বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৯০

CMGPublished: 2022-10-07 18:46:26
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ও রোগমুক্তি নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা ‘ভুলের ভুবনে বাস’ ।

#কী_খাবো_কী_খাবো_না

রোজ খেজুর খেলে মুক্তি মিলবে জটিল রোগ থেকেও

খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। এটি ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। খেজুর রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এ ফলকে চিনির বিকল্প মনে করা হয়। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। খেজুরেরয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আয়রন, প্রোটিন, ফলেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিনবি৬, বি ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও সালফারসহ নানাউপাদান। খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো, তেমনি চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও খেজুর অনেক উপকারি। জানিয়ে দিচ্ছি খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে:

শক্তি বর্ধনে: খেজুর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যউপাদান, যা শারীরিক ও মানসিক শক্তি বাড়ায়। এছাড়া এ ফল হজমশক্তি, যৌনশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খেজুর ফুলের পরাগরেণু বন্ধ্যাত্ব দূর করে, শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। খেজুর ও খেজুরের ফুল পরাগরেণু ডিএনএ’র গুণগতমান বৃদ্ধি করে।

হজম ও রুচি বৃদ্ধিতে: রুচি বাড়াতে খেজুরের কোনো জুড়ি নেই। শিশুদের মধ্যে যারা ঠিকমতো খেতে চায় না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসে। খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে: বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে খেজুর। ফুসফুস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে এ ফল।

হার্টের সমস্যায়: হার্ট বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর খেজুর। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় ভীষণ কাজ করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম এবং অল্প পরিমাণ সোডিয়াম। তাই প্রতিদিন এ ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমে এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।

রক্তশূন্যতায়: খেজুর আয়রন বা লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে রক্তশূন্যতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খেজুর খেলে দেহের আয়রনের অভাব পূরণ হয় এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যে: নিয়মিত খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে। তুলনামূলক শক্ত খেজুরকে সারা রাতপানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে: খেজুর দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শরীরের গঠনের তুলনায় যাদেরওজনবেশি, তারা নিয়মিত খেজুর খান।

অন্যান্য উপকারিতা: এছাড়াও জ্বর, মূত্রথলির সংক্রমণ, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে খেজুর বেশ উপকারী। নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়েও খেজুর বেশ কার্যকর। নিয়মিত খেজুর খেলে ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। এছাড়া খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রাতকানা নিরাময় করে।

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি পিত্তথলির পাথর বা গলব্লাডার স্টোন নিয়ে। পিত্তথলির পাথর খুবই পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। বেশিরভাগ পিত্তপাথর কোলেস্টেরল জমে তৈরি হয়। এ কারণে কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খেলে পিত্তথলির পাথর হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। পিত্তথলির পাথর কোন জটিল রোগ নয়। কিন্তু সময়মতো চিকিত্সা না করালে তা জটিল আকার ধারণ করে। সময়মত রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা করালেই এই রোগের সঠিক নিরাময় সম্ভব। এ রোগ নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিত্সক মো. আরিফ হোসেন। ডাক্তার মো. আরিফ হোসেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি)। তিনি শল্যচিকিত্সায় এফসিপিএস ডিগ্রিধারী।

#ভালো_থাকাার_আছে_উপায়

ব্রণ নিয়ে ভাবনা, আর না

ব্রণ এমন এক সমস্যা যা কেবল চেহারা কুৎসিত করে না, আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়। এই নিত্য সমস্যায় অনেকেই নাকাল হন। নানা ওষুধ ও চিকিৎসা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সাময়িক নিস্তার মিললেও আবার ফিরে আসে ব্রণের উৎপাত। কোনও কারণে ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন সেবাম ভিতরে জমে ফুলে ওঠে আর এর ফলে ব্রণের জন্ম হয়।

এক সময় মনে করা হতো কেবল তৈলাক্ত ত্বকই ব্রণের প্রধান কারণ। তবে আধুনিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতির কারণে এ সমস্যা কেবল আর তৈলাক্ত ত্বকে সীমাবদ্ধ নেই; সব ধরনের ত্বকেই এখন ব্রণ হতে দেখা যায়। তাই আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রণ সারানোর পক্ষে মত দেয়। তবে ব্রণ যদি ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে থাকে, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। জানিয়ে দিচ্ছি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে ব্রণ সারানো যায়।

জলপাই: জলপাই শরীরে তেলের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ফল সেবাসিয়াস গ্রন্থি ও রোমকূপের মুখ বন্ধ না করেই অতিরিক্ত তেল শোষণে সাহায্য করে। ফলে ত্বকের নিচে সেবাম, স্বেদ ও ঘাম সবই বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়।

লেবুর রস: রক্তের অতিরিক্ত টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করার মধ্য দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার রাখার কাজে সাহায্য করে লেবু। এছাড়া লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড লিভারকে সক্রিয় রাখে আর হজম শক্তি বাড়ায়। ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবু রাখন।

তরমুজ: তরমুজে থাকা ভিটামিন এ, বি ও সি ত্বককে পরিষ্কার করে ও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। এ ফল শরীরের অভ্যন্তরীণ তেল শোধন করে। তাছাড়া ত্বকের দাগ দূর করতেও বিশেষ উপকারি তরমুজ। ব্রণ এড়াতে তাই যতদিন সম্ভব রোজ খান তরমুজ।

#ভুলের_ভুবনে_বাস

ট্যারা চোখ ছোট সমস্যা নয়

বহুকাল ধরে বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠি, বিশেষ করে পশ্চাদপদ শ্রেণির মধ্যে একটি ধারণা যে, ট্যারা বা বাঁকা চোখ সৌভাগ্যের প্রতীক। সেকারণে সামান্য ট্যারা চোখকে তারা লক্ষ্মী ট্যারা বলে ডাকেন। আর অভিভাবকরা ট্যারা চোখের শিশুদের চিকিৎসা থেকে বিরত থাকেন, যাতে সৌভাগ্য হাতছাড়া হয়ে না যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি একটি ভুল ধারণা। আর এমন ভুল ধারণার বশবর্তীয় হওয়ায় কারণে যথাসময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করায় অনেক শিশুর একটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

ট্যারা কী?

সাধারণত কোনও কিছুর দিকে তাকালে দুই চোখের মণি একই সঙ্গে একইভাবে নড়ে। তাই স্বাভাবিক চোখে মণি দুটো একই রেখায় থাকে। কিন্তু ট্যারা চোখে একসঙ্গে দুই চোখের মণি একইভাবে নড়াচড়া করে না। এ কারণে দৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মেলে না। অন্য কেউ দেখলে মনে হবে দুই চোখের মণি দুই দিকে তাকিয়ে আছে। সাধারণত ট্যারা হয় ডানে বা বাঁয়ে। তবে ওপরে-নিচের দিকেও হতে পারে। কিছু ট্যারা আছে, যা সব সময় বোঝা যায় না, বিশেষ কোনো দিকে তাকালে বোঝা যায়।

ট্যারা কখন হয়?

নানা কারণে ট্যারা হতে পারে চোখ। জানিয়ে দিচ্ছি প্রধান কারণগুলো:

জন্মগত কারণ: অনেক শিশু জন্ম থেকেই ট্যারা চোখ নিয়ে জন্মায়।

মায়োপিয়া বা স্বল্পদৃষ্টি: যারা স্বল্পদৃষ্টির সমস্যায় আক্রান্ত, দূরের বস্তু দেখতে তাদের অসুবিধা হয়; চোখের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এর ফলে ট্যারা সমস্যা দেখা দেয়।

হাইপারোপিয়া: এটি কাছের বস্তু দেখার অসুবিধাজনিত ত্রুটি। এর থেকেও অনেক সময় মানুষের চোখ ট্যারা হয়।

অস্টিগম্যাটিজম: অস্টিগম্যাটিজম হলে চোখের কর্নিয়া অমসৃণভাবে বাঁকানো থাকে এবং চোখ সমানভাবে রেটিনার ওপর ফোকাস ফেলতে পারে না। ফলে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা তৈরি হয়। এ থেকেও চোখ ট্যারা হতে পারে।

অপরিপক্ক অবস্থায় জন্মগ্রহণ: গর্ভধারণের ৩১ সপ্তাহের আগে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং যাদের বয়স জন্মের সময় ১ হাজার ২৫০ গ্রামের কম থাকে তাদের চোখ ট্যারা হওয়ার এমন কি অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

জেনেটিক কারণ: মা-বাবা ও তাদের মতো নিকটাত্মীয়ের যদি চোখের ট্যারা সমস্যা থাকে।

ভাইরাল ইনফেকশন: ছোটবেলায় হাম ও অন্য কয়েক ধরনের ভাইরাস সংক্রমণ থেকে ট্যারা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আঘাতজনিত কারণ: আঘাতে কখনও চোখের মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অন্যান্য কারণ: এছাড়া ডাউন সিনড্রোমের মতো কিছু জেনেটিক সমস্যা, হাইড্রোসেফালাস বা মস্তিষ্কে পানি জমার মতো অসুখ, চোখের মাংসপেশির অস্বাভাবিক আচরণ বা সেরেব্রাল পালসি হলে চোখ ট্যারা হতে পারে।

ট্যারা চোখের ক্ষতি

ট্যারা চোখ স্বাভাবিক কাজকে ব্যাহত করে, সৌন্দর্যহানি ঘটায়, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে, চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে ফেলে। সময় মতো ট্যারা চোখের চিকিৎসা না করালে চোখ অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

প্রতিকার

ট্যারার আসল কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা জরুরি। যত কম বয়স থেকে চিকিৎসা শুরু করা যায়, সুস্থ্যতার সম্ভাবনা তত বেশি। জানিয়ে দিচ্ছি ট্যারা চোখের চিকিৎসা সম্পর্কে:

চশমা: ট্যারা চোখের চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় চশমা। দৃষ্টিজনিত যে সমস্যার জন্য চোখ ট্যারা হচ্ছে তা সংশোধনই এ চশমার কাজ। এ ধরনের চশমা চিকিৎসক দেখিয়ে নিতে হবে। সাধারণত যত বেশি সময় সম্ভব চশমা ব্যবহার করতে হয়।

চোখের ব্যয়াম: চোখের কিছু ব্যয়াম আছে, যেগুলো চারপাশে থাকা মাংসপেশির কার্যক্ষমতা ঠিক করতে সাহায্য করে। এতে ট্যারা চোখের সমস্যা কমে।

ইনজেকশন: ট্যারা চোখের সমস্যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বটুলিনাম ইনজেকশন দেওয়া হয়। যে মাংসপেশির কারণে ট্যারা সমস্যা হচ্ছে সেখানে ইনজেকশনটি দেওয়া হয়। ইনজেকশনটি কার্যকর থাকে তিন মাসের মতো। এ সময়ের পরও যদি চোখের ট্যারা না সারে, তখন অন্য চিকিৎসায় যেতে হয়। তবে মনে রাখা দরকার এ ইনজেকশনের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

অস্ত্রোপচার: চোখের নড়াচড়ার জন্য ছয়টি মাংসপেশি কাজ করে। এগুলো চোখের সঙ্গে সংযুক্ত। সাধারণত ট্যারা চোখের সমস্যা সমাধানে এর দুটি মাংসপেশিতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। একটি বা দুটি চোখেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের অস্ত্রোপচারে হাসপাতালে থাকার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। - অভি/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn