বাংলা

রোগের জম কালোজাম-China Radio International

criPublished: 2021-05-21 19:01:35
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

কালোজাম একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমী ফল। গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে এশিয়াজুড়ে পাওয়া যায় এই ফল। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ জামের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এ ফলের রঙ বেগুনি কালো এবং স্বাদ বেশিরভাগ মিষ্টি ও সামান্য টক।

ফল ছাড়াও এর বীজ, গাছের পাতা ও ছালের রয়েছে ঔষধি মূল্য। বিভিন্ন রোগের আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জাম ব্যবহৃত হয়। এই ফলে ক্যালোরি খুব কম, তবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্যালিসাইলেটসহ বেশ কতগুলো উপাদান, যা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে। জানিয়ে দিচ্ছি জামের স্বাস্থ্য-উপকারিতা।

সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে: জামে ম্যালিক এসিড (malic acid), গ্যালিক এসিড (galic acid), অক্সালিক এসিড (oxalic acid) এবং ট্যানিনসের (tannins) মতো যৌগ রয়েছে, যেগুলো ব্যাক্টেরিয়া, ম্যালেরিয়া, অন্ত্রের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী জাম। ঐতিহ্যগতভাবেই এই ফল ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (glycemic index) কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত। মেডিকেল জার্নাল কমপ্লিমেন্টারি থেরাপিস ইন মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, জামে বেশ ভালো ডায়াবেটিক-বিরোধী গুণ রয়েছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, জামের বীজ ৩০ শতাংশের বেশি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: জামে অ্যালজিনিক এসিড (alginic acid) বা এলাজিটেনিন (ellagitannins), অ্যান্থোসায়ানিন (anthocyanins) ও অ্যান্থোসায়ানিডিন (anthocyanidins) থাকে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। এসব উপাদান রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কোলেস্টেরলের জারণ রোধ করে এবং হৃদরোগ সৃষ্টিকারী প্লাক গঠনে বাধা দেয়। এছাড়া জামে থাকে প্রচুর পরিমান পটাসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকির কমায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, জামে কেমোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভারতের মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণেশচন্দ্র জাগেতিয়া ও তার সহকর্মীদের করা এক গবেষণার ফল থেকে জানা যায় যে, জামে রেডিওপ্রোটেক্টিভ উপাদানও থাকে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জামের নির্যাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যা ডিকেলের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: জামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিউপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, লৌহ, পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি থাকে। এসব উপাদান প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।

মানসিকভাবে সতেজ রাখে: জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ থাকে, যা মানুষকে কাজ করার শক্তি জোগায়। এছাড়া জাম স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। তবে জাম এ প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।

ভিটামিন সি’র অভাবজনিত রোগ দূর করে: জামে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। তাই এই ফল খেলে ভিটামিন সি’র অভাবজনিত রোগ দূরে থাকে। এছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত ও মাড়ি শক্ত করা এবং মাড়ির ক্ষয়রোধেও জাম উপকারী।

ত্বক সুস্থ রাখে: জামে থাকে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিড, যা ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক ও চুলকে রক্ষা করে। এছাড়া এই অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে: জামে থাকে প্রচুর পরিমাণ লৌ, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। ফলে যারা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত, জামের মৌসুমে তাদের বেশি বেশি এ ফলটি খাওয়া উচিৎ। - রহমান

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn