2023-12-03 19:24:59
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

মাম্পস চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ভেষজ ওষুধ

মাম্পস ভাইরাস-সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। সাধারণত কয়েক দিনের জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, ক্লান্তি ও ক্ষুধামন্দা দিয়ে এ রোগের সূচনা হয়। তারপর লালাগ্রন্থি ফুলে যায়। এর কারণে গাল ও চোয়ালও ফুলে যায়।

চীনা ভাষায় মাম্পসকে ‘চাসাই’ বলা হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে এ রোগের চিকিৎসার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম ভেষজ চিকিৎসা এবং আকুপাংচার।

টিসিএমে মনে করা হয়, শরীরের ১৪টি মেরিডিয়ান দিয়ে ‘ছি’ বা মূল প্রাণশক্তির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ বজায় রাখার মধ্য দিয়ে সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়। ‘ছি’ হলো শরীরের তাপশক্তি বা ‘ইয়াং’ এবং ঠান্ডাশক্তি বা ‘ইয়িন’-এর সমন্বয়। এ চিকিৎসাব্যবস্থায় মনে করা হয়, মাম্পস হয় মূলত ‘শাওইয়াং’ ও ‘ইয়াংমিং’ মেরিডিয়ানে তাপশক্তি ও 'পাইরেটিক টক্সিসিটি' জমা হওয়ার কারণে। এর ফলে ‘ছি’ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কান ও গাল এবং সেগুলোর আশপাশে এসব আটকে পড়ে।

টিসিএমে মাম্পসসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ভেষজ ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে। চীনা চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন, চীনা ভেষজ মাম্পস সারতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে লক্ষণভেদে রোগীদের আলাদা আলাদা ভেষজ ফর্মুলেশন ব্যবহার হয়। যেমন, জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় জিপসাম ফাইব্রোসাম এবং ব্যথানাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয় বুপ্লেউরাম চাইনিজ ডিসি। মাম্পস চিকিৎসার সাধারণ ভেষজ উপকরণগুলোর মধ্যে থাকে রেডিক্স স্কুটেলারিয়া, চাইনিজ গোল্ডথ্রেড, চেচিয়াং ফিগওয়ার্টের মূল, রেশম পোকার লার্ভা, জিপসাম ফাইব্রোসাম, রেডিক্স আইসাটিডিস, রেডিক্স স্কুটেলারিয়ার ইত্যাদি। বিভিন্ন প্যাথলোজিক্যাল গবেষণা দেখা গেছে, ফ্লোস লনিসেরা ও রেডিক্স আইসাটিডিসে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান রয়েছে আর রেডিক্স স্কুটেলারিয়ারে রয়েছে অ্যান্টিফ্লোজিস্টিক বৈশিষ্ট্য।

মাম্পসের চিকিৎসায় চীনে আকুপাংচার ব্যবহৃত হচ্ছে শত শত বছর ধরে। আকুপাংচার ফোলা ও ব্যথা দূর করে এবং রোগের সময়কাল কমায়। টিসিএম মনে করা হয়, আকুপাংচার আটকে পড় ‘ইয়াং’ বের করে দিতে, প্যাথোজেনিক তাপ পরিষ্কার করতে, বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে ব্যথা উপশম করতে এবং ‘ছি’র প্রবাহকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। এইভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে পারে আকুপাংচার।

#চিকিৎসার_খোঁজ

নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল

নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিযে গত শোয়াশো বছরে অনেকদূর এগিয়েছে শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল বা এসপিএইচ। চিয়াওচি রেলপথ নির্মাণের সময় ১৯৯৭ সালে জার্মান ক্যাথলিক চার্চ চিনান শহরে ‘অ্যালায়েন্স হসপিটাল ফর সোলজারস’ প্রতিষ্ঠা করে। সে হাসপাতালের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে আজকের শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল। সময়ের পরিক্রমায় অনেকবার নাম বদলেছে এ হাসপাতালের। ১৯১৫ সালে এটি ‘জিনান হাসপাতাল’ এবং জাপানি দখলদারিত্বের সময় ‘থংরেন সোসাইটি চিনান হসপিটাল’ নামে পরিচিতি পায় এটি। জাপানকে হটানোর পর এটার বর্তমান নামকরণ করা হয়। এরপর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের চিকিৎসা পেশাজীবীরা এ হাসপাতালের পথচলাকে আলোকিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সুযোগে এর উন্নয়ন করেছেন। নতুন শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। হাসপাতালটি শানতুংয়ের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে।

চিনানের তুংসিয়াংলি এলাকায় অবস্থিত শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল একটি বৃহৎ আকারের সার্বিক সরকারি হাসপাতাল হিসাবে বিকশিত হয়েছে। চিকিৎসাসেবা, শিক্ষাদান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, রোগপ্রতিরোধ ও স্থানীয় চিকিৎসার অসাধারণ একটি কেন্দ্র এটি। একটি জেনারেল হাসপাতাল হিসাবে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এখানে।

এ হাসপাতাল শানতুং বিশ্ববিদ্যালয়, শানতুং রেড ক্রস সোসাইটি হাসপাতাল এবং শানতুং অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অধিভুক্ত। কেন্দ্রীয় হাসপাতাল এবং পূর্ব হাসপাতাল – এ দুটি শাখা নিয়ে গঠিত শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল। সাড়ে ৩ হাজার শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে বছরে সাড়ে ৩ লাখ রোগী চিকিৎসা নেয়। আর বছরে এখানে ভর্তি করা হয় দেড় লাখের মতো রোগী, যাদের প্রায় অর্ধেককে শল্য চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেবার পরিধির দিক থেকে হাসপাতালটি শানতুং প্রদেশের প্রথম স্থানে রয়েছে। চীনের হাসপাতাল নিয়ে করা বিভিন্ন র‌্যাংকিংয়েও উঁচু অবস্থানে রয়েছে শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল। যেমন সারা চীনের হাসপাতাল নিয়ে ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ৪২তম, পূর্ব চীনের শীর্ষ সামর্থের হাসপাতালের র‌্যাংকিংয়ে ১৬তম এবং দেশের শীর্ষ ১০০ হাসপাতালের মধ্যে এর অবস্থান ৩৪তম।

এ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ চিকিৎসার নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। এর অধীনেই গড়ে উঠেছে এসপিএইচ শানতুং শিশু হাসপাতাল, শানতুং প্রাদেশিক অর্থোপেডিক হাসপাতাল এবং শানতুং প্রাদেশিক স্টোমাটোলজিকাল হাসপাতালের মতো বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতালে রয়েছে ১১৯টি ক্লিনিক্যাল ও চিকিৎসা বিভাগ, ১০টি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্ব ক্লিনিক্যাল বিশেষত্ব, ২৯টি প্রাদেশিক পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল বিশেষত্ব ও ক্লিনিক্যাল মেডিসিন গবেষণা কেন্দ্র এবং ১৪টি ক্লিনিক্যাল মেডিসিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

অতি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাদারদের একটি বিশাল দল কর্মরত এ হাসপাতালে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শানতুং প্রদেশের ৫জন ‘ডুয়াল অ্যাকডেমিশিয়ান’ ১৪জন ‘থাইশান স্কলার’, জাতীয় প্রতিভা প্রকল্পের ২জন বিশেষজ্ঞ, প্রাদেশিক স্তরে ‘অসামান্য অবদান রাখা ২২ জন বিশেষজ্ঞ, এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিশেষ ভাতাভোগী ৪৯জন বিশেষজ্ঞ।

শানতুং প্রাদেশিক হাসপাতাল উন্নত চিকিৎসা দক্ষতা অর্জন এবং উদ্ভাবনে নিবেদিত। এটি দুটি জাতীয় উদ্ভাবন পুরস্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য দুটি জাতীয় পুরস্কার, প্রাদেশিক ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ের ১৪টি প্রথম পুরস্কার, শানতুং প্রদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের একটি শীর্ষ পুরস্কার অর্জন করেছে। হাসপাতালটি বিভাগীয় স্তরের ১৪১টি পুরস্কারও লাভ করেছে।

#ভেষজের গুণ

কত গুণ আমলকির!

‘আমলকি’ একপ্রকার ভেষজ ফল। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘সি’ থাকে। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতে আমলকির ভূমিকা অসাধারণ। চলুন জেনেন নিই আমলকির বিভিন্ন পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ সম্পর্কে:

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমলকি খেলে তা খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে ধমনীর ব্লক খুলে দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকি খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে সলিউবল ফাইবার থাকে। এটি শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে এবং হজমে সাহায্য করে। এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

মাড়ির স্কার্ভি সারে: স্কার্ভি দাঁতের মাড়ির খুব পরিচিত একটি রোগ। সাধারণত শরীরে ভিটামিন ‘সি’র অভাবে এ রোগ হয়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাই নিয়মিত আমলকি খেলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

রক্তের সুগার কমায়: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকিতে থাকা পলিফেনল রক্তের অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীর রক্ষা করে। এটি শরীরে ইনসুলিন শুষে নিতে সাহায্য করে, যা প্রকারন্তরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। তাই দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ফলটি। এছাড়া চোখ লাল হওয়া, চুলকানো ও চোখ দিয়ে পানি পড়া রোধেও এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।

চর্বি কমায়: নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের প্রোটিনের স্তর বৃদ্ধি পায়, যার কারণে দেহের চর্বি কমে। এছাড়া এটি খেলে হজম শক্তি বাড়ে, যার ফলে শরীরের ওজন বাড়ে না।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn