বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০০৬

CMGPublished: 2023-02-19 19:10:22
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

পেট ফাঁপা উপশমে টিসিএম

পেট ফাঁপে যখন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে গ্যাস তৈরি হয় এবং পেট বা অন্ত্র বাতাসে ভরে যায়। পেট ফাঁপলে তীব্য ব্যথা হয়, ঢেকুর ওঠে, বমি বমি ভাব হয় বা টয়লেটে যাওয়ার তাগিদ প্রবল হয়। এছাড়া খাবার গ্রহণের পর পেট ‘পাথরের মতো’ ভারী লাগতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল গড়বড়ের মতো পেটের যন্ত্রণা বা হজমের সমস্যা আছে, তাদের খাওয়ার পরে পেটে ব্যথা ও স্ফীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পেটের দেয়ালে প্রদাহ বা অন্ত্রের আলসারের কারণেও পেট ফুলতে পারে। নারীরা প্রায়শই তাদের মাসিকের আগে বা মাসিকের সময় পেট ফাঁপা বোধ করেন এবং তাদের প্রজনন-সম্পর্কিত ব্যাধি যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম পেটে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।

যেসব কারণে পেট ফাঁপে:

প্লীহা/পাকস্থলীর ঘাটতি: অ্যান্টিবায়োটিক, অত্যধিক কাঁচা বা গাঁজানো খাবার, খাবারে গড়বড়, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগের কারণে প্লীহা/পাকস্থলীর ঘাটতিজনিত পেট ফাঁপা হতে পারে। কতগুলো লক্ষণের মাধ্যমে এমন ঘাটতি চিহ্নিত করা যায়। যেমন দীর্ঘস্থায়ী ফোলাভাব, ক্ষুধামন্দা, খাওয়ার পরে খারাপ বোধ করা, দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব।

স্যাঁতসেঁতে-কফ: অতিরিক্ত চিনি, অ্যালকোহল, চর্বিযুক্ত বা ভাজা খাবার এবং দুগ্ধজাত খাবারের অভ্যাসের কারণে স্যাঁতসেঁতে-কফজনিত পেট ফাঁপা হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণেও এটা হতে পারে। এ ধরনের পেট ফাঁপা উপসর্গগুলোর মধ্যে থাকে বর্ধিত পেট, বমি বমি ভাব, অ্যাসিড প্রতিপ্রবাহ ও ডায়রিয়া।

লিভারে ‘ছি’ স্থবিরতা: মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা রাগ এবং অনিয়মতান্ত্রিক খাবার গ্রহণের কারণে লিভারের মূল শক্তি বা ‘ছি’য়ে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে, যার ফরে পেট ফুলে যেতে পারে। এ ধরনের পেট ফোলার লক্ষণগুলো হলো পেটে ব্যথা, পেটে ডাকা, ঢেকুর ওঠা ও কোষ্ঠকাঠিন্য।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএম পেট ফোলাভাব সৃষ্টি করে এমন সমস্যা যেমন হজমের সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং মানসিক সমস্যার একটি সমন্বিত চিকিৎসা দেয় । একজন অভিজ্ঞ আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ জিহ্বা ও নাড়ি পর্যবেক্ষণ এবং সমস্যাগুলোর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নানাবিধ প্রশ্নের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য দায়ী ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কে জানতে পারেন।

পেট ফাঁপা উপশমের জন্য টিসিএম আকুপাংচার ও নানা ধরনের ভেষজ ব্যবহার করে পাকস্থলী ও যকৃতের ক্রিয়াকলাপের মধ্যে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। আর এর মধ্য দিয়ে কফ পরিষ্কার হয় এবং হজমে উন্নতি ঘটে। ভারসাম্যহীনতার অন্তর্নিহিত কারণভেদে চিকিৎসাও আলাদা হয়। যদি প্রজনন হরমোনের কারণে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়, তবে ভেষজ প্রস্তুত করার সময় সেটি বিবেচনায় রাখা হয়। যদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে ভারসাম্যহীনতা হয়, তবে উদ্বেগ উপশম করার জন্য নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্ট যোগ করা হয়।

পেট ফাঁপা উপশমে কতগুলো পরামর্শ দেন টিসিএম বিশেষজ্ঞরা।

খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান: অনেকে খাবার দ্রুত খায় এবং গিলে ফেলার আগে তা ভালভাবে চিবানোর প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেয় না। এর ফলে পাকস্থলীকে বেশি অ্যাসিড তৈরি করতে হয় এবং খাবারটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের গভীরে যাওয়ার আগে হজম করা কঠিন হয়। তাই ধীরে ধীরে চিবান এবং প্রতিটি কামড় উপভোগ করুন। এতে আপনার হজমশক্তি উন্নত হবে।

বরফ-শীতল পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন: ক্রমাগত বরফ-শীতল পানীয় পান করলে তা পেট, অন্ত্র ও জরায়ুর মসৃণ পেশীর টিস্যুতে জ্বালা সৃষ্টি করে। তাই উষ্ণ তরল পান করুন, যা এই অঙ্গগুলোর জন্য প্রশান্তিদায়ক।

আদা-চা খান: আদা শরীরকে আরও বেশি পরিপাককারী এনজাইম তৈরি করতে সাহায্য করে। এনজাইম খাবার ভেঙে দিতে কাজ করে এবং খিঁচুনি থেকে পেটকে মুক্তি দেয়। গরম জলে কয়েক টুকরা আদার ছেড়ে দিন এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে চুমুক দিন।

ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাবার নির্বাচন করুন: কোন ঋতুতে কোন খাবার খাবেন সঠিকভাবে তা নির্বাচন করা পেটের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মে কাঁচা খাবার উপযুক্ত, তবে শীতকালে রান্না করা খাবার খাওয়াই ভালো।

#চিকিৎসার_খোঁজ

সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টার

সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টার দক্ষিণ চীনের বৃহত্তম সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল। কুয়াংচৌ শহরে অবস্থিত এই সরকারি হাসপাতালটি সুন ইয়াত-সান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত। হাসপাতালটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন এর নাম ছিল দক্ষিণ চীনের টিউমার হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর এটির নাম দেওয়া হয় সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টার। এই হাসপাতালটি টারশিয়ারি পর্যায়ের একটি ‘এ’ শ্রেণির চিকিৎসাসেবা, গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এক হাজার ৬শ শয্যার সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টার চীনের শীর্ষ তিনটি ক্যান্সার হাসপাতালের একটি এবং এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। হাসপাতালটি ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কন্ট্রোলের একটি সদস্য প্রতিষ্ঠান। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চীনে ক্লিনিকাল রেডিওলজির অগ্রদূত এবং রেডিয়েশন অনকোলজির জনক অধ্যাপক হসিয়েহ চিহ খুয়াং এবং দেশটির আধুনিক প্যাথলজির প্রবর্তক অধ্যাপক লিয়াং বুছিয়াং।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল নেচার ইনডেস্ক’র ২০১৮ সালের সূচকে দেখা যায়, সক্রিয় গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ১শ’টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টারের অবস্থান ছিল ৮১তম। এই হাসপাতালে অবস্থিত দক্ষিণ চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণাগার। চীনে সব মিলিয়ে ২৬৯টি রাষ্ট্রীয় গবেষণাগার রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৬টি চিকিৎসা বিষয়ক এবং মাত্র ৭টি ক্যান্সার গবেষণা-সম্পর্কিত। কুয়াংতুং ক্যান্সার সেন্টার, কুয়াংতুং ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং কুয়াংতুং অ্যান্টি-ক্যান্সার অ্যাসোসিয়েশনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয় এই প্রতিষ্ঠান।

গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য বিশ্বের বহু বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করেছে সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যান্সার সেন্টার, ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার, সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট, এবং যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়।

দুটি ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত সুন ইয়াত-সান ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সেন্টারে যেমন কর্মরত ভুবনবিখ্যাত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক তেমনি এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রোগীরা।

এখানকার বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়োথেরাপি, হাড় ও টিস্যু সার্জারি, ব্রেস্ট অনকোলজি, পেডিয়াট্রিক অনকোলজি, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি, হেমাটোলজিক্যাল অনকোলজি, মেডিকেল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, ক্যান্সার প্রতিরোধ গবেষণা, কোলোরেক্টাল সার্জারি, গ্যাস্ট্রিক সার্জারি, লিভার সার্জারি, মেডিসিন ল্যাবরেটরি, আণবিক রোগ নির্ণয়, নিউরোসার্জারি, পারমাণবিক ওষুধ, প্যানক্রিয়াটিকোবিলিয়ারি সার্জারি, প্যাথলজিথোরাসিক সার্জারি, মাথা ও ঘাড় সার্জারি, ঐতিহ্যবাহী চীনা মেডিসিন, আল্ট্রাসাউন্ড ও ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, ইউরোলজি ইত্যাদি।

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

পেশীর ব্যথা উপশমে তাপ প্রয়োগ করুন, বরফ নয়

পেশীর ব্যথা উপশম ও নিরাময়ে বরফ প্রয়োগের চেয়ে তাপ প্রয়োগ বেশি উপকারী। এর কারণ তাপ প্রয়োগে পেশীতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। বরফ প্রয়োগ করলে ব্যথার স্থানটি সাময়িকভাবে অসাড় হয়ে যায়, যার জন্য ব্যথার অনুভূতি কমে, তবে পেশীর সংকোচন দূর করতে এটি সহায়ক নয়। বরং বরফ পেশীকে আরও সংকুচিত করে। তাই পেশীতে ব্যথা হলে, তা উপশম ও নিরাময়ে বরফের বদলে তাপ প্রয়োগ করুন।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn