বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০১১

CMGPublished: 2023-03-26 18:26:58
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় টিসিএম

টাইফয়েড অতি সংক্রামক এক ধরনের জ্বর। স্যালমোনিলা টাইফি নামের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে এ রোগ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এ রোগ ক্রমশ ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এবং এর বিভিন্ন ওষুধ-প্রতিরোধী ধরন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বব্যাপী এ রোগ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।

উপসর্গ

টাইফয়েডে তীব্র জ্বর হয়। প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়ার দিন কয়েকের মধ্যে রোগের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। টাইফয়েডের অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ঠান্ডা অনুভব করা, ক্ষুধামন্দা, কাশি, পেশীতে চুলকানি, ত্বকে বিশেষ করে বুক বা পেটের চারপাশে ফুসকুড়ি বা অস্পষ্ট গোলাপী দাগ, বমি বমি ভাব ও বমি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।

কিভাবে ছড়ায় এ রোগ?

স্যালমোনিলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসেছে - আপনি যদি এমন খাবার বা পানি গ্রহণ করেন, তাহলে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি সাধারণত ঘটে যখন একজন সংক্রামিত ব্যক্তি হাত না ধুয়ে আপনার খাবার বা পানীয় স্পর্শ করে। এছাড়া নোংরা টয়লেটের পানি আপনার খাবারের সংস্পর্শে এলেও এ রোগ হতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে ছড়াতে পারে। যেমন, একজন সংক্রামিত ব্যক্তি যদি বাথরুম ব্যবহার করার পর সাবান দিয়ে ভালো করে হাত না ধুয়ে দরজার নব স্পর্শ করেন, তাহলে নবে ব্যাকটেরিয়া থেকে যেতে পারে এবং পরে অন্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

টাইফয়েড নিরাময়ে টিসিএম

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএমে মনে করা হয়, টাইফয়েড জ্বর হলো দূষিত খাবার ও পানিতে থাকা ঠান্ডা, উষ্ণ ও স্যাঁতসেঁতে রোগজীবাণু দ্বারা প্লীহা, পাকস্থলী ও বৃহদান্ত্রের সংক্রমণ। এ সংক্রমণের কারণে এসব অঙ্গের মূল শক্তি বা ‘ছি’য়ে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। টিসিএম চিকিৎসার লক্ষ্য হলো অঙ্গগুলোর মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।

টিসিএম চিকিত্সক ব্র্যান্ডন ইয়েউ’র মতে, টিসিএম ভেষজ ওষুধ, আকুপাংচার, কাপিং, গুয়াশা, মক্সিবাস্টন এবং চীনা ম্যানুয়াল থেরাপি থুইনার মাধ্যমে টাইফয়েড নিরাময় সম্ভব। তবে একজন রোগীর জন্য কোন পদ্ধতিটি উপযুক্ত হবে, সেটা নির্ধারণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

ভেষজ ওষুধ

এবার আমরা তুলে ধরবো টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে কার্যকর কিছু টিসিএম ভেষজ ফরমুলেশন। এগুলো বেশিরভাগই উপসর্গ-ভিত্তিক চিকিৎসা। যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা ও পেট ফাঁপার ক্ষেত্রে টিসিএম চিকিৎসকরা যেসব ফরমুলেশন ব্যবহারের সুপারিশ করেন সেগুলো হলো সিয়ে হুয়াং সান, ফাং ফেং থুং শেং সান, সান হুয়াং সিয়ে সিন থাং, কা কান ছিন লিয়ান থাং এবং সিয়াং লিয়ান ওয়ান। এসব উপসর্গের পাশাপাশি যখন ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা এবং ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, তখন সুপারিশ করা হয় বান সিয়া সিয়ে সিন থাং, ফাং ফেং থুং শেং সান, লিয়ান ফু ইয়িন, হুও সিয়াং চাং ছি সান, লিয়াং ফু ওয়ান এবং মু সিয়াং পিং ল্যাং ওয়ান।

আকুপ্রেসার

টাইফয়েড নিরাময়ের একটি ভাল উপায় আকুপ্রেসার। এটি একটি সহজ স্ব-সহায়ক প্রতিকার, যা আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন নির্দিষ্ট আকুপয়েন্টে আঙ্গুল বা ম্যাসাজ স্টিকের সাহায্যে। ব্যথা বা কোমলতার সহনীয় সংবেদন জাগিয়ে তুলতে উপযুক্ত পরিমাণে চাপ প্রয়োগ করুন। একই সাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে বৃত্তাকারভাবে ২০ বার ম্যাসাজ করুন। প্রতি আকুপয়েন্টে কমপক্ষে ৩ মিনিট ধরে এমনভাবে ম্যাসাজ করুন।

#চিকিৎসার_খোঁজ

সিয়ান চিয়াওথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল

সিয়ান চিয়াওথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শানসি প্রদেশের রাজধানী সিয়ানে অবস্থিত একটি জেনারেল হাসপাতাল। এটি চীনের সর্বোচ্চ স্তরের হাসপাতালগুলোর একটি। পাশাপাশি এটি চীনের শীর্ষ ‘একশত অনুকরণীয় হাসপাতাল’র একটি। জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ হাসপাতালের আগের নাম ছিল সিয়ান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল।

১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ হাসপাতালটি চিকিৎসা, চিকিৎসা-শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে ২ হাজার ৪৯৭ শয্যার এ হাসপাতালটি উত্তর-পশ্চিম চীনে চিকিৎসা প্রযুক্তি, চিকিৎসার গুণমান এবং চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং রোগীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। এখানে রয়েছে একদল অতিদক্ষ চিকিৎসাকর্মী, যাদের মধ্যে ৫২৬ জন জ্যেষ্ঠ পেশাদার হিসাবে স্বীকৃত। এ হাসপাতালের বিস্তৃত স্পেশালিটির মধ্যে ইউরোলজি ও চর্মরোগবিদ্যা বিভাগ জাতীয়-পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ স্পেশালিটি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দেয় এ হাসপাতাল। ২০১৪ সালের হিসাবে দেখা যায়, ওই বছর ২ কোটি ১২ লাখ রোগী এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন, যাদের মধ্যে ১০ লাখ ৩ হাজার রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এবং ৩২ হাজার শল্যচিকিৎসা নেন। লিভার প্রতিস্থাপন, কিডনি প্রতিস্থাপন, হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল প্রতিস্থাপন, করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং, ইত্যাদি ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় উচ্চ মানের চিকিৎসা-সেবা দেয় এ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান। এটি ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ও সেরিব্রোভাসকুলার রোগ এবং বিপাকীয় রোগের মতো জটিল রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা প্রদান করে।

অনেক প্রথমের জন্ম দিয়েছে সিয়ান চিয়াওথুং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল। এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই হয়েছে চীনের প্রথম অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণের ঘটনা, উত্তর-পশ্চিম চীনের প্রথম টেস্টটিউব শিশুর জন্ম এবং উত্তর-পশ্চিম চীনের প্রথম মেসেনকাইমাল স্টেম সেল (এমএসসি) এবং হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের ঘটনা।

এই হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানের এবং এটি চীনের তৃতীয় শীর্ষ কিডনি প্রতিস্থাপন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ হাসপাতালটি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কারের দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে।

প্রথম অধিভুক্ত হাসপাতাল ৫ ও ৭ বছর মেয়াদী কোর্সের স্নাতক শিক্ষার্থীদের এবং ৮ বছর মেয়াদী পিএইচডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করে। হাসপাতালটি প্রতি বছর ১শ’র বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী গ্রহণে করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। এখানকার কর্মীরা ৫৭টি জাতীয় চিকিৎসা পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সাম্প্রতিক ৫ বছরে হাসপাতালটি ‘ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড মেডিক্যাল স্কুল ক্লিনিকাল স্কিল’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরষ্কার এবং প্রাদেশিক পর্যায়ের শিক্ষাদান পুরস্কারে প্রথম ও ও দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে।

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

টিসিএম ঘড়ি মেনে চলুন

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএম ঘড়িতে ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত সময়কে বৃহাদান্ত্রের প্রতি মনযোগ দেওয়ার সময় বলে মনে করা হয়। এসময় ঘুম থেকে জাগুন, বাথরুমে যান এবং শরীরকে বিষমুক্ত করুন। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পেটের যত্ন নেওয়ার সময়। এ সময় একটি সম্পূর্ণ, সুষম ব্রেকফাস্ট গ্রহণ করুন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যর্ত সময়টুকু হার্টের সুস্থতার জন্য বরাদ্দ রাখুন। এ সময় একটি ভাল মধ্যাহ্নভোজন উপভোগ করুন এবং বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করুন, গল্পসল্প করুন। বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মূত্রাশয়ের দিকে নজর দেওয়ার সময়। এই সময় পরিমিত পরিমাণ পানি ও চা পান করুন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়ে মনকে প্রশান্ত করার ওপর গুরুত্ব দিন। এ সময় কিছুটা মেডিটেশন করুন এবং ফোনসহ ডিজিটাল ডিভাইসের উজ্জ্বল আলো এড়িয়ে চলুন। রাত ১১ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সময় গলব্লাডারের স্বাস্থ্যর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ুন এবং ৭-৮ ঘন্টার একটি ভাল ঘুম দিন। একটি ভালো ঘুম আপনার শরীরকে পরের দিনের জন্য পুনরুজ্জীবিত করবে।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn