বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৮১

CMGPublished: 2022-08-05 19:26:48
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের সুখবর, সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ এবং রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে চীনা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’।

#সুখবর

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে আলাদা করা হলো যুক্তমাথার যমজদের

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে ব্রাজিলের যুক্তমাথার জমজদের। প্রায় চার বছর বয়সী বার্নার্ডো ও আর্থার লিমার ওপর অস্ত্রোপচার করা হয় ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে। আর এ অপারেশনে দিক নির্দেশনা দেন লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের চিকিৎকরা।

সিটি ও এমআরআই স্ক্যানের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক দলগুলো যমজদের ওপর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রজেকশন ব্যবহার করে কয়েক মাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় এবং কৌশল রপ্ত করে। সার্জন নূর উল ওয়াসে জিলানি এটিকে ‘মহাকাশ যুগের একটি ব্যাপার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

২০১৮ সালে সার্জন জিলানি প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থা ‘জেমিনি আনটুইন্ড’ এ অস্ত্রপচারে জন্য অর্থ সহায়তা দেয়। ওই সংস্থার মতে, এ অস্ত্রপচারটি ছিল বিশ্বে এ ধরনের অপারেশনের সবচেয়ে জটিল একটি।

জিলানি বলেন, প্রথমবারের মতো আলাদা আলাদা দেশের সার্জনরা হেডসেট পরে একই "ভার্চুয়াল রিয়েলিটি রুমে" একসাথে অপারেশন করেন।

যমজদের ওপর সাতটি অপারেশন চালানো হয়, যার মধ্যে কেবল শেষ পর্বের অপারেশনেই সময় লাগে ২৭ ঘণ্টারও বেশি এবং প্রায় ১০০ জন চিকিৎসা কর্মী শেষ পর্বের অপারেশনে যুক্ত ছিলেন।

অস্ত্রোপচারের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডাক্তার জিলানি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "এটি এক বিস্ময়। বাচ্চাদের কোনও ঝুঁকিতে ফেলার আগে অ্যানাটমি দেখতে পারা এবং তার ভিত্তিতে সার্জারি করা সত্যিই দুর্দান্ত ব্যাপার। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে, এটি সার্জনদের জন্য কতটা আশ্বস্ত থাকার ব্যাপার।”

তিনি আরও বলেন, "কয়েকটি দিক থেকে এই অস্ত্রপচারকে আমাদের সময়ের সবচেয়ে কঠিন অস্ত্রপচার বলে মনে করা হয় এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সত্যিই মঙ্গল গ্রহে মানুষ বাস করার মতো অত্যাশ্চর্যজনক ব্যাপার।”

জিলানি বলেন, ২৭ ঘন্টার অপারেশনের পর তিনি পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি খাবার ও পানি পানের জন্য মাত্র চার বার ১৫ মিনিট করে বিরতি নিয়েছিলেন। তবে পরে খুশিতে পরিবারের আত্মহারা অবস্থা দেখতে পাওয়া তার জন্য ‘বিস্ময়কর’ ছিল।

তিনি জানান, বিযুক্ত হওয়ার পর অন্যান্য সব কনজয়েন্ড যমজের মতো বার্নার্ডো ও আর্থারের রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন ৪ দিন ধরে মাত্রারিক্ত ছিল, যতক্ষণ না তাদের আবার কাছাকাছি আনা হয় এবং একে অপরের হাত স্পর্শ করে। যমজরা হাসপাতালে ভালো হয়ে উঠছে এবং আগামী ছয় মাস ধরে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা দেওয়া হবে।

জেমিনি আনটুইন্ডের সাথে ডাক্তার জিলানির এটি ছিল ষষ্ঠ এ ধরনের অপারেশন। এর আগে পাকিস্তান, সুদান, ইসরায়েল ও তুরস্কের যমজ সন্তানদের উপর অপারেশন চালান তিনি।

তিনি ব্রাজিলের ইনস্টিটিউট এস্টাডুয়াল ডো সেরেব্রো পাওলো নিয়েমেয়ারের পেডিয়াট্রিক সার্জারির প্রধান ডাক্তার গ্যাব্রিয়েল মুফারেজের সাথে এই অপারেশনের নেতৃত্ব দেন।

ডাক্তার মুফারেজ বলেন, যে হাসপাতালে তিনি কাজ করেন সেটি আড়াই বছর ধরে এ বাচ্চাদের যত্ন নিচ্ছে এবং তাদের পৃথক হওয়া হবে "জীবন পরিবর্তনকারী"।

তিনি বলেন, "বাচ্চাদের মা-বাবা আড়াই বছর আগে আমাদের সাহায্যের জন্য ররাইমা অঞ্চলে তাদের বাড়ি থেকে রিওতে এসেছিলেন। তারা এখানে হাসপাতালে আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে উঠেছে। অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ভাল হয়েছে বলে আমরা খুব আনন্দিত।"

প্রায় চার বছর বয়সী বার্নাডো ও আর্থার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বয়স্ক ক্র্যানিওপাগাস অর্থাৎ মস্তিস্কে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকা যমজ যাদেরকে আলাদা করা হলো।

জেমিনি আনটুইন্ডের মতে, ৬০ হাজারের মধ্যে এক জোড়া কনজয়েন্ড যমজ সন্তানের জন্ম হয় এবং তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ক্র্যানিওপাগাস হয়। - রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা কথা বলেছি মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিয়ে। গত ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এবারের সপ্তাহের প্রতিপাদ্য – ‘শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য এগিয়ে আসুন: শেখান এবং সহযোগিতা করুন’। গবেষণা বলছে, শিশুদের জন্য মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নাই। মায়ের দুধে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন, শর্করা ও চর্বি থাকে। মায়ের দুধ পান করলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা নানা রকম ইমিউনোগ্লোবিউলিন, অ্যান্টিবডি এবং রোগপ্রতিরোধক শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। যেসব শিশুকে প্রথম ছয় মাস এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং করানো হয়নি, তাদেরই নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতির সংক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া শিশুর পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র কেবল মায়ের দুধের ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে ও কাজে লাগাতে সক্ষম ও প্রস্তুত; বাইরের ফর্মুলা মিল্ক বা অন্য কোনো খাবারের জন্য সেগুলো প্রস্তুত নয়। তাই মায়ের দুধে শিশুর বদহজম বা অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। গবেষণা বলছে, এতো পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না বা খাওয়াতে পারেন না বিভিন্ন কারণে। এর ফলে শিশুর শরীরে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কবীর উদ্দিন আহমদ। তিনি কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের হেলথ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ওয়াশের সেক্টর লিড হিসাবে।

# ঐতিহ্যবাহী_চিকিৎসাধারা

সর্দি থেকে বাঁচতে ঐতিহ্যবাহী চীনা পদ্ধতি

কেউই সর্দি বা ফ্লুতে আক্রান্ত হতে চান না বা এতে আক্রান্ত হলেও বেশিদিন ভুগতে চান না; যত দ্রুত সম্ভব অসুস্থতা থেকে মুক্তি চান। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা এমন ফ্লু প্রতিরোধে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আবার অসুস্থতা ধরা পড়লে এ চিকিৎসা পদ্ধতি দ্রুত সেটা সারাতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগ প্রতিরোধের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। সর্দি বা ফ্লু থেকে বাঁচতে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেয় এই চিকিৎসা পদ্ধতি। এ ব্যবস্থা বলে:

• দিনে বেশ কয়েকবার আপনার হাত ধৌত করুন এবং আর্দ্র রাখুন। ত্বক হলো প্যাথোজেন বা রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষাগুলোর মধ্যে একটি - তা সে জীবাণু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ঠাণ্ডা বায়ু বা গরম বায়ু যেটাই হোক না কেন।

• পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘন্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

• পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খান। স্যুপ ও স্টু, রান্না করা শস্য, সবজি ও মাংস গ্রহণ করুন। কফির বদলে গ্রিন টি বেছে নিন। খাবারের আবেদনের ওপর গুরুত্ব রেখে ধীরে ধীরে খান।

• মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন, ধ্যান করুন এবং বুক ভরে শ্বাস নিন। গভীর শ্বাস নেওয়ার জন্য শত ব্যস্ততার মধ্যেও পাঁচ মিনিট সময় বের করুন।

• শীতের সময় হলে উষ্ণ পোশাক পরুন এবং ত্বক ও নাককে বাতাস থেকে সুরক্ষিত রাখুন।

ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তির পথও বাতলে দেয় ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রথমে বুঝে নিন সর্দির লক্ষণগুলো ‘গরম’ নাকি ‘ঠাণ্ডা’। চাইনিজ মেডিসিনে ‘ঠাণ্ডা’ লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকে হাঁচি, পরিষ্কার বা সাদা কফসহ নাক দিয়ে পানি ঝরা, গলায় চুলকানি, কাশিতে পরিষ্কার বা সাদা শ্লেষ্মা বের হওয়া এবং শরীর ব্যথা। যদি এসব লক্ষণ থাকে, তাহলে চাইনিজ মেডিসিন বলে প্যাথোজেনটি ঠাণ্ডা বায়ুজনিত। ‘গরম’ লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকে গলা ব্যথা, সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার চেয়ে বেশি জ্বর, তৃষ্ণা, হলুদ কফের সাথে নাক বন্ধ হওয়া এবং কাশিতে হলুদ শ্লেষ্মা বের হওয়া। এই লক্ষণগুলোর অর্থ হলো প্যাথোজেনটি গরম বায়ুজনিত। সর্দি গরম নাকি ঠাণ্ডা এ সম্পর্কিত ধারণা এ রোগটিকে থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় খাবার ও ভেষজ নির্বাচনে সাহায্য করবে।

• শরীর থেকে রোগজীবাণুটি বের করে দিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানি গ্রহণ করুন। বেশি পরিমাণে স্যুপ ও ভাত খান। পাশাপাশি উষ্ণ তরল পান করুন। যদি আপনার উপসর্গগুলো ঠাণ্ডা বায়ুজনিত হয়, তবে আপনার খাবারে আদা, দারুচিনি, সবুজ পেঁয়াজ ও রসুন যোগ করুন। আর যদি আপনার লক্ষণগুলো গরম বায়ুজনিত হয়, তবে প্রচুর পেপারমিন্ট চা পান করুন এবং কমলা এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফলগুলোর মতো শীতল ফল খান। উভয় ক্ষেত্রেই দুগ্ধ চিনিজাত খাবার, রিচ ফুড বা অতিরিক্ত ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার এবং ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন।

• সর্দি হলে উষ্ণ পোশাক পরুন এবং আপনার ত্বক এবং নাককে বাতাস থেকে সুরক্ষিত রাখুন। এটি শরীরকে ঘামতে সাহায্য করবে, যা শরীর থেকে রোগজীবাণু বের করে দেওয়ার একটি প্রাথমিক উপায় ।

• পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন এবং ঘুম নিশ্চিত করুন। এতে রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীর তার বেশিরভাগ শক্তি কাজে লাগাতে পারে।

• লাইসেন্সপ্রাপ্ত আকুপাংচার বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ নিন। আকুপাংচার ও ঐতিহ্যবাহী চীনা ভেষজ আপনার রোগের সময়কাল কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে সেটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি খুব বেশি জ্বর থাকে কিংবা এমন কোনও জ্বর থাকে যা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা যদি শ্বাসকষ্ট হয়, দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। - রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn