বাংলা

দেহঘড়ি পর্ব-৭২

CMGPublished: 2022-06-03 19:12:04
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, ‘আপনার ডাক্তার’ এবং রোগের লক্ষণ নিয়ে আলোচনা ‘উপসর্গে উপলব্ধি’।

#প্রতিবেদন

মৃগীরোগের চিকিৎসায় কিটোজেনিক ডায়েট

মৃগীরোগের চিকিৎসায় নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে কিটোজেনিক ডায়েট। এটি হলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিবর্তে প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবারে গুরুত্ব দেওয়া।

সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে কিটোজেনিক ডায়েট নিয়ে আলোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার বলেন, সারা বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মৃগী রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। শিশুদের মধ্যে মৃগী রোগীর হার বড়দের তুলনায় বেশি দেখা যায়।

তিনি বলেন, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মৃগীরোগ বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে সহজে নিরাময়যোগ্য। কিন্তু ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মৃগী রোগ আছে যা শুধুমাত্র ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ যোগ্য নয়, যাকে বলা হয় অনিয়ন্ত্রিত মৃগীরোগ।

ডা. গোপেন বলেন, কিটোজেনিক ডায়েট এই ধরনের অনিয়ন্ত্রিত মৃগীরোগের ক্ষেত্রে একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি কম শর্করা এবং উচ্চমাত্রার চর্বির সমন্বয়ে একটি খাবার পদ্ধতি। এই খাবার পদ্ধতি মৃগীরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। - অভি/রহমান

#বুলেটিন

সারা দেশে বুস্টার ডোজ সপ্তাহ ৪-১০ জুন

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ৪ থেকে ১০ জুন থেকে বাংলাদেশের সব জেলায় টিকার বুস্টার ডোজ সপ্তাহ পালন করা হবে। এই সময়ে ১৮ বছর ও তার উপরে সব বয়সীরা বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৪ থেকে ১০ জুন, এই সাতদিনের যে কোনও দিন নিকটবর্তী টিকাকেন্দ্রে গিয়ে বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর চার মাস হলেই বুস্টার ডোজ নেওয়া যাবে। বুস্টার ডোজ নিতে টিকা কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে।

৪ দিনে বন্ধ ১১৪৯টি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

বাংলাদেশে চারদিনে বন্ধ করা হয়েছে এক হাজার ১৪৯টি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, চার দিনের অভিযানে ঢাকা বিভাগে ২৮৬টি, চট্টগ্রামে ১৯০টি, রাজশাহীতে ১৩৫টি, রংপুরে ১৪টি, ময়মনসিংহে ১২১টি, বরিশালে ৬৫টি, সিলেটে ৩৫টি এবং সবচেয়ে বেশি খুলনায় ৩০৩টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে।

এর আগে গেল ২৬ মে সারাদেশের অনিবন্ধিত সব বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

‘সন্তান জন্মদানে বাধা ধূমপান’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যাদের সন্তান হচ্ছে না তাদের ধূমপান বন্ধ করতে হবে এবং তারপর চিকিৎসা নিতে হবে। সম্প্রতি বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি ।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জীবন বাঁচাতে হলে তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অনেকে মুখে গুল রাখেন। গুলের ব্যবহারেও মুখে ক্যান্সার হয়।

উপাচার্য বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য হলেও তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তামাক ও সিগারেট ব্যবহারে পরিবেশ নষ্ট হয়। - অভি/রহমান

## আপনার ডাক্তার

দেহঘড়ির আজকের পর্বে আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে স্বাভাবিক ও নিরাপদে সন্তান প্রসব সম্ভব – সে সম্পর্কে। গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদ সন্তান প্রসব বলতে নরমাল ডেলিভারিকেই বুঝায়। আগে সন্তান জন্মদানের জন্য নরমাল ডেলিভারিই ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু বর্তমানে সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান বহুগুণ বেড়েছে। সিজারিয়ান সেকশনের প্রবণতা বাড়ার অন্যতম কারণ আধুনিক জীবন-যাপন ও মানসিক অবস্থা এবং নরমাল ডেলিভারিতে মায়েদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভয় পাওয়া। বাংলাদেশে বর্তমানে সি-সেকশন অপারেশনের মাধ্য সন্তান জন্মদানের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে শুধু শহরাঞ্চলে এই হার অনেক বেশি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের নেতিবাচক প্রভাব একজন মাকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বিঘ্নিত করে। তবে সম্প্রতি নরমাল ডেলিভারির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেক চিকিৎসক ও হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে এ ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য। নিরাপদ সন্তান প্রসবের জন্য তারা ব্যবহার করছে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসূতি মায়েদের পরিচর্যা ও চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন সাধিত করেছে। কীভাবে নিরাপদ নরমাল ডেলিভারি সম্ভব সে সম্পর্কে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন দেশের খ্যাতিমান প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আঞ্জুমান আরা রিতা। তিনি কর্মরত ঢাকায় অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাবিবুর রহমান অভি।

#উপসর্গে উপলব্ধি

মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ ও চিকিৎসা

করোনাভাইরাসের পর বিশ্বব্যাপী এখন আরেক আতঙ্কের নাম মাঙ্কিপক্স বা বানরবসন্ত। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার কয়েকটি দেশে সম্প্রতি মাঙ্কিপক্সের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা গেছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা এই রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছেন যাতে আরেকটি মহামারীর মধ্যে পড়তে না হয় বিশ্বকে। আজ আমরা আলোচনা করবো মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ ও চিকিৎসা নিয়ে।

ইনসাইডার ডটকমের এক প্রতিবেদন বলছে, মাঙ্কিপক্স হলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এর মুখে পুঁজ থাকে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই ফুসকুড়িগুলো কয়েক সপ্তাহ যাবৎ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। ভীষণ ছোঁয়াচে এই রোগ ছড়াতে সরাসরি স্পর্শেরও প্রয়োজন হয় না; আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানার চাদর বা তার স্পর্শ করা যে কোনও জিনিস থেকে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে এই রোগে মৃত্যুর হার কম - ১ শতাংশের মতো।

উপসর্গ

জ্বর, পিঠব্যথা, ত্বকে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি এই রোগের প্রধান লক্ষণ। দুই থেকে চার সপ্তাহ এই সংক্রমণ স্থায়ী হয়। আর ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। প্রথমে দেখা দেয় জ্বর, মাথা, পেশি ও পিঠে ব্যথা, গায়ে কাঁপুনি, অবসাদ ও লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া। লসিকাগ্রন্থি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এগুলো সারা শরীরে ছড়ানো থাকে। মাঙ্কিপক্স হলে সাধারণত গলায়, বোগলে ও কুঁচকিতে থাকা গ্রন্থিগুলো ফুলে ওঠে। প্রসঙ্গত, স্মল পক্স বা গুটিবসন্তের ক্ষেত্রে লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় না।

জ্বর ও শরীর ব্যাথা এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর র‌্যাশ দেখা দিতে শুরু করে। প্রথমে দেখা দেয় মুখে, সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। শুরুতে তা সমতল আকারে ফুলে ওঠে এবং লালচে রং থাকে। পরে তা ক্ষতে পরিণত হয় এবং ভেতরে পুঁজ জমে। তারপর সেগুলো শুকিয়ে কালচে রং ধারণ করে এবং শেষে খসে পড়ে। সুইডেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঙ্কিপক্সের র‌্যাশ সাধারণত মুখ, হাত ও পায়ের পাতার নিচে দেখা দিলেও ইউরোপে শনাক্ত হওয়া রোগীদের র‌্যাশ দেখা গেছে যৌনাঙ্গ, তার আশপাশে ও মলদ্বারে।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিওড অর্থাৎ সংক্রমণ থেকে উপসর্গ দেখা দেওয়া পর্যন্ত সময় ৫ থেকে ২১ দিন। র‌্যাশ দেখা দেওয়ার ১ থেকে ২ দিন আগে থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত খোসা ঝড়ে পড়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ছড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, ত্বকের ওই র‌্যাশগুলোতে ভাইরাসের ঘনত্ব খুবই বেশি থাকে। আর এই ভাইরাস খুবই স্থিতিশীল কারণ এর ডিএনএ হলো ‘ডাবল স্ট্র্যান্ডেড’।

উপাত্তে দেখা যায়, এ পর্যন্ত যেসব পুরুষের মাঝে এই রোগ শনাক্ত হয়েছে তারমধ্যে সিংহভাগই সমকামী, যদিও এই রোগকে এখনও সমকামীদের রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করছে না বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা

এখনও পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কোনও পরীক্ষিত চিকিৎসা নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা এই রোগের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিচ্ছে সাপোর্টিং চিকিৎসার, যেটা উপসর্গ অনুযায়ী করা হয়। কেউ আক্রান্ত হয়েছে জানামাত্রা তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। ত্বকে যে র‌্যাশ হয়, তার জন্য সাধারণ অ্যান্টিসেপ্টিক দেওয়া হয়, সেই সঙ্গে ড্রেসিং করা হয়। মুখে ঘা হলে তার জন্য উষ্ণ গরম জলে গার্গেল করা প্রয়োজন। - রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn