বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৮৮

cmgPublished: 2022-09-23 19:23:38
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি সুখবর, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য’এবং প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ও রোগমুক্তি নিয়ে আলোচনা ‘ভালো থাকার আছে উপায়’।

## আপনার ডাক্তার ‘

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি অ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ে। বাংলাদেশে প্রতিদিন বাড়ছে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা। বাংলাদেশ অ্যাজমা এসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ৮৫ লাখেরও বেশি মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত। জিনগত কারণের সাথে বায়ু দূষণ, এ্যলার্জেন, ঋতু, আবহাওয়া ও তাপমাত্রার পরিবর্তন, ওষুধর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, শ্বাসনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি এই রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। ডাক্তার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক।

# ‘সুস্বাস্থ্যের_জন্য’

যে সবজিগুলো বাড়ায় পাইলস সমস্যা

এখন অনেকেই ভুগছেন পাইলসের সমস্যায়। একটা সময় এই সমস্যা গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ কিছু খাবার আছে যেগুলো পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু উপকারী সবজিও আছে এই তালিকায়। আপনি বুঝতেও পারবেন না, সাধারণ এসব সবজি আপনার পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক পাইলসের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় সবজিগুলো:

টমেটো

টমেটোর উপকারিতা নিয়ে কারও সন্দেহ নেই। এতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। সেইসঙ্গে থাকে বিটা ক্যারোটিন। কিন্তু এই টমেটোই বাড়িয়ে দিতে পারে পাইলসের সমস্যা। কারণ টমেটোতে অন্যান্য সবজির তুলনায় ফাইবার অনেক কম থাকে। তাই পাইলস থাকলে টমেটো খেতে হবে বুঝেশুনে।

আলু

আলু একটি উপকারী সবজি। শুধু বাঙালি খাবারই নয়, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে বিভিন্ন খাবার তৈরিতে আলুর কদর অনেক। কিন্তু এই আলুই পাইলস রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ ১০০ গ্রাম আলুতে থাকে ২ গ্রামেরও কম ফাইবার। যে কারণে মল ঠিকভাবে তৈরি হতে পারে না। দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই পাইলসের সমস্যা থাকলে যতটা সম্ভব আলু কম খাবেন। আলুর খোসা বাদ দিয়ে খেলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

ঝিংগা

সবজি হিসেবে ঝিংগা বেশ সুস্বাদু। এই সবজির আছে অনেক উপকারিতা। সবজি হিসেবে এই ঝিংগা অনেকের কাছে পছন্দেরও। কিন্তু ঝিংগায় ফাইবার থাকে খুবই কম। তাই পাইলসের সমস্যা থাকলে ঝিংগা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। কারণ এই সবজি কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়। ফলে দেখা দেয় পাইলস।

বেথো শাক

বেথো শাক অনেকের কাছেই পছন্দের। সুস্বাদু এই শাকে আছে খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। কিন্তু এই শাক বেশি খেলে পাইলস রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ বেথো শাকে ফাইবার থাকে অনেক কম। যে কারণে পাইলস রোগীদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

পালংশাক

পালংশাক খুবই সুস্বাদু এবং এটি উপকারীও। অনেকের কাছেই এটি পছন্দের। এই শাকে থাকে খনিজ, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে যাদের পাইলস রয়েছে তাদের জন্য ততটা উপকারী নয় এই শাক। কারণ এতে ফাইবারের পরিমাণ তুলনামূলক কম। তাই পাইলস থাকলে পালং শাক কম খাবেন। এগুলো খাওয়ার সময় সতর্ক থাকলে পাইলসের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও সমাধান মিলবে। - অভি/রহমান

# ‘ভালো থাকার আছে উপায়’

লিভার ভালো রাখতে মানতে হবে নিয়ম

শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি লিভার বা যকৃত। লিভারকে বলা হয় কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি। সুস্থ থাকতে সময়মতো লিভারের প্রতি খেয়াল রাখা, প্রয়োজনীয় যত্ন নেওয়া এবং এ অঙ্গটির জন্য ক্ষতিকর বদ অভ্যাস ত্যাগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জানিয়ে দিচ্ছি লিভার সুস্থ রাখার কতগুলো নিয়ম।

উদ্ভিজ আমিষ: লিভার সুস্থ রাখতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডাল, সবুজ শাক-সব্জি, বাদাম ও আঁশযুক্ত খাবার রাখুন। কারণ লিভারের জন্য প্রাণীজ আমিষের চেয়ে ভাল উদ্ভিজ আমিষ।

স্বাস্থ্যকর চর্বি: চর্বি বা ফ্যাট শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই লিভার সুস্থ রাখতে ডায়েট থেকে চর্বি একেবারে বাদ দিয়ে দিবেন না। বরং অলিভ ও ওয়ালনাটের মতো খাবার খান, যেগুলোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে।

ওষুধ: বেশ কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি পেইনকিলার বা ব্যাথানাশক ওষুধ, যেমন টাইলেনল বা কোলেস্টেরলের ওষুধ। এসব ওষুধ থেকে দূরে থাকতে হবে।

মদ: লিভারের রোগ থেকে বাঁচতে হলে অতিরিক্ত মদ পান এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভারে চর্বি জমে, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে লিভারের ক্ষত শুকিয়ে গুটি গুটি ফাইব্রোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিস হয়। পশ্চিমা জগতে লিভারের রোগসমূহের মধ্যে মদ্যপানজনিত লিভারের রোগই প্রধান।

চিনি: চিনি শরীরের চর্বি বাড়িয়ে দেয়। তাই বেশি চিনি খেলে লিভারের রোগ তৈরি হতে পারে। চিনির গ্লুকোজ শরীর শোষণ করে নেয়। পরিশোধিত চিনিতে ফ্রুকটোজ বেশি পরিমাণে থাকে। ফ্রুকটোজকে পরিশোধিত করে একমাত্র লিভার। লিভারে গিয়ে এই ফ্রুকটোজ চর্বিতে পরিণত হয়। এতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তেল ও মশলা: অতিরিক্ত তেল ও মশলাযুক্ত খাবার ফ্যাটি লিভার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিংবা এ সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই লিভার সুস্থ্ রাখতে এ ধরনের খাদ্য যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিৎ।

সাপ্লিমেন্ট: অনেকেই সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করেন। যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে, তারা সাপ্লিমেন্ট নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকুন। এমন সাপ্লিমেন্ট বেছে নিন যা লিভারকে পরিস্কার করতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট। এছাড়া প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

কফি: লিভারের জন্য খুব উপকারী কফি। গবেষণার ফল বলছে, নিয়মিত কফি খেলে লিভারের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যায়।

উদ্ভিদমূল: বেশ কয়েকটি গাছের মূল লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এসব উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে ড্যানডেলিওন, মিল্ক থিসল ও হলুদ।

এমএসজি: প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবারে সাধারণত গন্ধ বাড়াতে এমএসজি (মোনোসোডিয়াম গ্লুটেমেট) ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই রাসায়নিক পদার্থ লিভারকে ফ্যাটি করে তোলে এবং প্রদাহ তৈরি করে। এটি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং লিভার ক্যানসার তৈরি করতে পারে।

স্ট্রেস: স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থাকলে তখন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হ্যঁ এমনই পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারণ এই সময় হজম ঠিক মতো হয় না।

# ‘কি খাবো কি খাবো না’

একসঙ্গে খেলেই তৈরি হবে বিষক্রিয়া

শরীরের জন্য অন্যতম উপকারী খাবার হলো ফল। যা আমাদের সুস্থতার জন্য জরুরি। ফলে থাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল। এছাড়াও থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবারসহ নানা উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত ফল খান তবে দূরে থাকতে পারবেন হার্টের রোগ, ক্যান্সার, ডায়বেটিসের মতো সমস্যা থেকে।

কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারেন না কোন ফল কখন ও কীভাবে খাবেন। ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন ধরুন, ফলের সঙ্গে পানি পান করা ঠিক নয়। এমন আরও কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো ফলের সঙ্গে খাওয়া ক্ষতিকর। এ ধরনের খাবার ও ফল একসঙ্গে খেলে শরীরে বিষক্রিয়া পর্যন্ত হতে পারে।

ফল যেভাবে টক্সিন তৈরি করে

আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য জরুরি হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন। ফল খেলে পূরণ হয় জরুরি এসব উপাদানের ঘাটতি। কিন্তু কিছু ফল আছে যেগুলোর সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে শরীরে উপকারের বদলে উল্টো ক্ষতি হয়। অ্যালার্জি, ফুড পয়জনিং ইত্যাদি হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ফলের সঙ্গে কোন খাবার খাওয়া ক্ষতিকর-

আনারস ও দুধ

এটি হয়তো অনেকেই জানেন তবে সঠিক কি না সে সম্পর্কে ধারণা নেই। সুস্বাদু ও রসালো ফল আনারসের আছে অনেক উপকারিতা। এদিকে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে প্রায় সবারই জানা। কিন্তু এই দুই খাবার একসঙ্গে কখনোই খাবেন না। কারণ আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলে তা পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আনারসে থাকে ব্রোমেলিন নামক উপাদান যা দুধের সঙ্গে মিশলে সমস্যার সৃষ্টি করে।

তরমুজ ও পানি

তরমুজের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খাবেন না বা তরমুজ খাওয়ার পরপরই পানি খাবেন না। কারণ তরমুজের সঙ্গে পানি মেশালে অনেকগুলো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে খাবার হজমের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। সেইসঙ্গে অ্যাসিডিটি, পেট খারাপ ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

পেঁপে ও লেবু

পেঁপে ও লেবু একসঙ্গে খেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে শরীরে। তাই সালাদ বা অন্য কোনো খাবার তৈরির সময় এই দুই খাবার একসঙ্গে মেশাবেন না। পেঁপের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় অনেকটাই। সেইসঙ্গে রক্তে তৈরি হয় ইমব্যালান্স। বুঝতেই পারছেন, এই দুই খাবার একসঙ্গে খাওয়া কেন ক্ষতিকর।

পেয়ারা ও কলা

অনেকেই কলা ও পেয়ারা একসঙ্গে খেয়ে থাকেন। আলাদাভাবে এই দুই ফল উপকারী হলেও একসঙ্গে মেশালেই পড়বেন ক্ষতির মুখে। কারণ এই দুই খাবার একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পেয়ারা ও কলা একসঙ্গে খেলে হতে পারে বমি, মাথা ব্যথা, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা।

রাইয়ান/রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn