বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৯৩

CMGPublished: 2022-10-28 18:52:58
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ মুক্তি ও নিরাময় নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, এবং খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’।

#ভালো_থাকার_আছে_উপায়

গলা ব্যাথা নিয়ে ভাবনা আর না!

অনেকেই গলা ব্যথায় আক্রান্ত হন। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়টাতে এই সমস্যায় অনেককেই ভুগতে দেখা যায়। গলা ব্যথা সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যে নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে এই ব্যথা অনেকটাই অস্বস্তির কারণ হতে পারে সেইসঙ্গে অনেকক্ষেত্রে কষ্টদায়কও। এক্ষেত্রে কেউ কেউ কথা বলার সময় ও খাবার গিলতে সমস্যায় পড়েন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস- এর মতে, ‘গলা ব্যথা হলে ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকতে হবে অর্থাৎ শরীরে পানির ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। সেইসঙ্গে গরম যেকোনো পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে’। এর পরিবর্তে তারা এক টুকরা বরফ বা আইস ললি চুষে খেতে পরামর্শ দেন। এটি কি সত্যিই কাজ করে?

যেভাবে কাজ করে কোল্ড থেরাপি

বরফের টুকরা বা আইস ললি চুষে খেলে তা গলা ব্যথা প্রশমিত করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরফের টুকরা গলা ব্যথা সারাতে কার্যকরী হতে পারে কারণ এটি আক্রান্ত টিস্যুতে শীতল প্রভাব ফেলে। এটি গলার স্নায়ু প্রান্তের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে ব্যথা অনেক কমে যায়। এমনকী টনসিলের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা আইসক্রিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। ঠান্ডা আইসক্রিম টনসিলের সংস্পর্শে এসে এর ফোলাভাব কমায়। সেইসঙ্গে ব্যথা ও অস্বস্তিও দূর করে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক গলা ব্যথা দূর করার অন্যান্য উপায়-

মধু ও আদার রস

গবেষণায় দেখা গেছে আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে তা আমাদের শরীরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল প্রভাব ফেলে। প্রথমে আদা থেতো করে একটি চামচে এর রসটুকু বের করে নিন। এরপর তার সঙ্গে মেশান সামান্য মধু। এবার মিশ্রণটি খেয়ে ফেলুন। এটি আপনার গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।

দুধ ও হলুদ পানীয়

হলুদে থাকে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা অনেক গুরুতর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গলা ব্যথা দূর করার জন্য ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস হলুদ মেশানো দুধ খেতে পারেন। এই পানীয়কে গোল্ডেন মিল্কও বলা হয়। রাতে দুধ খাওয়ার কারণে যদি আপনার পেট ফাঁপার সমস্যা হয় তবে এটি অল্প করে খেতে পারেন বা দিনের যেকোনো সময়ও খেতে পারেন। এক কাপ দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খেলেই উপকার পাবেন। এর সঙ্গে সামান্য গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে হলুদের উপকারিতা আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।

লবণ-পানির গার্গল

হালকা গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে তা গলা ব্যথা প্রশমিত করতে কাজ করে। এটি শিশুর ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী। গার্গল করার জন্য একটি গ্লাসে অর্ধেকটা হালকা গরম পানি নিন এবং বাকি অর্ধেকটা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি মেশান। এরপর এর সঙ্গে মেশান আধা চা চামচ লবণ। এই মিশ্রণ দিয়ে গার্গল করুন এবং ফেলে দিন। কয়েকবার এভাবে করুন।

আদা চা

গলা ব্যথা দূর করতে আদা চা পান করা একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়। এটি প্রদাহজনিত ব্যথা প্রশমিত করে। গরম পানিতে আদা ফুটিয়ে অল্প অল্প করে পান করতে পারেন। প্রতিদিন যে চা পান করেন, তার সঙ্গেও মেশাতে পারেন আদা। আদা চা পান করলে তা আপনার গলা ব্যথা দ্রুত দূর করতে কাজ করবে।

নিতে হবে বিশ্রাম

সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে। ঘুম কম হলে শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে, এই রক্তকণিকা গলা ব্যথার কারণে সৃষ্ট প্রদাহ দূর করতে দরকারি। ঘরোয়া এই উপায়গুলো মেনে চলার পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অভি/রহমান

# আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে। জনস্বাস্থ্য সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, আয়ু বৃদ্ধি ও মানব স্বাস্থ্য উন্নয়নের বিজ্ঞান। জনগণের স্বাস্থ্য ও তার ঝুঁকির দিকগুলি বিশ্লেষণ করা জনস্বাস্থ্যের মূল বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে "স্বাস্থ্য" কেবলমাত্র রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিই নয়; শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকাকেও বোঝায়। জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা জৈব-পরিসংখ্যান-বিদ্যা, স্বাস্থ্য পরিসেবা-সব ই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশগত স্বাস্থ্য, গোষ্ঠীগত স্বাস্থ্য, আচরণগত স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক অর্থনীতি, জননীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পেশাগত সুরক্ষাও জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। করোনাভাইরাসের অতিমারিরকালে জনস্বাস্থ্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিষয়টির প্রতি বর্তমানে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যদি এখানকার জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনও তেমন ভালো না। জনস্বাস্থ্যের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কবিরউদ্দিন আহমেদ। তিনি কর্মরত ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে, হেলথ নিউট্রিশন ও ওয়াশ সেক্টরে।

#কী_খাবো_কী_খাবো_না

এতো গুণ লেবুর!

লেবুর গুণ অসীম। এ ফলের রস দিয়ে তৈরি শরবত একটি আদর্শ স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। একটি মাঝারি আকৃতির লেবু থেকে চল্লিশ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড পাওয়া, যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। ভিটামিন ‘সি’ দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে বা ক্ষত হলে দ্রুতগতিতে কোলাজেন কোষ উপাদান তৈরি করে ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে এই ভিটামিন ‘সি’। লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইট্রিক এসিড থাকে, যা ক্যালসিয়াম নির্গমন হ্রাস করার মাধ্যমে পাথুরী রোগ প্রতিহত করে। আসুন জেনে নিই লেবুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে:

লেবুতে রয়েছে এমন নানা পুষ্টি উপাদান, যা শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরের টক্সিন দ্রুত বেরিয়ে যায়। দিনে তিন থেকে চারবার এই পানীয় খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

লেবুতে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যে কোনও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যেমন ঠাণ্ডা, সর্দি ও জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকর। মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবু উপকারী।

লেবুর রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা ক্যালসিয়ামজাত পাথর সৃষ্টি হতে দেয় না। এছাড়া যেসব পাথর আকারে বড় সেগুলোকে সাইট্রিক অ্যাসিড ছোট টুকরোতে ভেঙে ফেলে। ফলে সহজেই সরু মূত্রনালি দিয়ে সেগুলো বের হয়ে যেতে পারে।

যাদের ডায়রিয়া, বদহজম ও কোষ্টকাঠিন্যের মতো পেটের গোলযোগ রয়েছে তাদের জন্য লেবু আদর্শ টনিক। এসব সমস্যা হলে দ্রুত এক গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে নিতে হবে। লেবুর সঙ্গে এক চা চামচ মধু হলে আরো ভালো হবে।

লেবুর রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যারা খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই নানা রকমের হৃদরোগে আক্রন্ত হতে পারেন। তাদের জন্য খুব দরকারী লেবু।

প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসাবে লেবুর তুলনা নেই। চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে লেবু। এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমে ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে এবং সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে। বয়সের বলিরেখাও দূর করে লেবু। লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। এটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে, ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।

লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে। এটি একদিকে শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না আবার অন্যদিকে শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে।

হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে যারা ভুগছেন, তাদের জন্য উপকারী লেবু। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করে। নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেলে শ্বাসকষ্ট কমে বেশ ভালো মাত্রায়। - অভি/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn