বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০৪০

CMGPublished: 2023-10-15 21:03:16
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উদযাপনের খবর।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ইটিং ডিজঅর্ডার নিরাময়ে টিসিএম

ইটিং ডিজঅর্ডার বা খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা এক ধরনের মানসিক রোগ। এ রোগের কারণে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে। খাবার, শরীরের ওজন বা শরীরের আকৃতি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা দেখা দেয় এ রোগ হলে। ইটিং ডিজঅর্ডার যখন গুরুতর রূপ নেয়, তখন তা খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে এবং সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে৷ আসলে ইটিং ডিজঅর্ডার সবচেয়ে মারাত্মক মানসিক রোগগুলোর একটি৷ ইটিং ডিজঅর্ডার নিয়ে আমাদের সমাজে তেমন আলোচনা না হলেও পরিসংখ্যান বলছে, এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন৷

ইটিং ডিজঅর্ডার বিভিন্ন ধরনের এবং এর উপসর্গেও থাকে ভিন্নতা। তবে প্রতিটি ধরনেই যেটা অভিন্ন সেটা হলো খাবার ও ওজন সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে রোগীর অতিরিক্ত চিন্তা। এ রোগের যেসব সাধারণ উপসর্গ থাকে সেগুলো হলে ওজন হ্রাস, জনসমক্ষে খাওয়া নিয়ে উদ্বেগ, ওজন, খাদ্য, ক্যালোরি, চর্বি ইত্যাদি নিয়ে অধিক চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, আলস্য, নির্দিষ্ট খাবার না খাইতে চাওয়া, ক্ষুধার অনুভূতি অস্বীকার, ইত্যাদি।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএমে রোগ নির্ণয়ের সামগ্রিক প্রকৃতি খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জটিল মানসিক ও শারীরিক সমস্যাগুলোকে সমন্বিত উপায়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। ইটিং ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রে টিসিএম প্রচলিত মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার বিকল্প নয়; বরং প্রচলিত চিকিৎসার একটি সম্পূরক হিসাবে বিবেচনা করা হয় একে।

ইটিং ডিজঅর্ডারের টিসিএম চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় ভেষজ ফর্মুলা, আকুপাংচার ও সাপ্লিমেন্ট। ভেষজ ফর্মুলার ক্ষেত্রে পেট ফুলে যাওয়া ও হজমের সমস্যার জন্য দেওয়া হয় কুই পাই থাং, মাসিক ঋতুচক্রের সমস্যা এবং শুষ্ক ত্বকের জন্য দেওয়া হয় লিউ ওয়েই তি, বিপাকীয় সমস্যার জন্য দেওয়া হয় টিন বুই শেন কিউই ওয়ান, এবং উদ্বেগ ও আত্ম-ক্ষতিসাধনের ইচ্ছা দমনে দেওয়া হয় থিয়ান ওয়ান পু সিন তান।

ইটিং ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট মেরিডিয়ানে আকুপাংচার দেওয়া হলে তাতে উদ্বেগ, অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক চাপ কমে; আতঙ্ক ও বুক ধড়ফড়ানি দূর হয়; হজমের সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বমি বমি ভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য সারে; ঋতুচক্রের সমস্যা, ক্লান্তি ও অনিদ্রা দূর হয়; এবং দীর্ঘকাল ধরে সীমিত খাদ্য গ্রহণের ফলে বিপাক ব্যবস্থায় যে সমস্যা দেখা দেয় তা সারে।

ইটিং ডিজঅর্ডার দূর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে মাল্টিভিটামিনও। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যানোরেক্সিক বা খাদ্যভীতি এবং বুলিমিকস বা অতিরিক্ত খাদ্যপ্রীতি উভয় ক্ষেত্রেই শরীরে দস্তার পরিমাণ কম থাকে। ফলে জিঙ্কযুক্ত ওষুধ বা খাবার খেলে ইটিং ডিজঅর্ডার সারে।

#চিকিৎসার_খোঁজ

কুনমিংয়ের পাঁচ-তারকা হাসপাতাল রিচল্যান্ড

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের রাজধানী খুনমিংয়ে প্রতিষ্ঠিত রিচল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল বেসরকারি খাতের একটি পাঁচ-তারকা জেনারেল হাসপাতাল। উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে এ হাসপাতালটি অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে।

খুনমিং সিটি ব্যুরো অব হেলথ অনুমোদিত এই হাসপাতালটি জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) মান বজায় রেখে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। এই হাসপাতালে সম্মিলন ঘটেছে চীন ও চীনের বাইরের খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি বড় দলের। আর এটি সজ্জিত হয়েছে বিশ্বমানের সব চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে।

রিচল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ প্রতিষ্ঠার পর গত ১২ বছর এটি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা এবং পশ্চিমা চিকিৎসাব্যবস্থার সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ থেকে জটিল সব রোগব্যাধির চিকিৎসা দিয়ে গেছে। আর এর মধ্য দিয়ে হাসপাতালটি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। পাশাপাশি এটি চীনা জাতির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি ব্যবহার করে মানব জীবনের কোড ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে।

একটি জেনারেল হাসপাতালে সাধারণত যতগুলো বিভাগ থাকে, তার সবই রয়েছে রিচল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ওষুধ, জরুরি ওষুধ, নিবিড় পরিচর্যা ওষুধ, সাধারণ শল্য চিকিৎসা, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি, নিউরোলজি, রেডিওলজি, অর্থোপেডিকস, প্যাথলজি, নেফ্রোলজি, হেমাটোলজি, চক্ষুরোগবিদ্যা, শল্যচিকিৎসা, স্ত্রীরোগ, শিশুরোগ, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, ফিজিওথেরাপি, বহির্বিভাগ, চর্মরোগ এবং রিউমাটোলজি।

রিচল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি ও অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

#ভেষজের গুণ

বিশ্ব দৃষ্টি দিবস ২০২৩ উদযাপিত

‘আপনার চোখকে ভালবাসুন, কর্মস্থলেও’ – এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (অক্টোবর ১২) উদযাপিত হলো বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। দিবসটি উপলক্ষে এদিন ঢাকায় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখ মানুষ অন্ধ এবং ৫১ লাখ মানুষ ক্ষীণদৃষ্টির শিকার।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের প্রধান এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ সেমিনারে বলেন, “একসময় এ দেশে অন্ধত্বের হার ছিল ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কিন্তু সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, এ হার কমে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ এখন ১০০ জনে ১ জনেরও কম বা ১ হাজার জনে ৭ জন অন্ধত্বের শিকার। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে জনসংখ্যার ১২ লাখ মানুষ অন্ধ। অন্যদিকে, ৩ শতাংশ বা ৫১ লাখ মানুষ ক্ষীণদৃষ্টির শিকার।”

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা।

অধ্যাপক ডা. মোস্তফা বলেন, “জনগণের চক্ষু রোগের চিকিৎসা এবং এক্ষেত্রে সেবার দুর্ভোগ কমানোর জন্য ন্যাশনাল আই কেয়ার এ পর্যন্ত উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ২০০টি কমিউনিটি আই কেয়ার সেন্টার স্থাপন করে চক্ষু সেবার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে চক্ষু সেবার কাজে নিয়োজিত ১০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জনগণের দোরগোড়ায় চক্ষু সেবাকে পৌঁছে দিচ্ছে।”

প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দৃষ্টি দিবস উদযাপন করা হয়। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো অন্ধত্ব, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ও চোখের যত্নের বিষয়ে বিশ্ব জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তোলা।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক অফথালমোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমানে দৃষ্টিজনিত মূল সমস্যা হলো ছানি, গ্লুকোমা ও রেটিনার সমস্যা। তিনি আরও বলেন, “এছাড়া ডায়াবেটিসজনিত চোখে সমস্যা এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।”

আইএনজিও ফোরামের চেয়ারম্যান এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা দূর করার ক্ষেত্রে সরকারের সাথে এনজিও ও বেসরকারি খাত সমন্বিতভাবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তিনি বলেন, “অন্ধত্ব প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা-আইএপিবি’র স্ট্র্যাটেজিক ভিশন ‘ইনসাইট ২০৩০’কে সামনে রেখে মানবাধিকারের অংশ হিসেবে চোখের চিকিৎসাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। চোখের প্রতি যত্নবান হতে উৎসাহিত করতে হবে, সব ক্ষেত্রে।”

সেমিনারে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা জানান, বাংলাদেশে দৃষ্টি সমস্যা কোনও কোনো ক্ষেত্রে কমেছে, আবার নতুন সমস্যা আসছে। তারা জানান, দেশে ছানি অপারেশন অনেক বেড়েছে, যার কারণে ছানিজনিত অন্ধত্ব কমছে। গ্লুকোমা ও রেটিনাজনিত সমস্যাও কমছে আবার জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে ড্রাই আই বা চোখের শুষ্কতা বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে কর্নিয়ার সমস্যা।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চোখের বিভিন্ন সমস্যায় শুধুমাত্র এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নেয়। তাদের তথ্য বলছে, দেশের এক কোটি ৪৩ লাখ লোক দৃষ্টি ত্রুটিতে ভুগছে এবং দিন দিন চোখের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোন ও ট্যাবে ভিডিও গেমসের আসক্তি শিশুদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে পৃথিবীতে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ অন্ধত্ব বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে, যার মধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের অন্ধত্ব বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn