বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-০০১

CMGPublished: 2023-01-15 17:32:19
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং চীনা জীবনধারা নিয়ে পরামর্শ ‘হেলথ টিপস’।

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

কাশি সারাতে টিসিএম

সব কাশি যেমন এক রকম নয়, তেমনি তাদের উপসর্গগুলো এক রকম নয়। তবে কাশির ধরন যেমনই হোক না কেন একটি ব্যাপার অভিন্ন - কাশি প্রবল কষ্ট দেয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি বা টিসিএমে মনে করা হয়, বাইরে থেকে দেহের সংস্পর্শে আসা রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু কিংবা শরীরের কোনও অঙ্গের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতার কারণে কাশি হয়। ফুসফুস একটি নাজুক অঙ্গ যেটাকে রোগ সৃষ্টিকারীর জীবাণু আক্রমণ করতে পারে ত্বক, মুখ ও নাকের মাধ্যমে শরীরের প্রবেশের মাধ্যমে। এমন আক্রমণ ফুসফুসের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে, যার ফলে ফুসফুসের ‘ছি’ বা অন্তর্নিহিত শক্তিতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং তার বাহ্যিক লক্ষণ হিসাবে কাশি হয়।

আবহাওয়ার পরিবর্তনও এই ধরনের কাশি জাগিয়ে তুলতে পারে। টিসিএমে এমন কাশিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যেমন বায়ু-ঠাণ্ডাজনিত, বায়ু-তাপজনিত বা বায়ু-শুষ্কতাজনিত কাশি। এই কাশি হঠাৎ করেই দেখা দেয় এবং ক্ষণস্থায়ী হয়। আর এর সঙ্গে থাকে জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠাণ্ডা লাগার মতো উপসর্গ।

ফুসফুসে বা এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য অঙ্গ যেমন লিভার, প্লীহা ও পাকস্থলীর মতো অঙ্গগুলোর ক্রিয়াকলাপের ভারসাম্যহীনতার কারণেও কাশি হতে পারে। এই ধরনের কাশি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে, দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং জটিল পর্যায়ে পৌঁছানোর ঝুঁকিতে থাকে।

টিসিএম চিকিৎসকরা মনে করেন, এ ধরনের কাশির চিকিৎসা না করা হলে, এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ‘ছি’, যেটাকে টিসিএমে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তির সুস্থ প্রবাহকে বোঝায়, তার ক্ষতি করতে পারে।

এর চিকিৎসা কী?

প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে অঙ্গের প্রয়োজনীয় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যায়। যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক গঠন ও উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়, তাই একজন থেকে আরেকজনের রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি ও চিকিৎসাও ভিন্ন। সেকারণে কেউ কাশিতে আক্রান্ত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। চিকিৎসা দেওয়ার সময় চিকিৎসক কাশির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন এর শব্দ, দিনের কোন সময় এটি বাড়ে এবং থুথুর রঙ ও গঠন বিবেচনা করেন।

টিসিএম চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো শরীরের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা। এজন্য কোথাও শক্তির ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করা এবং কোথাও অতিরিক্ত শক্তি থাকলে সেটাকে দূর করার মাধ্যমে এ ভারসাম্য আনা হয়। যেমন যারা বায়ু-তাপজনিত কাশিতে ভুগছেন তাদের তুঁত পাতা ও চন্দ্রমল্লিকার মতো ভেষজ, সেইসঙ্গে আকুপাংচারের মতো টিসিএম থেরাপি দেওয়া হয়। এ চিকিৎসা রোগীর ‘বায়ু-তাপ’ দূর করতে সাহায্য করে।

আকুপয়েন্ট ম্যাসাজও কাশির চিকিৎসায় ভালো কাজ করতে পারে। যেমন থান চুং বা স্তনবৃন্তের মধ্যবিন্দুর চারপাশের আকুপয়েন্টের ম্যাসেজ বুকের চাপ দূর করতে এবং ‘ছি’র সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন

চিকিৎসার পাশাপাশি কাশি-রোগীদের প্রয়োজন তাদের খাদ্য ও জীবনযাত্রার ধারা উন্নত করা। কারণ এটি রোগ সারার সময়কে সংক্ষিপ্ত করতে এবং রোগ যাতে দীর্ঘস্থায়ী না হয় সেটা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

ব্যায়ামের মাত্রা বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী কাশিতে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে জোরদার করে। পাশাপাশি এটি পরিবেশগত কারণগুলোর বিরুদ্ধে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বাড়িয়ে তোলে।

কাশি-রোগীদের এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিৎ যা হালকা ও সহজে হজমযোগ্য। এছাড়া প্লীহার উপর চাপ কমাতে তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিসিএমে প্লীহাকে কাশির উৎস বলে মনে করা হয় এবং অনুপযুক্ত খাদ্য এই অঙ্গটিকে কর্মহীন করে দিতে পারে।

খাবার সম্পর্কিত টিপস

আপনি যদি বায়ু-ঠাণ্ডাজনিত কাশিতে আক্রান্ত হন, তাহলে গলা চুলকানি এবং সাদা ও পাতলা কফের মতো উপসর্গ থাকবে। এমন ক্ষেত্রে কাঁচা ও ঠাণ্ডা খাবার যেমন কলা, সাদা বাঁধাকপি ও ফল এড়িয়ে চলুন এবং উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সক্ষম খাবার যেমন আদা, পেঁয়াজের কলি ও এপ্রিকট বেছে নিন।

আপনার যদি বায়ু-তাপজনিত কাশি হয়, তাহলে গলা ব্যথা এবং হলুদ ও ঘন কফের মতো উপসর্গ থাকবে। এমন ক্ষেত্রে অ্যালকোহল এবং ভাজা, মশলাদার ও গরম খাবার যেমন মরিচ ও লিচু এড়িয়ে চলুন। কফ গলাতে সাহায্য করে এমন খাবার যেমন পদ্মের মূল, টোফু, বার্লি, সবুজ মটরশুটি, নাশপাতি ও চন্দ্রমল্লিকার চা গ্রহণ করুন।

যদি আপনার ‘ইন’র ঘাটতির কারণে বায়ু-শুষ্কতাজনিত কাশি হয়, তবে শুষ্ক কাশির উপসর্গ থাকবে। এমন কাশির ক্ষেত্রে অ্যালকোহল এবং মশলাদার, শুকনো ও তীব্র স্বাদযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এমন খাবার গ্রহণ করুন যা ফুসফুসকে আর্দ্র করতে এবং শরীরের তরল বাড়াতে সাহায্য করে, যেমন মধু, আখ ও নাশপাতি। চেষ্টা করুন লঘুপাকের খাবার খেতে।

#চিকিৎসার_খোঁজ

পিএলএ জেনারেল হাসপাতাল

পিএলএ জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল স্কুল চীনের সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি বা গণমুক্তি ফৌজের কেন্দ্রীয় সামরিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। ৩০১ হাসপাতাল নামেও পরিচিত এ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানটি চীনের বৃহত্তম সামরিক হাসপাতাল। এ হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে ১৯২৭ সালে বিপ্লবী সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত নিংগাং মাওফিং হাসপাতালের সঙ্গে।

চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, রোগপ্রতিরোধ, রোগী-পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের সামরিক হাসপাতাল। এখানে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো এটি পরমাণু, জৈব ও রাসায়নিকের হুমকি ও ঝুকিঁর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে এবং ও সংক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য উদ্ধারে সক্ষম।

রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত ৩০১ হাসপাতাল প্রশাসনিকভাবে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের জয়েন্ট লজিস্টিক সাপোর্ট ফোর্সের অধিভুক্ত। হাসপাতালটি হাইনানে আটটি প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র এবং একটি শাখা নিয়ে গঠিত।

এ হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিএলএ মেডিকেল স্কুল। এখানে রয়েছে ২১টি ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, ৮টি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, ৩টি সামরিকভাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, ৫টি জাতীয় ক্লিনিক্যাল ওষুধ গবেষণা কেন্দ্র, কিডনি রোগের স্টেট ল্যাবরেটরিসহ ৭টি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা প্ল্যাটফর্ম, প্রাদেশিক পর্যায়ে ৪৬টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার এবং গণমুক্তি ফৌজের ৬১টি চিকিৎসা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিশেষায়িত কেন্দ্র।

পিএলএ মেডিকেল স্কুলের ৫টি প্রথম স্তরের বিভাগ এবং ২০টি মাধ্যমিক স্তরের বিভাগ ৪৭টি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রির দেওয়ার জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত। এছাড়া ৭টি প্রথম স্তরের বিভাগ এবং ২৩টি মাধ্যমিক স্তরের বিভাগ ৫০টি বিষয়ে মাস্টার ডিগ্রি দেওয়ার জন্য অনুমোদিত।

দেশের সেরা চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পিএলএ হাসপাতালে কাজ করেন এবং এখান থেকে তৈরি হচ্ছে বিপুল সংখ্যক সামনের সারির চিকিৎসক ও অসামান্য পেশাদার। এ হাসপাতালটি ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রগতি পুরস্কারের’ ৯টি প্রথম পুরস্কার এবং ৩২টি দ্বিতীয় পুরস্কার, ‘রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন পুরস্কারের’ ২টি দ্বিতীয় পুরস্কার, ‘সামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রগতি পুরস্কারের’ ৩৭টি প্রথম পুরস্কার এবং ‘সামরিক চিকিৎসা ক্ষেত্রে অর্জনের’ ২৪টি প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছে। এটি ‘আন্তর্জাতিক শিশু-বান্ধব মডেল হাসপাতাল’ এবং ‘ন্যাশনাল পাবলিক ট্রাস্ট মডেল হাসপাতাল’ নামেও খ্যাতি অর্জন করেছে।

হেলথ টিপস

এটা সর্বজনবিদিত যে, চীনা জীবনযাপন পদ্ধতি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। আপনি যদি চীনাদের মতো একটি সুস্থ জীবন যাপন করতে চান তাহলে মেনে চলতে পারেন তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি-সম্পর্কিত পরামর্শ।

আগে ভাগে বিছানায় যান

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং দিনে আট ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনি ঘুম থেকে কতটা স্বাস্থ্যসুবিধা পাবেন, সেটা অনেকখানি নির্ভর করে আপনি কখন ঘুমাচ্ছেন তার ওপরও। টিসিএম তত্ত্বের ২৪-ঘন্টা সার্কাডিয়ান ঘড়ি অনুসারে, ঘুমোতে যাওয়ার আদর্শ সময় হলে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা।

শরীরের ক্ষয় পূরণ ও বিশ্রামের জন্য ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যকার ঘুম আপনার লিভার ও পিত্তথলির ব্যবস্থাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া নীল আলোর প্রভাব যাতে আপনার গভীর ও আরামদায়ক ঘুমের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে ফোন, কম্পিউটার ও ট্যাবের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো বন্ধ করার অভ্যাস করুন।

স্কার্ফ দিয়ে ঘাড় ঢেকে রাখুন

বায়ু ও ঠাণ্ডার মতো উপাদানগুলোর কাছে ঘাড়ের পেছনের অংশ বেশ নাজুক। এই অংশটুকু কাউকে রোগজীবাণুর কাছে খুব নাজুক করে তুলতে পারে। যদি সুস্থ থাকতে চান এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান, তবে বাইরে যাওয়ার আগে আপনার ঘাড়কে একটি আরামদায়ক স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে রাখুন। আপনি যদি বিমানে ভ্রমণ করেন কিংবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে থাকেন, তাহলেও ঘাড়ে হালকা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn