বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০০৮

CMGPublished: 2023-03-05 17:36:34
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

ব্রঙ্কাইটিস নিরাময়ে টিসিএম

ব্রঙ্কাইটিস হলো শ্বাসযন্ত্রের এক ধরনের সংক্রমণ, যার কারণে ব্রঙ্কিয়াল টিউব বা শ্বাসনালী স্ফীত হয়। এ রোগ হলে সাধারণত বুকে কফ জমে যায়, কফসহ কাশি হয় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সাধারণ সর্দি বা নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে যে ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ, সেই একই ধরনের ভাইরাসের কারণে ঘটে তীব্র ব্রঙ্কাইটিস।

তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস বলতে ফুসফুস ও ব্রঙ্কিয়াল টিউবগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহকে বোঝায়, যা আসলে সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যদি একজন ব্যক্তির শ্লেষ্মাসহ কাশি থাকে, যা মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর স্থায়ী হয়, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস। এটি ধূমপান, বায়ু দূষণ ইত্যদি কারণে ঘটতে পারে।

এমফিসেমার মতো দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসকে একটি দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা ফুসফুসের তীব্র প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফুসফুসে আরও কিছু রোগ হয়, যেগুলো ব্রঙ্কাইটিসের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে হাঁপানি, সাইনোসাইটিস, হুপিং কাশি ও যক্ষ্মা।

অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাল সংক্রমণের চিকিৎসায় কোন কাজ করে না। তাই ব্রঙ্কাইটিসের চিকিত্সায় সাধারণত কাশি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যথা কমানোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএমে আকুপাংচার ও ভেষজ দিয়ে কোনও রকমের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্রঙ্কাইটিস থেকে মুক্তি মিলতে পারে। টিসিএম ফুসফুসকে আক্রান্ত করে এমন প্যাথোজেন ও ফুসফুসের ব্লকেজগুলো অপসারণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্রঙ্কাইটিস দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং সারার পর আবার ফিরে আসে না।

ব্রঙ্কাইটিস চিকিৎসায় আকুপাংচারের কার্যকারিতা

টিসিএম তত্ত্ব অনুসারে, ব্রঙ্কাইটিস হয় তখন, যখন বায়ু ও ক্লেদের মতো রোগ সৃষ্টিকারী শক্তি ফুসফুস ও অন্যান্য সেইসব অঙ্গ-সিস্টেমকে আক্রমণ করে যা পরস্পর সম্পর্কিত। একজন আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ আলাদা আলাদা রোগীর মধ্যে লক্ষণের আলাদা প্যাটার্ন খুঁজে বের করেন এবং সে অনুযায়ী আকুপাংচার ও ভেষজ নির্ধারণ করে দেন। ব্রঙ্কাইটিস নিরূপণে টিসিএমে যেসব বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলো হলো ফুসফুসের আর্দ্রতা, ফুসফুসের ঘাটতি, ফুসফুসের শুষ্কতা, ফুসফুসে বাধাসৃষ্টিকারী কফ-তাপ, বাতাসের আক্রমণ, প্লীহার ‘ছি’ বা মূল শক্তির ঘাটতি, প্লীহা ও কিডনির ইয়াং বা উষ্ণ-শক্তি এবং ‘ছি’ ও ‘ইয়িন’ বা ঠান্ডা শক্তির ভারসাম্যহীনতা।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণ-পরবর্তী দীর্ঘস্থায়ী কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে আকুপাংচার ও টিসিএম ভেষজ প্রচলিত ওষুধের তুলনায় বেশি কার্যকর। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, আকুপাংচার শ্বাসনালীর প্রদাহ ও ক্ষতি কমাতে, কাশি উপশম করতে এবং কফ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।

কীভাবে দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত রোগীরা, যারা বছরের পর বছর ধরে স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন, তারা মাত্র কয়েক মাসের আকুপাংচার চিকিৎসার পর স্টেরয়েডের ব্যবহার কমাতে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন - তার বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে এক গবেষণায়।

সঠিক চীনা ভেষজের সংমিশ্রণ ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গ উপশমে সাহায্য করে। এগুলো শরীরের টিস্যু থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং নতুন স্বাস্থ্যকর টিস্যুর পুনর্জনমে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। এ কারণে পরবর্তী সময়ে কোনও ভাইরাসের সংস্পর্শে এলেও শরীর দ্রুত সেটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন

আকুপাংচার ও নির্দিষ্ট ভেষজ গ্রহণ করলে আপনি ব্রঙ্কাইটিস থেকে মুক্তি পাবেন। তবে পাশাপাশি কতগুলো বিষয় মেনে চললে তা আপনার ফুসফুসের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করতে পারে: জানিয়ে দিচ্ছি সেগুলো:

দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন: দুগ্ধজাত পণ্য শ্লেষ্মা বা কফ বাড়ায়। সেকারণে যতদিন আপনি ব্রঙ্কাইটিসে ভুগছেন, ততদিন এ ধরনের খাবার একেবারে বাদ দিন খাদ্যতালিকা থেকে।

ভেষজ চা খান: উষ্ণ ভেষজ চা, আদা চা ও লেবু-পানি কফ পাতলা রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত এগুলো পান করতে পারেন। আদা প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া ক্যাফিন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো আপনার শরীরকে শুষ্ক করে এবং কফ গাঢ় করে।

নাশপতি খান: শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে নাশপতি। অল্প পানিতে একটি নাশপতি সেদ্ধ করুন। খুব নরম না হওয়া পর্যন্ত জাল দিতে থাকুন। একেবারে নরম হয়ে গেলে আপেল সসের মতো করে খান।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গ উপশমে সহায়ক হতে পারে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম। এ ক্ষেত্রে আপনার আকুপাংচার চিকিৎসকের কাছ থেকে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল শিখে নিতে পারেন।

ইয়িন ছিয়াও ট্যাবলেট খান: কাশি বা গলা ব্যথার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর পরই ইয়িন ছিয়াও ট্যাবলেট গ্রহণ করুন। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ ফর্মুলেশন, যা নেওয়া হলে সর্দি-কাশি থেকে সহজে বাঁচা যায়।

#চিকিৎসার_খোঁজ

শাংহাই রেনাই হাসপাতাল

চীনের স্বাস্থ্যসেবা খাত গড়ে উঠেছে প্রধানত সরকারি চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠান নিয়ে। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশটিতে গড়ে উঠেছে অনেক বিখ্যাত বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানও। এমন একটি প্রতিষ্ঠান শাংহাই রেনাই হাসপাতাল। এটিই শাংহাইয়ের প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল। ২০০১ সালে নগরীর সুহুই জেলা প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতাল পূর্ব চীন অঞ্চল এবং ইয়াংজি নদী অববাহিকা অঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান।

শাংহাই রেনাই হাসপাতালে রয়েছে ২০টির বেশি ক্লিনিক্যাল বিভাগ, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জারি বিভাগ, চর্মরোগ বিভাগ, দন্তরোগ বিভাগ, স্ত্রীরোগ বিভাগ, মেডিকেল চেকআপ বিভাগ, টিসিএম থেরাপি বিভাগ, শিশু ক্লিনিক বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগ, অভ্যন্তরীণ ওষুধ বিভাগ, ইউরোলজি বিভাগ, সাধারণ সার্জারি বিভাগ, চক্ষুবিদ্যা বিভাগ, নাক-কান-গলা বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক বিভাগ।

শাংহাই রেনাই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছে বোএআই মেডিকেল গ্রুপ। বোআই মেডিকেল গ্রুপ বেসরকারি খাতে চীনের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রুপ। চীনের মূল ভূখণ্ডজুড়ে ২৬টি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ গ্রুপের মালিকানাধীন। শাংহাই রেনাই হাসপাতালটি পূর্ব চীনের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সব ধরনের আয়ের মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তৈরি করেছে এই হাসপাতাল।

শাংহাই রেনাই হাসপাতালের অন্যতম শাখা এর আন্তর্জাতিক চিকিৎসা কেন্দ্র, যেটির অবস্থান মূল ক্যাম্পাসের অদূরে। সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিমা কোম্পানির স্বাস্থ্যবিমার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের বিলিং সুবিধার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয় এখানে। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে এখানে পশ্চিমা ধাঁচের ও ধারার চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তারা বলছেন, একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে আপনি যা পাবেন, তার সবই পাবেন এখানে। এখানে সাধারণত রোগীদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। আর এখানে যে চিকিৎসকরা কাজ করেন, তাদের সঙ্গে রোগী বা তাদের স্বজনদের ভালো কথপোকথনে সাহায্যের জন্য এখানে রয়েছে ইংরেজিতে অতি দক্ষ কর্মীদল।

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

গভীর শ্বাস নিন

যদি মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন, তবে সেটা দূর করতে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের চর্চা করুন। প্রথমে বুক পুরে শ্বাস নিন, মিনিট খানেক ধরে রাখুন এবং তারপর শ্বাস ছাড়ুন। ছন্দবদ্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস আপনাকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।

উষ্ণ, রান্না করা খাবারের উপর জোর দিন

শরীরের ভেতরের দিকে উষ্ণ রাখা যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী বাইরের দিকে উষ্ণ রাখাও। এটা করার জন্য, আমরা যে খাবার খাই তার প্রকৃতির দিকে মনোযোগ দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঠান্ডা ও কাঁচা খাবার যেমন কাঁচা শাকসবজি, স্মুদি, সালাদ ও আইসক্রিম আমাদের কারো কারো জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে। তাদের এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত; কিংবা একান্ত খেতে মন চাইলে, অতি কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। বিশেষ যারা নিয়মিত পেট ফাঁপা ও হজমের সমস্যা অনুভব করেন, তাদের জন্য ভালো হলো হালকা রান্না বা স্টিম করা সবজি এবং উষ্ণ খাবার খাওয়া। এছাড়া, কোমল পানীয়ের পরিবর্তে ঘরের তাপমাত্রার পানি খাওয়া উচিত। শীতের মাসগুলোতে এটি মেনে চলা বেশি প্রয়োজন। কারণ এ সময় এমন সব খাবার ভাঙতে শরীরের অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn